মেলালেন, তাঁরা মেলালেন!
রবিবারের রাতে কোথায় যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল ফুটবল এবং ক্রিকেট। কলকাতায় ইডেন গার্ডেনের রাত যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাবউয়ের ফুটবল উৎসব। আর সব শেষে কোথাও মিলে গিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো-বিরাট কোহালি। কোথাও আবার গৌতম গম্ভীর-লিওনেল মেসি। রবিবারের রাত কারও কাছে নিয়ে এল হতাশা, কেউ আবার ফিরে পেলেন শান্তির ঘুম।
আরও খবর: কোন পথে আসতে পারে মোহনবাগানের আই লিগ
ওই দিন সন্ধে থেকে ক্রিকেটপ্রেমী বিশ্ব মেতেছিল আইপিএল-এ। রাত গভীর হতেই সেই খেলা-পাগল দর্শকই ঘুরে গিয়েছিল ফুটবলে। এক দিকে যখন বিরাট কোহালি-গৌতম গম্ভীরের লড়াই কলকাতার মাঠে, তখন ফুটবল বিশ্ব গা গরম করছিল লা লিগার এল ক্লাসিকোর জন্য। রোনাল্ডো-মেসির লড়াই বলে কথা! দুই সেরা মুখোমুখি হলে যা হয়, এক জনকে তো হারতেই হয়। এখানেও তার অন্যথা হয়নি। তাই এক জনের জয়ের রাস্তা ধরেই লেখা হয়েছে অন্য জনের হার। এক জনের উচ্ছ্বাসের আবহেই হতাশায় ডুব দিয়েছেন আর এক জন।
বৃষ্টির জন্য ইডেনে ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ বনাম ‘বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স’-এর ম্যাচ শুরু হয়েছিল আধ ঘণ্টা দেরিতে। খুব কম রানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কলকাতার ইনিংস। মাত্র ১৩১। সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়াটা যে বিরাট কোহালি, এবি ডে ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল সমৃদ্ধ বেঙ্গালুরুর পক্ষে স্বাভাবিকই ছিল। ইডেনের দর্শক হতাশ হয়ে বাড়ির পথেই হাঁটা দিয়েছিলেন অনেক আগে। কিন্তু, সব হিসেব বদলে গেল মুহূর্তেই। মাত্র ৯.৪ ওভারে ৪৯ রানে শেষ হয়ে গেল বেঙ্গালুরুর ইনিংস। তার আগে শুরুতেই কোনও রান না করে প্যাভেলিয়নে ফিরতে হয়েছে বিরাট কোহালিকে। যেটা তিনি নিজেও মানতে পারেননি। তাই মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরেও রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরে সেই অনুভূতির রেশ বেরিয়ে পড়ছিল বার বার। ছুড়ে ফেলছিলেন টাওয়েল, হাতের জিনিস। রাগে থমথমে মুখটা কিছু পরেই হতাশার কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল।
আরও খবর: সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ ‘শিকার’ করে ফিরলেন মেসি
ঠিক একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল তাঁর কয়েক ঘণ্টা পরে মাদ্রিদের মাঠে। ম্যাচের ঠিক ৯০ মিনিটে গোল করে করে বার্সেলোনাকে জয় এনে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। ঠিক তখন, যখন দু’দলই ধরে নিয়েছে লা লিগায় এ বারের এল ক্লাসিকো ২-২ ড্রয়েই শেষ হবে। আর সেই সময়েই সব স্বপ্নের বিসর্জন ঘটিয়ে মেসির গোল। মাঠের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে হতাশায়, রাগে, দুঃখে তখন হাত-পা ছুড়ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো।
কয়েক ঘণ্টা আগে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছিল কলকাতার মাঠে, কোথায় যেন সবার অজান্তেই মিলে গিয়েছিল বার্নাবউ ও ইডেন গার্ডেন। হতাশায় যখন ডুব দিয়েছেন রোনাল্ডো-কোহালি, তখনই জয়ের উৎসবে মাতলেন মেসি-গম্ভীর।
ইডেন গার্ডেনে প্রথমে ব্যাটিং, ১৩১ রানে শেষ হয়ে যাওয়া ইনিংসের পর যে খুব স্বস্তিতে ছিলেন গৌতম গম্ভীর তেমনটা নয়। বেশ থমথমে মুখেই ফিল্ডিং করতে নেমেছিলেন নাইটরা। বৃষ্টির আগের পূর্বাভাস। কিন্তু, মেঘ কেটে যে এত দ্রুত আলো ফিরে আসবে কে জানত! যখন ক্রমশ হতাশায় ডুবছিলেন বিরাট তখন প্রমাদ গুনছিলেন গম্ভীর। চাহাল আউট হতেই উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ ইডেনে। জয়ে ফিরল কলকাতা।
ঠিক যেমনটা হল বার্নাবউতে। ৯০ মিনিট পর্যন্ত ২-২ গোলে চলছিল বার্সেলোনা-রিয়েল মাদ্রিদ ম্যাচ। এল ক্লাসিকো বলে কথা। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডিই ছিল। কখনও রিয়েলের কাসিমেরো তো কখনও বার্সেলোনার মেসি। কখনও রাকিটিচ তো কখনও রডরিগেজ। সমানে সমানেই চলছিল সবটা। ৯২ মিনিটে গোল করে যখন বার্সেলোনার ব্যর্থতার আকাশে সূর্যোদয় ঘটালেন মেসি, তখন অকাল অমাবস্যা নামল মাদ্রিদে।
আরও খবর: কেকেআর-এর বোলিং দাপটে খড়কুটোর মতো উড়ে গেলেন কোহালিরা
আবারও এক নায়কের ব্যর্থতার আকাশে উদয় হল অন্য নায়কের। সবার অজান্তেই বিশ্বের দু’প্রান্তে মিলে গেল ফুটবল-ক্রিকেট আবেগ। মিলে গেলেন রোনাল্ডো-বিরাট। হাত মেলালেন গম্ভীর-মেসি। কেউ হারলেন, কেউ হারালেন। কেউ ভাসলেন উচ্ছ্বাসে, কেউ ডুব দিলেন হতাশায়।
তাঁরাই মেলালেন। অথচ তখন তা জানতেই পারলেন না রোনাল্ডো, বিরাট, গম্ভীর, মেসিরা।
গ্রাফিক্স: সোমনাথ মিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy