শেষ ওভারে ফকনারের প্রথম বলটা যখন দ্রুত গতিতে ধোনির দিকে ধেয়ে আসছিল তখন ঠিক কী ভাবছিলেন ক্যাপ্টেন কুল? ভেবেছিলেন কী এখানেই শেষ করে দেবেন খেলা। যখন সেই কাজটি করে ফেললেন ধোনি তখন উইকেটের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট কোহলির চওড়া কাঁধ থেকে হয়তো আপাতত নেমে গেল দায়িত্বটা। দলকে তুলে দিয়েছেন সেমিফাইনালে। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে সেমিতে তোলা অধিনায়ক কিন্তু অবিচল। উল্টোদিকে তখন আকাশের দিকে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়ে দিয়েছে কোহলি। হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছেন পিচের উপরেই। যেন বলতে চাইছেন একটা যুদ্ধ জিতে ফেলেছি। মাথা থেকে খুলে নিয়েছেন হেলমেট। আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে যেন মনে মনে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁর ভগবানকে। গোটা মোহালির স্টেডিয়ামে তখন ফিরে এসেছে তেরঙার হোলি। স্টেডিয়াম জুড়ে উড়ছে জাতীয় পতাকা। উচ্ছ্বাসে যেন নিজের খেলার সময়কে ফিরে পেয়েছেন রবি শাস্ত্রী। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। একটা কঠিন সময় থেকে দলকে তুলে আনার আনন্দ।
একটা সময় মনে হচ্ছিল হয়তো জয়টা অধরাই থেকে যাবে। একটা সময় মনে হচ্ছিল আবার সেই বিরাট কোহলির উপর চলে গেল দায়িত্ব। পারবেন তো? সব সময় তো একটা মানুষ তো একইভাবে জ্বলে উঠতে পারে না। কিন্তু এ তো বিরাট কোহলি। যে কোনও সময় বদলে দিতে পারেন ম্যাচের রং। এদিনও তো তিনিই সেরা। ম্যাচের সেরা, দেশের সেরা। তাই হয়তো উচ্ছ্বাসকে নিজের মধ্যে কিছুটা চেপেই নিলেন। কৃতিত্ব দিলেন মোহালির সমর্থকদের। বললেন, ‘‘আমি মোহালির সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। অসাধারণ সমর্থন। যে কোনও খারাপ সময় পেড়িয়ে যাওয়া যায় যদি এরকম সমর্থন পাওয়া যায়।’’
আবারও বুঝিয়ে দিলেন চ্যালে়ঞ্জ নিতে পারাটাই তাঁর কাছে শেষ কথা। আগেও বলেছিলেন একজন ক্রিকেটার চ্যালেঞ্জ নিয়েই শেখে। এদিনও সেটা তিনি করে দেখালেন। দেখালেন কী ভাবে কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা করে বের করে নেওয়া যায় ম্যাচ। বলেন, ‘‘আমি জানি না কী বলব। আমি উচ্ছ্বসিত। যুবির সঙ্গে ভাল পার্টনারশিপ কাজে লেগেছে। সঙ্গে এমএস আমাকে ধৈর্য রাখতে বলেছে পুরো সময়টা। আমাদের মধ্যে একটা দারুণ বোঝাপড়া আছে। ফিটনেস ট্রেনিং, জিমে একসঙ্গে কাজ করাটাই আজকে কাজে লাগল।’’ বিরাট কোহলি এই ইনিংসটিকে তাঁর সেরা ইনিংসের মধ্যেই রাখছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ইনিংসটি আমার সেরা তিনটির মধ্যে থাকবে। আমি আবেগ তাড়িত হয়ে আছি এই মুহূর্তে।’’
বিরাটময় ম্যাচের শেষে তাই ধোনির মুখেও তাঁরই কথা। ধোনি বলেন, ‘‘এই স্কোর করাটা সহজ ছিল না। মাঝের ওভারগুলিই সব থেকে কঠিন ছিল। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করাও কঠিন ছিল। এটা প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই ও দারুণ খেলছে। প্রতিদিন উন্নতি করছে। ওর মধ্যে সারাক্ষণ একটা রানের খিদে থাকে।’’ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্মিথ মুখে কোহলির কথা। তিনি বলেন, ‘‘বিরাটের অসাধারণ ইনিংসই আমাদের ছিটকে দিল। না হলে ১৬০ রান টপকে যাওয়া সহজ ছিল না। চাপের মধ্যেও এভাবে ব্যাট করা যায়। এভাবেই অনেকদিন ধরে বিরাট খেলে যাচ্ছে।’’
আরও খবর
বিরাটকে নিয়ে মাতল টুইটার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy