অভিনব: নববিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে আকিলা ধনঞ্জয়। ছবি: রয়টার্স।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রথম যখন তাঁর নাম প্রাথমিক স্কোয়াডে দেখা গিয়েছিল, নানা অপমানজনক কাহিনি বাজারে বেরিয়ে পড়ল। তাঁর পরিবার নাকি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে দলে ঢুকিয়েছে। এমন অপবাদও দিল কেউ কেউ যে, গরিব বোর্ডের টাকার দরকার ছিল। নিশ্চয়ই আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
সত্যিই তো! কে এই ছেলেটা? মাত্র ১৮ বছর বয়সে কোথা থেকেই বা ঢুকে পড়ল জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে? যে কি না কোনও দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেনি। কখনও তাঁর দেশের অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলে ডাক পায়নি। রাতারাতি তাঁর এমন উত্থানে প্রশ্ন তো উঠবেই।
সে দিন যাঁকে নিয়ে এ সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠেছিল, পাল্লেকেলের মাঠে তিনিই ছিলেন এ দিন বিরাট কোহালিদের ঘাতক। আকিলা ধনঞ্জয়। যিনি কি না বুধবারেই বিয়ে করেছেন। ম্যাচের শেষে সিংহলিজ ভাষায় ধনঞ্জয় বলে গেলেন, ‘‘কাল বিয়ে করে রাত এগারোটার মধ্যে হোটেলে ফিরে এসেছিলাম। আমি খুশি।’’ তিনি কী বল করেন, সেটা নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়ে গেল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা তাঁকে খেলবেন কী, বুঝেই উঠতে পারছিলেন না ধনঞ্জয়ের কোন বলটা কোন দিকে স্পিন করবে। এমনিতে তাঁর নামের পাশে লেখা অফব্রেক বোলার। কিন্তু সেটা ধরে নিলে বোকা বনতে হবে। একইসঙ্গে লেগস্পিন, গুগলি, দুসরা, ক্যারম বল সব রকম অস্ত্র আছে তাঁর হাতে। অজন্তা মেন্ডিসের দেশ থেকে তিনিই নতুন রহস্যময় স্পিনার।
আরও পড়ুন: এমএস দেখাল, কেন ওকে দরকার
মুগ্ধ বিরাট কোহালিও ম্যাচের শেষে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলে গেলেন, ‘‘দারুণ একটা স্পেল করে ও আমাদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিল। আমরা জানতাম ও অফব্রেক করে, মাঝেমধ্যে লেগস্পিন মিশিয়ে দেয়। কিন্তু চারটে উইকেট নিয়ে গেল গুগলিতে।’’ টিভি-তে সুনীল গাওস্করও বললেন, ‘‘ধনঞ্জয়ের গুগলি ধরা যায় না কারণ বল ছাড়ার সময় অ্যাকশনে খুব বেশি পরিবর্তন না করেই ও গুগলিটা দেয়।’’ একটি স্পেলে ছয় উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ভারতকে প্রায় একাই হারিয়ে দিচ্ছিলেন। কে নেই সেই ছয় শিকারের মধ্যে? রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, কেদার যাদব, বিরাট কোহালি, হার্দিক পাণ্ড্য এবং অক্ষর পটেল। ভারত ছিল ১০৯ বিনা উইকেটে। ধনঞ্জয় সেটাকে চকিতে করে দিলেন ১৩১-৭।
ধনঞ্জয়ের আবিষ্কারক মাহেলা জয়বর্ধনে। পাকিস্তান সফরের আগে প্র্যাকটিস সেশনে ধনঞ্জয় ডাক পেয়েছিলেন নেট বোলার হিসেবে। কিন্তু তাঁকে খেলতে গিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েন জয়বর্ধনে। এবং বৈচিত্র দেখে অবাক হয়ে যান। শ্রীলঙ্কার কোচ তখন গ্রাহাম ফোর্ড। তাঁকে ডেকে ধনঞ্জয়কে দেখান জয়বর্ধনে। তার পর শ্রীলঙ্কার নির্বাচকদের বলেন, তাঁকে দ্রুত জাতীয় দলের জন্য ভাবতে। জয়বর্ধনের কথাতেই বিশেষ কিছু ক্রিকেট না খেলেও ধনঞ্জয় ঢুকে পড়েন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে। একটি ম্যাচে রিটার্ন ক্যাচ ধরতে গিয়ে বল ফস্কে নাক ফেটে যায়। রক্ত বেরচ্ছে গলগল করে। জয়বর্ধনে ছুটে এলেন। ধনঞ্জয় বললেন, ‘‘ছিঃ, আমি ক্যাচটা মিস করলাম!’’ ২০১২-তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ঢুকেছিলেন তিনি। পাঁচ বছরেও কেন তিনি নিয়মিত হতে পারেননি, সেটাএ একটা বড় বিস্ময়।
কলম্বোর দক্ষিণে পানাডুরা নামে একটি জায়গার বাসিন্দা ধনঞ্জয়। বাবা ছুতোর মিস্ত্রি। জয়বর্ধনের উৎসাহ পেয়ে টগবগে হয়ে ওঠেন তিনি। এর কয়েক দিন পরেই প্রেমদাসায় একটি ম্যাচে খেলছিলেন তিনি। প্রথমে শুরু করেছিলেন একেবারে প্রথাগত অফস্পিনারের মতো। তার পরেই হঠাৎ গুগলি শুরু হয়ে গেল। তার পর দুসরা। তার পর লেগস্পিনার। ভারতীয়দের মতোই সে দিন তাঁর রহস্যের কুলকিনারা খুঁজে পাননি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy