Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

চার প্রশাসক বসিয়ে বোর্ড শুদ্ধকরণে নেমে পড়ল আদালত

প্রথম জন প্রাক্তন কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল। দ্বিতীয় জন ইতিহাসবিদ। তৃতীয় জন প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেট অধিনায়ক। চতুর্থ তথা শেষ জন কর্পোরেট জগতের লোক। না, চার পেশার চার জন কোনও সম্মেলন-টম্মেলন করতে আসেননি।

বোর্ডের ভার যাঁদের উপর।

বোর্ডের ভার যাঁদের উপর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share: Save:

প্রথম জন প্রাক্তন কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল। দ্বিতীয় জন ইতিহাসবিদ। তৃতীয় জন প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেট অধিনায়ক। চতুর্থ তথা শেষ জন কর্পোরেট জগতের লোক।

না, চার পেশার চার জন কোনও সম্মেলন-টম্মেলন করতে আসেননি। ওঁরা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারক। আজ থেকে যাঁদের হাতে দেশজ ক্রিকেটের আপাত শাসনভার তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

ওঁরা হলেন যথাক্রমে বিনোদ রাই, রামচন্দ্র গুহ, ডায়ানা এডুলজি এবং বিক্রম লিমায়ে।

সুপ্রিম কোর্ট আজ ঘোষণা করে দিল, লোঢা সংস্কার কর্মসূচি প্রয়োগ করে বোর্ড নির্বাচন না-হওয়া পর্যন্ত বোর্ড চালাবে ওই চার সদস্যের প্যানেল। সেই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকবেন প্রাক্তন কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল বিনোদ রাই। বোর্ড সিইও রাহুল জোহরি তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। রিপোর্ট করবেন বোর্ডের প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র আজ বলেন, ‘‘প্রশাসকদের এই কমিটি দেখবে লোঢা সংস্কার এখনও পর্যন্ত কতটা মানা হয়েছে। তার পরে রিপোর্ট করবে আমাদের কাছে। দেখা যাক।’’ প্যানেল নিয়ে আজ সিএবি-তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে হাল্কা সুরে তিনি বলেন, ‘‘লোঢা নিয়ে আমি ক্লান্ত। আপনাদের মতো আমিও দেখি। দেখে বাড়ি চলে যাই।’’ পরে সিরিয়াস ভাবে বললেন, ‘‘এটা আদালতের ব্যাপার। এ নিয়ে বলতে পারব না। আদালত যা বলবে, মানতে হবে।’’

ঘটনা হল, প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারটা বিচারপতির মন্তব্যে যতটা সহজ শোনাচ্ছে, আদতে ততটা মোটেও হয়নি। বরং বোর্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বল নানা ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বোর্ড আইনজীবী এক বার বলেন যে, প্রশাসকদের তো বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা উচিত। কারণ, বোর্ডে এত দিন কোনও পদাধিকারী পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ করেননি। যা করেছেন ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই। আদালত তখন পাল্টা প্রশ্ন তোলে, প্রশাসক কমিটি বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করবে কেন? আদালত চাইছে পেশাদার বোর্ড প্রশাসক। বোর্ড আইনজীবীর প্রতিরোধ অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিনোদ রাইকে কী ভাবে প্রশাসকদের প্যানেলে রাখা হচ্ছে? তিনি ব্যাঙ্কিং বোর্ডের চেয়ারম্যান। যা আদতে সরকারি চাকরি। লোঢার নির্দেশে বলা আছে, কোনও সরকারি চাকুরে বোর্ড প্রশাসনে থাকতে পারবেন না। তা হলে বিনোদ রাই কী করে থাকেন?

মুশকিল হল, এতেও লাভ হয়নি। কারণ আদালত-বান্ধব আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ পরিষ্কার বলে দেন, বিনোদ রাই মোটেও সরকারি চাকুরে নন। সম্পূর্ণ বাজে কথা।

কিন্তু আদালতের কাছে ফের এক প্রস্ত ধাতানি খেয়ে বোর্ডকর্তারা যে ভীষণ নড়ে গিয়েছেন, এমনটা ভাবারও কারণ নেই। উল্টে বোর্ডের একটা গোষ্ঠী বলছে (পড়তে হবে শ্রীনি গোষ্ঠী) মাথার উপরে প্রশাসক বসানোটা তো অত্যাশ্চর্য কিছু নয়। এটা প্রত্যাশিতই ছিল। নাম শুধু জানা ছিল না। কিন্তু বসবে যে, জানা ছিল। উল্টে তাঁরা বলাবলি করছেন, রাজ্য সংস্থার দাবিদাওয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি শোনা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ তত দিন পর্যন্ত রাজ্য সংস্থায় স্থিতাবস্থা ধরে রাখা যাবে। মানে এত দিন যে-ভাবে ছিল, রেখে দেওয়া যাবে সেই ভাবেই। দ্বিতীয়ত, বোর্ড যুগ্মসচিব অমিতাভ চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরী, দু’জনের এক জনকেও আজ বোর্ড থেকে বহিষ্কার করেনি সুপ্রিম কোর্ট। বরং আইসিসি-র বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দিয়েছে। তা হলে ধরে নেওয়া হচ্ছে কী করে যে, আজকের পরে সব শেষ?

উপরের দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, সময় বলবে। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে এটুকু বলে দেওয়া যায় যে, চার প্রশাসক পূর্ণ সংস্কারে নেমে পড়েছেন জোরালো ভাবেই। প্রশাসক কমিটির প্রধান বিনোদ রাই বলে দিয়েছেন, ‘‘ক্রিকেটের একটা ভাল প্রশাসন প্রাপ্য। ক্রিকেটারদের প্রাপ্য। সব চেয়ে বেশি প্রাপ্য দেশের ক্রিকেট জনতার।’’ সঙ্গে হাল্কা মেজাজে যোগ করেছেন, ‘‘আমার ভূমিকাটা শুধু এক জন নাইট ওয়াচম্যানের! কারণ আমাদের কাজটা হবে বোর্ডকে এমন এক প্রশাসন উপহার দেওয়া, যারা কিনা মসৃণ ভাবে কাজটা করবে।’’ ভারতীয় টিমের প্রাক্তন মহিলা অধিনায়ক ডায়ানা এডুলজি আবার বলে দেন, ‘‘আমার কাছে প্রস্তাব আসা মাত্র তাতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনকে গুরুত্ব দেব আমি। গুরুত্ব দেব মহিলা ক্রিকেটকেও।’’

যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ওঁরা কত তাড়াতাড়ি ভারতীয় ক্রিকেটকে একটা স্বচ্ছ বোর্ড প্রশাসন উপহার দিতে পারেন, সেটাই দেখার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE