কোচের উপর রাগ করে রিজার্ভ বেঞ্চেও বসলেন না বোয়া। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মোহনবাগান-১ (পঙ্কজ)
সাই (পূর্বাঞ্চল)-০
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ২০১২। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-সান্ডারল্যান্ড ম্যাচ। একের পর এক গোল মিস করায় ম্যান সিটি কোচ রবের্তো মানচিনি বসিয়ে দিলেন মারিও বালোতেলিকে। সুপার মারিও রিজার্ভ বেঞ্চে না বসে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে।
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ ২০১৪। সাই পূর্বাঞ্চলের বিরুদ্ধে কাতসুমিকে বসিয়ে বোয়া আর ফাতাই এই দুই বিদেশিকে নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন বাগান টিডি সুভাষ ভৌমিক। উদ্দেশ্য, ছিল শুরুতেই গোল তুলে নেওয়া। কিন্তু ফাতাইয়ের বাড়ানো পাস থেকে পা ছোঁয়ালেই গোলএ রকম সোনার সুযোগ বোয়া কাজে লাগাতে না পারায় পরের মিনিটেই পরিবর্তন। বোয়ার বদলে মাঠে কাতসুমি। বাগান রিজার্ভ বেঞ্চের পাশ দিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন বাগানের আইকন ফুটবলার। বিরতির পরেও মাঠে এলেন না। তফাৎ এটাই যে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বালোতেলি। আর বোয়া বসে রইলেন ড্রেসিংরুমেই।
বাগানের বালোতেলি বোয়া! ফুটবলে নয়, মেজাজে।
বাগান টিডি সুভাষ ময়দানে এ রকম বেগড়বাই ফুটবলার সামলানোয় পোক্ত। সূত্রের খবর, বোয়া কেন রিজার্ভ বেঞ্চে নেই তা জানতে ম্যাচ কমিশনার চিত্ত দাস মজুমদার চতুর্থ রেফারি অনিমেষ বিশ্বাসকে পাঠিয়েছিলেন মোহনবাগান টিডির কাছে। টিডি নাকি বলে দেন বোয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ড্রেসিংরুমে গিয়েছেন। পরে দ্বিতীয়ার্ধে বোয়া বেঞ্চে বসছেন কি না ফের জানতে চাওয়া হলে মোহনবাগান ড্রেসিংরুম থেকে জানানো হয় পেট খারাপ হয়েছে বোয়ার। যা শুনে আর ঝুঁকি নেননি সদ্য পেশাদার হওয়া রেফারি রঞ্জিত বক্সি এবং ম্যাচ কমিশনার।
কিন্তু এখানেও শেষ নয় বোয়া কাহিনি। বিরতিতে তে বটেই, ম্যাচ শেষেও টিডি বা কোচের কাছে গিয়ে কোনও রকম দুঃখপ্রকাশ তো দূরের কথা উল্টে যুবভারতী ছাড়ার সময় বলে যান, “আমার কেরিয়ারে কখনও এ রকম ঘটেনি। এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। আমি আহত। তবে আমি কী সেটা আমি ভাল ভাবেই জানি।”
যা নিয়ে স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ বাগানের কোচিং স্টাফ এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা। রাতে ক্লাবের অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত-র কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, “কোচ এবং ম্যানেজারকে লিখিত বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। তা পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রইল বাকি চার। আপাতত স্বস্তিতে সুভাষ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
বোয়া কাণ্ডতেই শেষ নয়। সুভাষের বাগান বিভ্রাটের সামনে পড়েছিল দল গঠনেও। আইএসএল-এ শিল্টনদের মতো যে সব ফুটবলার এখনও যাননি তাঁদের ধরেই মঙ্গলবার দল সাজিয়েছিলেন টিডি। কিন্তু রাতে জানতে পারেন আইএসএল-গামী ফুটবলারদের পাওয়া যাবে না।” ফলে তড়িঘড়ি ফের দল গড়তে বসে পড়েন সুভাষ। নামিয়ে দেন সুখেন, জনি, বিক্রমজিৎদের রিজার্ভ বেঞ্চকে!
সাই ৪-৫-১ ছকে রক্ষণে ন’জনের পায়ের জঙ্গল তৈরি করছে দেখেও মিডল করিডর দিয়ে অহেতুক আক্রমণ শানাতে গিয়ে প্রথমার্ধে গোল পাননি লালকমলরা। রাইট ব্যাক সতীশও সাইয়ের ‘বিস্ময় বালক’ লক্ষ্মীকান্ত মাণ্ডিকে ধরার জন্য বাঁ দিকে খেলছিলেন আর রাইটে সুখেন। লক্ষ্মী চোট পেয়ে বাইরে যেতেই দ্বিতীয়ার্ধে দুই সাইড ব্যাক জায়গা বদল করে নেন। শুরু হয় মিডল করিডরের বদলে দুই উইং দিয়ে আক্রমণে যাওয়া। যার ফল শেষ লগ্নে পঙ্কজের মহার্ঘ্য গোল। যদিও তার আগে তেইশ মিনিট দশ জনের সাইকে কব্জা করা যায়নি বল দুই প্রান্তে সরবরাহ না হওয়ায়। সঙ্গে ম্যাচ সেরা সাই কিপার শুভম রায়ের দাপুটে ফুটবলও গোল পেতে দেয়নি বাগানকে।
সাইকে হারিয়ে লাইফ লাইনের প্রথম ধাপ পেরিয়ে গেলেন বাগান টিডি। পেলেন তিন পয়েন্ট। তার চেয়েও ইতিবাচক দিক বলবন্ত, কাতসুমি, লালকমলের উদ্যমী ফুটবল। সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে জনি রাউথও খারাপ খেললেন না। আগ্রাসী ট্যাকল, হেডিং, টার্নিং নজর কাড়ল। সময় দিলে বাগানে সম্পদ হতেই পারেন।
আর বড় ম্যাচের ভিলেন ফাতাই? বাগান সমর্থকদের মন এখনও জয় না করতে পারলেও ফাতাইয়ের অনুমান ক্ষমতা, খেলা তৈরি ও বল ধরে খেলার প্রবণতা মন্দ নয়। সমস্যা ফিটনেসে আর উইং থেকে আসা এরিয়াল বলে। সময় আর সতীর্থদের সহযোগিতা পেলে এই ফাতাই কিন্তু সুভাষের রক্ষণে দাঁড়িয়ে যেতেই পারেন।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, সুখেন, জনি, ফাতাই, সতীশ, বিক্রমজিৎ (শেহনাজ), উজ্জ্বল (তীর্থঙ্কর), লালকমল, পঙ্কজ, বোয়া (কাতসুমি), বলবন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy