মীরাবাই চানু। ছবি রয়টার্স
২০১৬-র রিয়ো অলিম্পিক্সেও দ্বিতীয় দিনে নেমেছিলেন তিনি। ইভেন্টের শেষে তাঁর নামের পাশে লেখা ছিল ‘ডিএনএফ’, অর্থাৎ ‘ডিড নট ফিনিশ’। বাংলায় যার অর্থ, সেই ইভেন্ট শেষ করতেই পারেননি চানু। চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছিল জীবনের প্রথম অলিম্পিক্স থেকে।
ওই ইভেন্টের পর মারাত্মক চোট পান চানু। কোমরের সেই চোটে একসময় কেরিয়ারই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। মানসিক ভাবেও তিনি প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন। শরণাপন্ন হয়েছিলেন মনোবিদের।
পাঁচ বছর পরেও তিনি অলিম্পিক্সের দ্বিতীয় দিনে নামলেন। এ বার চোখে জল নয়, মুখে শুধুই অমলিন হাসি। মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সাইখোম মীরাবাই চানুর হাত ধরে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে খাতা খুলল ভারত। ভারোত্তোলনে রুপো জিতলেন চানু। ভারতের এই মহিলা ভারোত্তোলকের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন দেখল গোটা বিশ্ব।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে এ বার পদক জেতার অন্যতম দাবিদার হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু অলিম্পিক্সের পরিসংখ্যানই বলছে এখানে অতীতের পারফরম্যান্সের কোনও জায়গা নেই। সেই দিন কেমন খেললেন, তার উপরেই নির্ভর করছে সব কিছু। চানু কিন্তু হতাশ করেননি। পদক নিয়েই বাড়ি ফিরছেন।
That's how you go into the history books!
— #Tokyo2020 for India (@Tokyo2020hi) July 24, 2021
Saikhom Mirabai Chanu - Olympic silver medallist #BestOfTokyo | #Tokyo2020 | #UnitedByEmotion | #StrongerTogether | @mirabai_chanu pic.twitter.com/r1wpEerN9u
Could not have asked for a happier start to @Tokyo2020! India is elated by @mirabai_chanu’s stupendous performance. Congratulations to her for winning the Silver medal in weightlifting. Her success motivates every Indian. #Cheer4India #Tokyo2020 pic.twitter.com/B6uJtDlaJo
— Narendra Modi (@narendramodi) July 24, 2021
Olympic Medal confirmed for Mirabai Chanu
— India_AllSports (@India_AllSports) July 24, 2021
Its how amazing how just one line can lift spirits of the whole nation. #Tokyo2020withIndia_AllSports pic.twitter.com/Z4TA0kJYUC
মণিপুরের ইম্ফলের নংবক কাকচিং গ্রামে ১৯৯৪ সালে ৮ অগস্ট জন্ম চানুর। জন্ম থেকেই তাঁর শারীরিক শক্তি আর পাঁচটা মেয়ের তুলনায় বেশি। সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর বাবা-মা। জ্বালানির জন্য বনে কাঠ কাটতে যেত চানুর পরিবার। ভারী কাঠের বোঝা তাঁর দাদা তুলতে পারতেন না। কিন্তু চানু অনায়াসেই কাঁধে করে তা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসতেন।
চানুর প্রথম পছন্দের খেলা ছিল তিরন্দাজি। কিন্তু বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই তিনি ১২ বছর বয়সে ভারোত্তোলনে ভর্তি হন। অনুশীলন শুরু করেন ইম্ফলের খুমান লাম্পাক স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে মণিপুরের স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সাই), সেখান থেকে পটিয়ালায়। চানুর জয়যাত্রা চলতে থাকে। এক বছর অনুশীলনের পরেই সাফল্য পান তিনি। ছত্তীসগঢ় যুব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। ২০১৪-য় গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে জীবনের প্রথম বড় সাফল্য পান চানু। ৪৮ কেজি বিভাগে রুপো জেতেন। এরপর কুঞ্জরানি দেবীর ১২ বছরের রেকর্ড ভেঙে ১৯২ কেজি তোলেন। দুরন্ত ছন্দ নিয়েই আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন রিয়োতে।
সব স্বপ্নই সেখানে মাটিতে মিশে যায়। ক্লিন এবং জার্ক বিভাগে তিন বারই ওজন তুলতে ব্যর্থ হন চানু। স্ন্যাচে মাত্র এক বার ওজন তুলতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর নামের পাশে ছিল না কোনও সংখ্যা। লেখা হয়েছিল তিনি ইভেন্ট শেষ করতে পারেননি।
চানু ঘুরে দাঁড়ালেন পরের বছরই। ২০১৭-র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলেন। স্ন্যাচ ও ক্লিন এবং জার্ক মিলিয়ে মোট ১৯৪ কেজি তুলেছিলেন তিনি। পরের বছরেও সাফল্য। গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমসে গিয়ে পেলেন সোনা। সেখানে আরও দু’কেজি ওজন বেশি তুললেন।
বছর খানেক আগে কলকাতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে এসেছিলেন। সেখানে মোট ২০৩ কেজি তুলে জাতীয় রেকর্ড তৈরি করেন চানু।
এ বছর আমেরিকার সেন্ট লুইসে টানা দু’মাস কঠোর অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। অতিমারির কারণে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখনও চানু লক্ষ্য থেকে একফোঁটাও মনঃসংযোগ সরাননি। অলিম্পিক্সের দিন তিনেক আগেও সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলেছিলেন পদক জিতবেন। সেই স্বপ্ন অবশেষে সফল।
২০১৮-য় তিনি পদ্মশ্রী এবং রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কার পান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy