উড্সের উচ্ছ্বাস
আঠেরো মাস আগে খাট থেকে নামতে গেলেও অন্য কারও সাহায্য লাগত। সেই সময়ে তাঁর মনে হত কখনওই আর গল্ফ কোর্সে ফেরা হবে না। কোমরের চোট এমন নির্মম ভাবে তাঁকে শয্যাশায়ী করে দিয়েছিল যে, চার বার অস্ত্রোপচার করতে হয়।
টাইগার উড্স তখন গল্ফ কোর্সে ফেরার স্বপ্নও দেখতেন না। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা গল্ফার, সব খেলা মিলিয়ে যাঁকে তুলনা করা হয় ডন ব্র্যাডম্যান, মহম্মদ আলি, রজার ফেডেরারদের মতো সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে, তাঁর শুধু একটাই প্রার্থনা দিয়ে দিন শুরু হত তখন— ‘আবার যেন নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দুই সন্তানের সঙ্গে খেলে বেড়াতে পারি’!
তখন কে জানত, তাঁর গল্ফ জীবনে আরও অনেক নাটক এবং আবেগ বাকি রয়েছে! কে ভাবতে পেরেছিল, চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি আবার কোর্সে দাঁড়িয়ে মাথার উপরে দু’হাত তুলে বিখ্যাত সেই উৎসব করবেন, আবার দু’হাতে তুলে ধরবেন গল্ফের খেতাব। রবিবার ভারতীয় সময় অধিক রাতে আটলান্টায় ট্যুর চ্যাম্পিয়নশিপ জয় পাঁচ বছর পেরিয়ে তাঁর প্রথম খেতাব। যা ফের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে তাঁর ভক্তদের মনে।
দুনিয়া ব্যাপী আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, খেলার মঞ্চে এটাই সর্বকালের সেরা প্রত্যাবর্তন কি না? নিশ্চিত করে এক নম্বরেই থাকবে এটা বলা না গেলেও ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনগুলির মধ্যে যে টাইগারের এই জয় ঢুকে পড়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। টুইটার, ফেসবুক উপচে পড়ছে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন বার্তায়। সব চেয়ে জনপ্রিয় লাইন— ফিরল বাঘের গর্জন! কেউ কেউ লিখেছেন, ৪২ বছর বয়সেও উড্স প্রমাণ করে দিলেন, তিনি ফুরোননি। দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। এ বার মেজর জয়ও অধরা থাকবে না।
তিনি— টাইগার উড্স নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। জেতার পরেই বান্ধবী এরিকা হারমেন দীর্ঘ চুম্বনে ভরিয়ে দেন তাঁকে। পাঁচ বছর পরে কোনও ট্রফি হাতে তুলে টাইগার বলে ফেলেছেন, ‘‘আমার সব কিছুই স্বপ্নের মতো লাগছে। বিশ্বাসই করতে পারছি না যে, আমি আবার জিতেছি!’’ কেরিয়ারের সব চেয়ে বেশি জয়ের দিক থেকে এক নম্বরে চলে আসার জন্য আর দু’টি খেতাব দরকার তাঁর। স্যাম স্নিডের রয়েছে ৮২ খেতাব। উড্সের হয়ে গেল ৮০। চলতি বছরে কয়েক বার তিনি পুরনো টাইগারের ঝলক দেখিয়েছেন, কিন্তু খেতাব জিতে উঠতে পারেননি। অবশেষে পারলেন এবং গল্ফ দুনিয়া দেখে নিল এখনও অঘোষিত এক নম্বর কে! শেষের দিকে যখন তিনি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন, কাতারে কাতারে মানুষ তাঁর পিছনে ছুটছেন। এমন হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় যে, সংগঠকেরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন পদপিষ্ট না হয়ে যান দর্শকেরা। টুইটারে সেই ভিডিয়ো আপলোড করে অনেকে মন্তব্য করেছেন, কোনও খেলার কোনও নায়ককে নিয়ে এমন দৃশ্য আর কখনও দেখা যায়নি। অনেক দর্শক মন্তব্য করে যান, ‘‘টাইগারের এই প্রত্যাবর্তন কাহিনি আমাদের কাছে সেরা রূপকথা। আগে ছিলেন ঐশ্বরিক উড্স। কিন্তু ইনি মানব। যিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।’’
শুধু টাইগার-ভক্তরাই নয়। জাক নিকলস থেকে শুরু করে রোরি ম্যাকিলরয়— উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছে প্রত্যেকের গলায়। কিশোর ম্যাকিলরয়ের ঘরে এক সময় ঝোলানো থাকত তাঁর নায়কের ছবি। মহিলাঘটিত বিতর্ক, পারিবারিক সমস্যা এবং চোট-আঘাতে বিব্রত উডসের উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হত ম্যাকিলরয়কেই। তিনিও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি নায়ককে। জ্যাক নিকলস বলেছেন, ‘‘আমি কখনও ভাবিনি টাইগার এ ভাবে ফিরে আসবে। অস্ত্রোপচারের পরেও আবার আগের মতো সেই সুইং দেখতে পারব, ভাবিনি। আমার মনে হয়, এটা নিয়েও তর্ক হতে পারে যে, জীবনের সেরা ছন্দে ওকে এখানে আমরা দেখলাম কি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy