মোহনবাগান নির্বাচন রবিবার যে ধুন্ধুমার হতে চলেছে, তার আঁচ আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই টের পাওয়া গেল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। তবে একের পর এক প্রার্থী প্রত্যাহারে কোণঠাসা বিরোধী শিবিরে অবশেষে যেন একটু স্বস্তির আলো!
শুরু থেকেই ভুয়ো ভোটার বাতিলের দাবিতে একজোট হয়েছিলেন বলরাম চৌধুরি-সুব্রত ভট্টাচার্যরা। তাঁদের সেই দাবির পক্ষে ইতিবাচক রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট।
বাগানের নির্বাচন যাতে সুস্থ এবং স্বচ্ছভাবে হতে পারে, তার জন্য তিনটে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে—
এক) ভোটারদের সদস্য কার্ডের (১৩-১৪, ১৪-১৫ যে কোনও একটি বর্ষের) সঙ্গে রাখতে হবে। যদি সেই সদস্য কার্ডের বৈধতা নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করে, তা হলে যে কোনও একটি সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র দেখাতে হবে সেই ভোটারকে।
দুই) ২১টা বুথের প্রত্যেকটায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
তিন) সাধারণ নির্বাচনের মতো ভোটদানের আগে সদস্যদের আঙুলে কালি লাগানো হবে। সদস্য কার্ডে স্ট্যাম্পও লাগানো হবে।
এখানেই শেষ নয়। বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রতিনিধি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ ১২ জুন পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন। সেখানে যদি প্রমাণ হয়, নির্বাচনে কোনও কারচুপি হয়েছে বা বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা হলে নির্বাচন বাতিলও হয়ে যেতে পারে।’’ যা শুনে ক্লাবের শাসকগোষ্ঠীর সহ-সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু বললেন, ‘‘এটা সত্যের জয়। আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। আর মহামান্য আদালত তাদেরই বিপক্ষে রায় দিয়েছে, যারা নির্বাচন আটকাতে চেয়েছিল। ওরা বার বার আদালতে যাচ্ছে আর মুখ পুড়িয়ে আসছে।’’
স্বচ্ছ নির্বাচন করতে কোনও রকম কমতি রাখছে না বাগানের নির্বাচন কমিটিও। ৯১৩৫ ভোটারের জন্য রবিবার থাকছে মোট ২১টি বুথ। প্রত্যেক বুথে এক সঙ্গে তিন জন করে মোট ৫০০ জন সদস্য ভোট দিতে পারবেন। এর মধ্যে একটা আলাদা বুথ থাকবে আজীবন সদস্য, প্রতিবন্ধী কিংবা অসুস্থ ভোটারের জন্য। থাকবে মোট ২৬ সিসিটিভি ক্যামেরা-সহ ১২০ জন ভোট কর্মী। গড়ে প্রত্যেক বুথে পাঁচ জন করে কর্মী। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বাগানের নির্বাচন কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মোহনবাগান নির্বাচনে ভোটারদের স্বাচ্ছন্দকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম ঝামেলা-সমস্যা আটকাতে আমরা প্রস্তুত। বাগান নির্বাচন বলে কথা। একটু উত্তেজনা তো থাকবেই।’’
একটু উত্তেজনা? অন্তত শুক্রবারের সভায় যা প্রোমো দেখালেন সবাই, তাতে রবিবার শোয়ের দিনটা প্রবল উত্তেজনাময় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি! এ দিন দু’পক্ষের সঙ্গেই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঠিক করতে আলোচনায় বসেছিলেন সুশান্তবাবু। কিন্তু তাঁর সামনেই প্রবল অশান্ত হয়ে উঠে সভা। উত্তেজক কথাবার্তা, একে অপরকে দোষারোপ— কোনও কিছুই বাদ ছিল না। সুব্রত ভট্টাচার্য তো আবার নির্বাচন কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই কমিটি শাসকগোষ্ঠীকে সুবিধা করে দিচ্ছে। মুঠো করে কার্ড দিয়ে দিচ্ছিল। যাতে নির্বাচনের দিন ওরা ভিতরে ঢুকে ঝামেলা করতে পারে। আমি জোর করে ওই সব আটকালাম।’’
যার পাল্টা শাসকগোষ্ঠীর অর্থসচিব পদপ্রার্থী দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘প্রত্যেক প্রার্থীকে দু’টো করে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। একটা নিজের। একটা এজেন্টের। ওই কার্ড দেখিয়ে তারা নির্বাচনের দিন ভিতরে ঢুকতে পারবে। কিন্তু কোনও প্রার্থী না আসতে পারলে, তার কার্ড ‘অথোরাইজড লেটার’ দিয়ে নেওয়া যাবে। যেমন অঞ্জন মিত্রের কার্ড আমরা শনিবার নেব। কিন্তু ওরা সেখানে কোনও চিঠি ছাড়াই কার্ড তুলতে চাইছিল। এখানেই আমরা আপত্তি জানাই। আর তাতেই যত সমস্যা।’’
সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগেই তুলকালাম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। এখন দেখার, রবিবার ‘কুরুক্ষেত্রে’ কী হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy