উৎসব: স্পেনের সেরা আকর্ষণ আবেল রুইজ মাতালেন কোচি। মঙ্গলবার। ছবি: গেটি ইমেজেস
নাটকীয় প্রত্যাবর্তন!
নিজার-কে উড়িয়ে দিয়ে শেষ ষোলোর পথে স্পেন।
প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হারের পর অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তিকিতাকার কার্যকারিতা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল বার্সেলোনার আবেল রুইসের ভবিষ্যৎ নিয়েও। মঙ্গলবার কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে জোড়া গোল করে প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখল আবেল। ফিরল তিকিতাকাও।
নিজার সম্পর্কে গোটা বিশ্বের ধারণা— পশ্চিম আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র একটি দেশ। প্রতি মুহূর্তে যেখানে মৃত্যুর আতঙ্ক। বেঁচে থাকার সংগ্রাম। গত বছর আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সে যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে নাইজিরিয়াকে ছিটকে দেওয়ার পর বিশ্ব জেনেছিল, নিজার ফুটবলও খেলে। তার পর অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়।
স্পেনের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত শুরু করেছিল সেলিম আবদুর রহমানে, কাদের আবুবকর-রা। স্পেনের তোরেস ফেরান-দের কার্যত বল ধরতেই দেয়নি তারা। স্পেনের প্রথম আক্রমণ ম্যাচের দশ মিনিটে! আবেল-এর শট বাঁচিয়ে দেয় নিজার গোলরক্ষক খালিদ লাওয়ালি। এর পরেই শুরু হল তিকিতাকা ঝড়।
নিজারের বিরুদ্ধে প্রথম দলে এ দিন তিনটি পরিবর্তন করেছিলেন স্পেন কোচ সান্তিয়াগো দিনেয়া স্যাঞ্চেজ। রক্ষণে খুয়ান মিরান্দা। মাঝমাঠে আন্তোনিও ব্ল্যাঙ্কো ও সিজার জেলাবের্ত-কে শুরু থেকেই খেলান তিনি। রিয়াল মাদ্রিদ জুনিয়র দলের দুই প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডার ব্ল্যাঙ্কো ও সিজারই বদলে দিল ছবিটা।
প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আবেল, তোরেস ও মুখলিস মহম্মদ ত্রিফলাই ছিল স্প্যানিশ কোচের প্রধান অস্ত্র। নিজারের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ব্ল্যাঙ্কো ও সিজার। এই পঞ্চবাণেই বিদ্ধ নিজারের জয়ের স্বপ্ন। যদিও হারের জন্য প্যারাগুয়ের রেফারি এনরিকে কাসেরেস-কে কাঠগড়ায় তুললেন নিজার কোচ ইসমালিয়া তিয়েমোকো। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘রেফারির জন্যেই আমরা জিততে পারিনি। স্পেন রেফারির সাহায্য পেয়েছে। এই কারণেই মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়।’’
নিজারের বিরুদ্ধে আবেল-এর প্রথম গোল ম্যাচের ২১ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে খেলতে আক্রমণে উঠে বার্সেলোনার নতুন তারকাকে বল সাজিয়ে দিয়েছিল জুয়ান মিরান্দা। আবেল-এর দ্বিতীয় গোল ৪১ মিনিটে। ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে উচ্ছ্বসিত সান্তিয়াগো বললেন, ‘‘আবেল কতটা প্রতিশ্রুতিমান বিশ্বের সকলেই এখন জেনে গিয়েছে। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আবেল শুধু স্পেনের নয়, বার্সেলোনারও সম্পদ।’’
আরও পড়ুন: এ বার উড়ে গেল কোরিয়াও, নক-আউটে নিশ্চিত ব্রাজিল
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই স্পেন ৩- নিজার ০। এ বার গোল সের্জিও গোমেজ-এর। আবেল-এর মতো তার উত্থানও লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি থেকে। সের্জিও নিজের দ্বিতীয় গোল করে ম্যাচ শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে। কোচিতে ৪-০ জয়ের চেয়েও স্প্যানিশ কোচ বেশি উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিকল্পনা সফল হওয়ায়। সাম্বার ধাক্কায় প্রথম ম্যাচে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তিকিতাকা। কিন্তু সান্তিয়াগো তাঁর ভাবনা থেকে সরে আসেননি। গত দু’দিন ধরে অনুশীলনে তিনি জোর দিয়েছিলেন ছোট ছোট পাসে খেলার।
ম্যাচের পর স্পেন কোচ বলছিলেন, ‘‘এটাই আমাদের ফুটবল ঘরনা। স্পেনের এই খেলা দেখতেই সকলে ভালবাসে। পরিস্থিতি যাই হোক, আমাদের দর্শন বদলাবে না।’’ তিকিতাকা শুধু সুন্দর নয়, ভয়ঙ্করও!
স্পেন: ফার্নান্দেজ আলভারো, মাতেউ জাউমে, উগো খুইলামন, মিরান্দা খুয়ান, ভিক্টর চুস্ত, আন্তোনিও ব্ল্যাঙ্কো (আলভারো গার্সিয়া), তোরেস ফেরান, মুখলিস মহম্মদ, সের্জিও গোমেস, সিজার জেলাবের্ত (হোসে লারা) ও আবেল রুইস (নাচো ডায়াস)।
নিজার: খালিদ লাওয়ালি, ফারুখ ইদ্রিসা, জিব্রিলা ইব্রাহিম, রিচার্ড সৌমানা, ইব্রাহিম নামাতা, ইয়াসিন মাসাবা (কাইরউ আমোউসথাফা), হাবিবৌ সোফিয়ানে, কাদের আবুবকর, করিম তিন্নি (হামিদ গালিসৌনে), ইব্রাহিম বৌবাকার ও সেলিম আবদুররহমানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy