এ যেন তিকিতাকার জবাব টোটাল ফুটবলে!
অনেকেই ভেবেছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো মঞ্চে গোড়াতেই পিছিয়ে যাওয়ার ধাক্কা সহজে সামলাতে পারবে না বিশ্বনাথন আনন্দ। কিন্তু দ্বিতীয় গেমে দাপটে জেতা ম্যাগনাস কার্লসেন পরের গেমেই যে ভাবে উড়ে গেল তাতে বলতেই হচ্ছে সোচিতে আমরা সেই পুরনো ভিশির ঝলক দেখতে পাচ্ছি। আগের গেমে কার্লসেনের ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষকে আগাপাস্তলা চেপে ধরার ‘তিকিতাকা’ দাবার জবাব যেন কিংবদন্তি ডাচ কোচ রেনাস মিশেলের জগদ্বিখ্যাত টোটাল ফুটবলের ভঙ্গিতে দিল আনন্দ। প্রায় নিখুঁত, মনভরানো অলরাউন্ড খেলায়।
এ দিন শুরুতেই বোঝা যাচ্ছিল আনন্দ আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে। আসলে চেন্নাইয়ের চাপটা ওর উপর এ বার নেই। সত্যিই, সেটার থেকে যা শিক্ষা নেওয়ার নিয়ে ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড্’ করে দিয়েছে আনন্দ। তা ছাড়া, আগের বারের সেই উঠতি, অচেনা প্রতিভা কার্লসেন এ বার নেই। তার বদলে আনন্দের সামনে বসছে বিশ্বসেরার মুকুট অক্ষত রাখার অসহ্য চাপ নিয়ে বসা কার্লসেন। আনন্দের এ বার সেই চাপ নেই। হারানোর কিছু নেই। ফলে খোলা মেজাজে থাকতে পারছে। এই যে এ বার দাবার বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে পর্যন্ত আনন্দ একের পর টুইট করছিল, সেটাও আমার মনে হচ্ছে পরিকল্পনামাফিক। আনন্দ বরাবর বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে ‘আপডেটেড’ থাকা ছেলে। কিন্তু টুইটফুইট ওর স্বভাববিরুদ্ধ। আমি তো খানিকটা অবাকই হয়েছি! আসলে কার্লসেনকে টুইট করতে দেখে চুপ না থেকে পাল্টা টুইট করেছে। যাতে ছেলে অখিলকে নিয়ে কেমন আড্ডা মারছে সেটা পর্যন্ত লিখেছে। সোজা কথা, প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মহড়া নেওয়ার আগেও কেমন ফুরফুরে আছি দ্যাখো।
মঙ্গলবার তৃতীয় গেমের বোর্ডেও ওকে তেমনটাই দেখাল। সাধারণত ১০-১২ চালের মধ্যেই ক্যাসলিং করে রাজাকে সুরক্ষিত করতেই দেখা যায় বেশির ভাগ দাবাড়ুকে। আনন্দ কিন্তু সেটা এ দিন করেনি। বরং ক্যাসলিং করেছে ২৫ নম্বর চালে। কার্লসেনের মতো মহাপরাক্রমী জেন-এক্স প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে মানসিক ভাবে খুব ভাল জায়গায় না থাকলে চুয়াল্লিশের কেউ এই ঝুঁকিটা নেয় না। আনন্দের খেলা দেখে ওর সেই ডাকনামটা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ‘লাইটনিং কিড!’
একটা সময় তো কার্লসেনের উপর এতটাই চাপ বেড়ে গিয়েছিল যে সাত মিনিটে বারো চাল দিতে হত ওকে। ব্লিত্জ এবং র্যাপিডেও বিশ্বসেরা কার্লসেন পর্যন্ত সেই চাপ রাখতে না পেরে ২৮ নম্বর চালে বড় ভুল করে বসে। গেমটাও ওখানেই চলে যায় ভিশির হাতে।
আগেই বলেছিলাম প্রথম রেস্ট ডে-টা কাজে লাগিয়ে আনন্দ তৃতীয় গেমে কী ভাবে ফিরে আসে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ঠিক সেটাই হল। আসলে চুয়াল্লিশের ভিশির কাছে এনার্জি লেভেলটা এ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বড় ফ্যাক্টর। বিশ্রামের পর দিনই তাই হয়তো ওকে এ দিন অনেক বেশি তরতাজা লেগেছে।
ভিশির সাত নম্বর চালেই ইঙ্গিত ছিল এ দিন আগ্রাসী তো বটেই, একটা এসপার-ওসপার চাইছে ও। গত বারের চেয়ে এই আনন্দ আলাদা। আরও বেশি আক্রমণাত্মক। সাংবাদিক বৈঠকেও ভিশি এ দিনের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা খাটার কথা স্বীকার করল।
কেন কার্লসেনের স্ট্র্যাটেজি এ দিন কাজ করল না? দ্বিতীয় গেমেই জিতে একটু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকতে পারে হয়তো। না হলে যে কিনা লড়াই শুরুর আগেই নিজেকে মানসিক চাপের দিক থেকে এগিয়ে থাকার দাবি করে, সে মাত্র তিন নম্বর গেমে হারের পর এতটা হতাশ হয়ে পড়বে কেন? আমরা যারা আনন্দের সমর্থক তাদের কাছে অবশ্য অনেক বেশি গুরুত্বের ভিশি ছন্দে ফিরছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy