প্রত্যয়ী: রিংয়ে নামার আগে কথা বলছেন জেসিকা। —নিজস্ব চিত্র।
‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ কি বদলে গেলেন?
সুপারহিরো ফিল্মে ওয়ান্ডার উওম্যানের নাম ডায়ানা প্রিন্স হতে পারে। কিন্তু দু’হাত দূরে যে তরুণী বসে আছেন, তাঁর কীর্তিকলাপ সুপারহিরোদের চেয়ে কম কী! তফাত একটাই। কোনও কল্পনার জগৎ নয়, জেসিকা আই উঠে এসেছেন রূঢ় বাস্তবের জমি থেকে।
সিঙ্গাপুরের বন্দর এলাকার পাঁচতারা হোটেলের বলরুমে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ যে তরুণী শরীরে হিল্লোল তুলে ঢুকেছিলেন, তাঁকে দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল নির্ঘাৎ কোনও মডেল। হয়তো বা ইউএফসি (আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ)-র প্রচারে এসেছেন। ভুল ভাঙল একটু পরেই। যখন ভ্রুযুগল প্রায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ফ্রি-কিকের মতো বাঁকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘‘কেন, সুন্দরী হলে কি লড়াই করা যায় না?’’
কিন্তু তা বলে ইউএফসি-র মতো লড়াইয়ে? যেখানে রিংয়ে নামলেই রক্তাক্ত মুখ নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। যেখানে মারাত্মক রকম চোট পেয়ে যে কোনও সময় জীবন সংশয় হতে পারে। যেখানে মিক্সড মার্শাল আর্টসের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ‘‘যন্ত্রণার কথা কাকে বলছেন?’’ মুহূর্তের জন্য কঠোর হয়ে গেল জেসিকার সুন্দর মুখটা। ‘‘খুব ছোট থেকেই যন্ত্রণা জিনিসটা কী, সেটা আমি জেনে গিয়েছি। ছোট থেকেই নানা ভাবে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। তাই খুব অল্প বয়স থেকেই জীবনের সঙ্গে লড়াই করে এসেছি। রিংয়ের লড়াইকে আমি
পাত্তা দিই না।’’
ছোটবেলায় শুধু নানা ভাবে নিগ্রহের শিকারই হননি, একবার মৃত্যুর হাত থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক মদ্যপ ড্রাইভার জেসিকাকে গাড়ি চাপা দিয়ে দেয়। শরীরের অনেক জায়গার হাড় টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বাঁচার কথাই ছিল না। কিন্ত মেয়ে যে হারতে জানেন না। সেই অবস্থা থেকে আজ এখানে। ‘‘রিংয়ে যখন নামি, নিজেকে বলি, তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো। আমার প্রতিপক্ষরাও এত দিনে ব্যাপারটা টের পেয়ে গিয়েছে,’’ বলছিলেন তিনি।
তিরিশ বছরের এই মেয়েকে ওয়ান্ডার উওম্যান বলা হবে না তো কাকে হবে? কিন্তু এক জনই বলতে নারাজ। তিনি স্বয়ং জেসিকা। ‘‘আমি কোনও সুপারহিরো নই। আমি শয়তান। আমার পুরো নাম জেসিকা ‘ইভল’ আই। রিংয়ে যখন নামি, তখন শয়তানেই বদলে যাই।’’ তা, শয়তানও বলা যেতে পারে। তাঁর প্রতিপক্ষরা তো বলেই থাকেন। এক বার এক জনের কান ছিঁড়ে দু’টুকরো করে দিয়েছিলেন!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো এই তরুণী ইউএফসি-তে যোগ দেওয়ার পরে ব্যান্টমওয়েট, ফ্লাইওয়েট বিভাগে এগারোটা লড়াইয়ে ১০টা জিতেছেন। ৫৮ সেকেন্ডে নক আউটের রেকর্ড আছে। শনিবার যখন সিঙ্গাপুর ইউএফসি ফাইট নাইটে নামবেন, সেই রেকর্ড ভাঙার লক্ষ্য থাকবে।
রন্ডা রুসির মতো ইউএফসি মহাতারকা এখন ডব্লিউডব্লিউই-তে লড়েন। আপনাকেও কি কোনও দিন সেখানে দেখা যেতে পারে? ‘‘কেন নয়? জেসিকা সব কিছু করতে পারে। ডব্লিউডব্লিউই আমি শাসন করতেই পারি,’’ হাঁটু চাপড়ে বলে উঠলেন। তার পরেই ঠোটের কোনে বাঁকা হাসির ঝিলিক তুলে বললেন, ‘‘তা ছাড়া ডব্লিউডব্লিউই-তে প্রচুর টাকা। আমি প্রচুর টাকাও রোজগার করতে চাই।’’
সত্যিই তো। যিনি মৃত্যুকে হারিয়ে এসেছেন, তার কাছে রিংয়ের লড়াই আর কী। তা সে ইউএফসি হোক কী ডব্লিউডব্লিউই।
ইউএফসি সিঙ্গাপুর ফাইট নাইট: ২৩ জুন, বিকেল ৫.৩০ থেকে শুধু সোনি সিক্স এইচডি, সোনি সিক্স এসডি-তে সরাসরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy