প্রিয় ছাত্র টেস্ট টিমে সুযোগ পেয়েছে শোনামাত্র তাকে ফোনটা করেছিলেন ক্রিকেট-গুরু। এবং দু’টো ব্যাপার বলে দেন। এটা ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি নয়, এটা পাঁচ দিনের ক্রিকেট। এখানে পনেরোটা সেশন অপেক্ষা করবে তোর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। মাথায় রাখবি, রোজ তোর পক্ষে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। এক-আধ দিন খারাপ যাবে। সেটা মেনে নিতে হবে। ভুলেও ভাববি না যে, একটা দিন মার খেয়ে গেলাম মানে খারাপ টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে গেলাম। আর দুই, যদি না-ও খেলিস, দেখবি। দেখবি, বিরাট কী ভাবে টেস্ট ক্রিকেটটা খেলছে। অ্যালিস্টার কুক কী ভাবে খেলছে। কী ভাবে প্ল্যানিং চলছে, ওয়ান ডে-র চেয়ে মানসিকতা কতটা আলাদা ওরা করে ফেলছে, সব দেখবি। কারণ টেস্ট ক্রিকেটটা শুধু মাঠে খেলে শেখা যায় না। অনেক কিছু দেখেও শিখতে হয়।
ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের পক্ষে গুরু-শিষ্যকে চেনা খুব কঠিন কিছু নয়। দু’জনেই বডোদরার, গুরু ভারতের প্রথিতযশা উইকেটকিপার। শিষ্য, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। অতীব সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার, যাঁকে ওয়ান ডে-তে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ফিনিশারের ভূমিকায় দেখতে চাইছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
শিষ্য— হার্দিক পাণ্ড্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাঠে মহাগুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলে যিনি ঢুকে পড়লেন।
গুরু— কিরণ মোরে। প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এবং হার্দিককে ক্রিকেট-সার্কিটে তুলে আনার নেপথ্য নায়ক।
‘‘হার্দিকের সঙ্গে আমার কথাবার্তা চলতেই থাকে। আজও হয়েছে। দেখবেন, ও ভাল টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করে ছাড়বে,’’ বুধবার সন্ধেয় বডোদরা থেকে ফোনে বলছিলেন মোরে। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমি ওকে বলেছি যে, টেস্ট হল ধৈর্যের খেলা। মাথা ঠান্ডা রাখার খেলা। বলেছি যে, টিমে যদি না-ও থাকিস, তা হলে বসে বসে খেলাটাকে দেখবি। বিরাটকে দেখবি। দেখবি ওরা কী ভাবে কী করছে। ওতেও অনেক কিছু শেখা যায়।’’
পাঠান-ব্রার্দার্স ভারতীয় ক্রিকেটে দূরের নীহারিকা হয়ে যাওয়ার পর বহু দিন বডোদরার জমি শুষ্ক ছিল। হার্দিক এসেছেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খেলেছেন, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে তাঁর বলের গতি প্রবল প্রশংসিতও হয়েছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে টেস্ট ক্রিকেটের জার্সিও গায়ে উঠতে পারে, বোধহয় ভাবতে পারেনি পাণ্ড্য-পরিবার। মুম্বইয়ে দল নির্বাচনী বৈঠক শেষে হার্দিকের নাম ঘোষণার পর রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে যায় পাণ্ড্য পরিবারে। মিষ্টিমুখ শুরু হয়ে যায়। হার্দিকের বাবা হিমাংশু পাণ্ড্য খবরটা শোনামাত্র কেঁদে ফেলেছিলেন। পরে আনন্দের আতিশয্যে বলে দেন, ছেলের প্রথম টেস্ট তিনি রাজকোটে দেখতে যাবেন। ‘‘এটা আমার সেরা দিওয়ালি গিফট। আমি স্বপ্ন দেখতাম, আমার দুই ছেলে ভারতের হয়ে টেস্ট খেলছে। একটা শুধু বাকি থাকল।’’
এখানে মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, হার্দিকের ভাই ক্রুনাল পাণ্ড্যও সীমিত ওভারে ভাল ক্রিকেটার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে গত বার নিয়মিত খেলেওছেন। ক্রুনালের নাকি মনে হয়েছিল যে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে যে গতিতে বল করেছেন হার্দিক, তাতে টেস্ট টিমে ডাক পাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা ছিল।
মোরেরও মনে হচ্ছে, ওই গতিই হার্দিককে টেস্ট টিমে ঢুকিয়ে দিল। বিরাট কোহালির যেমন রাজকুমার শর্মা, হার্দিকের জীবনে মোরেরও এক ভূমিকা। তাঁর অ্যাকাডেমি থেকেই ভারতীয় অলরাউন্ডারের উঠে আসা। শোনা গেল, ক্রিকেটজীবনের প্রথমে হার্দিক নাকি লেগ স্পিন করতেন। মোরের অ্যাকাডেমিতে একদিন পেসার কম পড়ায় হার্দিককে বলা হয় পেস বোলিং করতে। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বরং সেটাই বডোদরা ক্রিকেটারের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘‘কোহালিদের ভাবনাটা দেখে মনে হচ্ছে, ওরা লোয়ার মিডল অর্ডারে এমন একজন চায় যে ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটারে বলটা করে দিতে পারবে। এর আগে স্টুয়ার্ট বিনি খেলেছে। ও ভাল অলরাউন্ডার। কিন্তু যে উইকেটে বল সুইং করবে, সেখানে বিনি ভাল। অস্ট্রেলিয়ার মতো পিচে কিন্তু হার্দিক বেশি কাজে দেবে,’’ বলে দিচ্ছেন মোরে। যিনি সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘টেস্টে হার্দিকের ভাল না করার কোনও কারণ নেই। ওকে ছোট থেকে দেখছি। ব্যাটিংটাও বেশ ভাল করে। আমার তো মনে হয়, ও খেললে ভারতের টেস্ট টিমেরই লাভ। দু’জন পেসার নিয়ে নেমে পড়লে অসুবিধে নেই। কারণ বিরাটের হাতে এমন একজন থাকবে যে ঘণ্টায় একশো চল্লিশে বল করতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy