ভক্ত: রাশিয়ায় সালাহর পোস্টার নিয়ে মিশরের সমর্থকেরা। ছবি: এএফপি
রেড স্কোয়ারের সামনে ফ্যান জোনে দল বেঁধে গান গাইছিল ওঁরা। হাতে মহম্মদ সালাহর ছবি এবং মিশরের জাতীয় পতাকা।
কলকাতায় বসে অনলাইনেই টিকিট কেটে ফেলেছিলাম বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচের। তাই মঙ্গলবার দুপুরে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম ফিফার কাউন্টার থেকে ‘ফ্যান আইডি’ দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে। তখনই কানে এল সালাহ সমর্থকদের সেই গান। ‘রানিং ডাউন দ্য উইং/দ্য ইজিপশিয়ান কিং/মো সালাহ, মো সালাহ...।’
সোমবার রাতে মস্কো এসেছি। সকাল সাড়ে ন’টায় কলকাতা থেকে উড়ে দুবাই ছুঁয়ে মস্কো ঢুকতে ঢুকতে ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটা (মস্কোর স্থানীয় সময় রাত ৮টা)। দুবাই থেকে উড়ান শুরু হতেই বিমানসেবিকা এসে জানতে চাইলেন ‘ফ্যান আইডি’ হাতের কাছে আছে কি না। আমার আইডি হাতব্যাগেই ছিল। সেটা দেখাতে বিমানবালা মাঝ আকাশেই আসন বদলে দিলেন। ‘ইকনমি ক্লাস’ থেকে সোজা ‘বিজনেস ক্লাস’-এ। কারণ জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে বললেন, ‘‘বিশ্বকাপের দর্শকরা বিশেষ অতিথি। তাই এই ব্যবস্থা।’’
চার বছর আগে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে এই সুবিধা পাইনি। রাশিয়ায় বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার পথে ফ্যান আইডি দেখালেই যে এমন জামাই-আদর মিলবে উড়ানে, তা আগাম আন্দাজ ছিল না। রিয়ো দে জেনেইরো কোপাকাবানা বিচে প্রথম পা রেখে দেখেছিলাম প্রায় হলুদ সর্ষেখেত! আসলে হলুদ-সবুজ জার্সি ও শর্টসে ব্রাজিলীয়রা এমন ভাবেই সমুদ্র সৈকতে উৎসবের পরিবেশ তৈরি করেছিল, তা অনেকটা ওই সর্ষেখেতের মতোই। ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের রাজধানী সে ভাবে রুশ সমর্থকে সাজেনি বিশ্বকাপের জন্য। রাশিয়ার জার্সি গায়ে বিমানবন্দর বা রাস্তা-ঘাটে লোক নজরে এল ঠিকই। কিন্তু তা তুলনায় খুব বেশি নয়। মস্কোয় বরং ভিড় গোটা বিশ্বের ফুটবল পর্যটকের। যার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন লাতিন ও মধ্য আমেরিকা থেকে খেলা দেখতে আসা পর্যটকরা। যে দলে রয়েছেন ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, মেক্সিকো ও পেরু থেকে আসা সমর্থকরা। তবে সেই ভিড়কে হারিয়ে দিতে পারে মিশর থেকে আসা ফুটবল পর্যটকদের দলটা। মিশরের জার্সি গায়ে যাঁরা দু’হাত তুলে গাইছিলেন সালাহর সমর্থনে। ব্রাজিল, আর্জেন্তিনার দশ-পনেরো জনের দু’টো দল ওঁদের গান থামিয়ে দেওয়ার জন্য শুরু করেছিলেন, ‘ভামোস ভামোস আরহেনতিনা’ বা ‘ফোর্সা ব্রাজিল’। কিন্তু তাও দমিয়ে দিতে পারেনি ‘ফ্যারাও’-এর দেশের সমর্থকদের।
মঙ্গলবার সারা দিন ধরেই মস্কোর আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। সঙ্গে বৃষ্টি। তবে বিমানবন্দর থেকে রাস্তাঘাট, হোটেল সর্বত্রই কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। দুপুরের দিকে হোটেল থেকে বেরিয়েছিলাম যে ম্যাচগুলো দেখার জন্য এখানে এসেছি, তার টিকিট সংগ্রহ করতে। সেখানেই আলাপ হল মেসির শহর রোসারিয়ো থেকে আসা ফেদেরিকো লোপেজের সঙ্গে। পেশায় অধ্যাপক এই মেসিভক্ত আইডি দেখিয়ে আমার পিছনেই লাইন দিয়েই টিকিট সংগ্রহ করছিলেন। ভারত থেকে খেলা দেখতে গিয়েছি শুনে প্রথমেই জানতে চাইলেন কোন কোন ম্যাচের টিকিট কেটেছি। আর্জেন্তিনা বনাম নাইজিরিয়া বলতেই করমর্দন করে বললেন, ‘‘লিয়ো এ বার কাপটা রাশিয়া থেকে নিয়ে যাবে। গ্রুপের সব ম্যাচ দেখব। জানি না নকআউটে কী ভাবে টিকিট পাব। তোমারও কি আমার মতো অবস্থা?’’
জবাবে ব্রাজিল, পর্তুগাল, জার্মানির ম্যাচ দেখব বলতেই চোখমুখ পাল্টে গেল ওঁর। ‘‘ব্রাজিল! জার্মানি! তার মানে তুমি আর্জেন্তিনার আসল সমর্থক নও।’’ বলেই হনহন করে হাঁটা দিলেন টিকিট কাউন্টারের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy