সফল কোচ হতে গেলে যে বড় ফুটবলার হওয়া জরুরি নয়, সেটা ফের প্রমাণ করে দিল সঞ্জয় সেন।
একটা সময় বাঘা সোম, অচ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা হালে আর্মান্দো কোলাসোর মতো কোচ প্রচুর ট্রফি দিয়েছেন। ওঁরা কেউই হয়তো খেলোয়াড়জীবনে সে ভাবে তারকা হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু কোচ হিসেবে সফল।
এই আই লিগ ট্রফি অনামী ফুটবলার কিন্তু নামী কোচদের সেই সোনালি যুগ আবার ফিরিয়ে আনল। কর্তাদের বিদেশি-প্রীতিতে যারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার দিকে চলে গিয়েছিল!
সঞ্জয় দেখিয়ে দিয়েছে কোচ হওয়ার জন্য শরীরে বিদেশি রক্তের দরকার নেই। দরকার লাগে ফুটবল-বুদ্ধি আর সঠিক ম্যান ম্যানেজমেন্টের ক্ষমতা। অমল দত্তেরও দুর্ভাগ্য, যখন জাতীয় লিগ চালু হল, তখন ওঁকে আর সে ভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি। সুযোগ পেলে উনিও হয়তো জাতীয় লিগ জিততে পারতেন!
অনেকেই এখন আমাকে প্রশ্ন করছেন, মোহনবাগানের এই সাফল্যে সুভায ভৌমিকের কৃতিত্ব কতটা? যতই হোক, টিমটা তো তারই হাতে গড়া। যাঁরা এ সব বলছেন, আমি তাঁদের উল্টো প্রশ্ন করতে চাই— মোহনবাগান যদি হেরে যেত তা হলে কি সঞ্জয় সেনের সঙ্গে ভৌমিককেও দায়ী করা হত? চেতলার মতো নিউ আলিপুরের বাড়িতেও কি সমর্থকদের ক্ষোভের আগুন জ্বলত?
এই জয়ের পুরো কৃতিত্ব আমি সঞ্জয়কে দেব। হতে পারে টিমটা ভৌমিক (সুভাষ ভৌমিক) তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু টিম করা আর সেটা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে প্রচুর পার্থক্য। ভাল টিম তো করিম বেঞ্চারিফাও পেয়েছিল। আই লিগ জিততে পেরেছিল কি? উল্টে এমন মহান কোচ তিনি যে, এ বছর পুণে এফসি খারাপ খেলছে দেখে মাঝপথেই পালিয়ে গেলেন!
আর এক জনের নাম ট্রেভর মর্গ্যান। কেউ কেউ বলেন ইস্টবেঙ্গলের মসিহা উনি! তা এ বারের লিগে সেই ‘মসিহা’-র কৃতিত্ব— পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ডেম্পোকে অবনমনে পাঠানো। ওঁর জায়গায় আমি থাকলে আমার বাড়ির সামনে এতক্ষণে বোধহয় র্যাফ নেমে যেত!
একটা কথা বুঝতে হবে। ছোট ছোট লড়াই জিতে রাজা তো অনেকেই হতে পারে। কিন্তু দিনের শেষে সেই সম্রাট, যে মহাযুদ্ধে বিপক্ষকে মাত করে সিংহাসন দখল করতে পারে। আর এখন ভারতের শাহেনশা— সঞ্জয় সেন। গর্বের বঙ্গসন্তান।
যে অবস্থা থেকে টেনে তুলে সঞ্জয় ‘টিম বাগান’ তৈরি করেছে, তা সত্যি-ই প্রশংসনীয়। এক জন মোহনবাগানি হিসেবে তো বটেই বাঙালি হিসেবেও আমি গর্বিত। যে যাই বলুক, আই লিগ জেতা মুখের কথা নয়। এত লম্বা একটা লিগ জিততে গেলে যে ধৈর্য, পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস আর বলিদান লাগে, সেটা আমি ভাল করেই জানি। এত দিন ধরে ফুটবলারদের এক করে ধরে রাখা, মোটিভেট করা— মোটেই সহজ নয়। এটা নিজে কোচ হিসেবে দু’বার জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
পাঁচ বছর ট্রফি ছিল না মোহনবাগানে। সেই খরা কাটল দেশের সবচেয়ে বড় ট্রফিটা জিতেই। কোচ তো বটেই ফুটবলারদের কৃতিত্বও কম নয়। আমার কাছে ওরাই আসল নায়ক মোহনবাগানের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy