Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

‘লজ্জা নয়, কাজে লাগাও নতুন শিক্ষা’

তিন ম্যাচে আমরা খেলাম নয় গোল। কেউ কেউ নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এ বার বলতে শুরু করবেন, ভারতীয় ফুটবল যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেল।

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর হতাশা গ্রাস করল ভারতীয় ফুটবলারদের। ফাইল চিত্র

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর হতাশা গ্রাস করল ভারতীয় ফুটবলারদের। ফাইল চিত্র

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

ঘানার কাছে চার গোলে হেরে শেষ হয়ে গেল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ অভিযান। প্রথমার্ধে এক গোলে যখন পিছিয়ে ছিলাম, তখনও আশায় ছিলাম দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘানার ছেলেদের শক্তি ও গতির কাছেই হেরে গেল ধীরজরা।

তিন ম্যাচে আমরা খেলাম নয় গোল। কেউ কেউ নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এ বার বলতে শুরু করবেন, ভারতীয় ফুটবল যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেল।

আমি কিন্তু সেই দলে পড়ছি না। নিজে দেশের হয়ে অল্পস্বল্প ফুটবল খেলেছি বলেই জানি, সতেরো বছরের কমে দেশের হয়ে খেলতে নামলে অতীতে কী রকম অজানা আতঙ্ক গ্রাস করতো আমাদের। মনে পড়ছে, অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের হয়ে ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম বার নামার মুহূর্ত। মনে হচ্ছিল আমরা পারব?

ঘানার বিরুদ্ধে জিতলে নকআউট পর্বে যাওয়ার একটা ক্ষীণ আশা ছিল ভারতের। কিন্তু আমাদের ছেলেদের চোখেমুখে টেনশনের চিহ্ন দেখিনি। বিশ্বকাপ থেকে প্রাপ্তি এটাই। ফুটবল বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর চোখে চোখ রেখে আমরাও মাঠে নামতে পারি, সেটা এই বিশ্বকাপ ভারতীয়দের মাথায় বীজ পুঁতে দিয়ে গেল। গোলকিপার ধীরজ মইরাংথেম-কে দেখলে বিদেশিরাও প্রেরণা পেতে পারে।

কয়েক মাস আগেই বার্সেলোনায় গিয়েছিলাম। সেখানে মেসিদের বেড়ে ওঠার আঁতুরঘর লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি ঘুরে দেখেছি। বুঝেছি, ওদের সঙ্গে আমাদের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ওদের দর্শন হল, ফুটবল কোচ তাঁর দলের ব্যান্ডমাস্টার। তিনি যে ভাবে বলবেন, সে ভাবেই খেলবে তাঁর ফুটবলার। কখনই নির্দেশ অমান্য করবে না।

আরও পড়ুন: হারের জ্বালা থেকে ভারতীয় দলকে মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি

কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে এতদিন তা হত কোথায়! এখানে কোচ যা বলেন ফুটবলাররা খেলে তার বিপরীত। দেশের হয়ে একটা ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। বিপক্ষ আমাদের বক্সে চোরাগোপ্তা হাত-পা চালাচ্ছে। আমাদের কোচ গোলকিপারকে চেঁচিয়ে বললেন, মাথা গরম করিস না। কিন্তু আমাদের অত্যুৎসাহী গোলকিপার এগিয়ে এসে বিপক্ষ ফরোয়ার্ডকে মেরে লাল কার্ড দেখল। পরিবর্ত গোলকিপারও ঠিক একই ভুল করে ফের লাল কার্ড দেখায় শেষমেশ ভাইচুংকে গোলকিপার খেলতে হয়। ম্যাচটাও আমরা হারি।

এই ভারতীয় দল কিন্তু সে রকম নয়। গোটা দলটাই ভীষণ শৃঙ্খলাবদ্ধ। ঘানার কাছে চার গোল হজম করলেও দেখলাম আমাদের রাইটব্যাক, লেফট ব্যাকরা একটা নির্দিষ্ট জোনের বাইরে ওভারল্যাপে উঠছে না। মিডফিল্ডাররা একটা নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে বেরোচ্ছে না। এটা আমাদের ফুটবলে দ্বিতীয় প্রাপ্তি।

তৃতীয় প্রাপ্তি ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের ভালবাসা। নিজে বিধায়ক হওয়ার সুবাদে জানি, আমার এলাকা বসিরহাট থেকে কত ক্লাব ফুটবল চেয়ে ফোন করছে। সব চেয়ে বড় কথা, আমার পাঁচ বছরের মেয়েও যুবভারতীতে বিশ্বকাপ দেখে এখন ফুটবল খেলতে চাইছে। এই যে গোটা দেশের ফুটবল নিয়ে একটা উন্মাদনা সেটা কিন্তু কম প্রাপ্তি নয়।

এর সঙ্গে গোটা দেশের ছ’টি কেন্দ্রে একাধিক প্র্যাকটিস মাঠ ও বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরি হওয়াও কিন্তু কম পাওনা নয়। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

এখন দরকার কেবল ওই শক্তি ও গতি সম্পন্ন ফুটবলের মোকাবিলা করার বিদ্যা রপ্ত করা। তা হলেই ভারতের এই ছেলেগুলো বিশ্ব ফুটবলে ম্যাজিক দেখানোর ক্ষমতা রাখে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE