বিতর্কে: শাকিরার সঙ্গে বিচ্ছেদ? পিকেকে শুনতে হল বিদ্রুপ। ফাইল চিত্র
বার্সেলোনার তারকা ডিফেন্ডার জেরার পিকে ফের ধিক্কার ধ্বনি শুনলেন। তাতেও অবশ্য স্পেনের তিকি তাকা ছন্দে কোনও বিঘ্ন ঘটল না। নিজেদের ঘরের মাঠে আলবানিয়াকে ৩-০ হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে নিল তারা। কাতালুনিয়ার স্বাধীন দেশের দাবি নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের সমর্থন করেছিলেন বার্সেলোনার ফুটবলার পিকে। তিনি বলেছিলেন, কাতালুনিয়ার জন্য স্পেনের হয়ে খেলা ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত তিনি। সেই মন্তব্যের জেরেই স্পেনের অনুশীলনে এবং ম্যাচে বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি শুনতে হল তাঁকে।
শুধু তা-ই নয়, পিকের দিকে বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি ধেয়ে এল শাকিরাকে নিয়েও। স্পেনে তো বটেই, শাকিরার দেশ কলম্বিয়ার কয়েকটি সংবাদপত্রেও সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, পিকে-শাকিরার সম্পর্কে নাকি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমনও জল্পনা চলছে যে, তাঁদের বিচ্ছেদও হয়ে য়েতে পারে। সেই খবর নিয়েও শাকিরাকে সমর্থন করে পিকে-কে কটাক্ষ করে ব্যানার তুলে ধরলেন স্পেনের সমর্থকেরা।
স্পেনের হয়ে গোল তিনটি করেন রডরিগো, ইসকো এবং থিয়াগো। যার জোরে গ্রুপের একটি ম্যাচ বাকি থাকতেই রাশিয়ার টিকিট অর্জন করে ফেলল তিকি তাকা ফুটবলের দেশ। গ্রুপ ‘জি’-তে ৯টি ম্যাচের পরে তারা শীর্ষে রয়েছে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, উয়েফা বিভাগে প্রত্যেক গ্রুপের বিজয়ী সরাসরি বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে। দ্বিতীয় দলকে প্লে-অফ খেলে আসতে হবে। ইতালিকে যেটা করতে হবে এখন।
পিকে নিয়ে যদিও জয়ের মধ্যে তিক্ততার সুর থেকেই গেল। তিনি বল ধরলেই স্পেনের সমর্থকেরা বিদ্রুপ করছিলেন। স্পেনের অনুশীলনেও একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। গত রবিবারেই কাতালুনিার সমর্থনে ভোটদানের একটি ছবি টুইট করেছিলেন পিকে। এই ভোটদান স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় কর্তারা বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পিকে ছবি দিয়ে লেখেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের কেউ থামতে পারবে না’। তার পরেই তিনি জানান, যদি স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন চায়, তাহলে তিনি অবসর নিতে তৈরি।
উড়ন্ত: গোল করার পরে এমনই অভিনব উৎসব করলেন স্পেনের রডরিগো। উড়লেন যেন আকাশে। স্পেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে। ছবি: গেটি ইমেজেস
যদিও সোমবারে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফের সমর্থকদের বিদ্রুপের সামনে পড়ার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গিয়েছেন পিকে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তিনি নেই কার্ড দেখার জন্য। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মিডফিল্ডার দাভিদ সিলভাও দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে জেরাজালেম সফরের বাইরে চলে গিয়েছেন। তবে পিকে যেভাবে সমর্থকদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন, সেটাও নজিরবিহীন। স্পেনের ৩-০ জয়ে বেশ ভালই খেলেছেন তিনি। তবু দর্শকদের ক্ষোভ থেকে মুক্তি পাননি। স্পেন আরও অনেক গোলে জিততে পারত। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ৩-০ এগিয়ে যায়। ব্রাজিলে জন্ম হওয়া রডরিগো দারুণ শটে প্রথম গোল করার আগে দু’টি সহজ সুযোগ নষ্টও করেন। রিয়াল মাদ্রিদের ইসকো ১০ গজ দূর থেকে শটে দ্বিতীয় গোল করেন। থিয়াগো হেড করে ৩-০ করেন। ৫৯ মিনিটে পিকে-কে তুলে নেওয়া হয়। রিজার্ভ বেঞ্চে গিয়েও তিনি যখন বসছেন, তখনও গ্যালারি থেকে উঠল ধিক্কার ধ্বনি। স্পেনের কোচ জুলিয়েন লোপেতেগি যদিও বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় এ বার আমাদের নজরটা পুরোপুরি ফুটবলের উপরেই দেওয়া উচিত। আমরা যে একটা ঐক্যবদ্ধ টিম হিসেবে কত ভাল খেলতে পারি, সেটা আবার প্রমাণিত হল এ দিন। খেলা একতা তৈরি করার খুব ভাল উদাহরণ।’’
২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা সাম্প্রতিককালে বিশ্ব মঞ্চে ধাক্কা খেলেও এ বারে কিন্তু দারুণ প্রত্যাশা তৈরি করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। নতুন কোচ, দলে এসেছে অনেক তরুণ রক্তও। লোপেতেগি বলে ফেলছেন, ‘‘সব চেয়ে ভাল ব্যাপার ছিল ছেলেদের দায়বদ্ধতা, উৎসাহ, খিদে এবং আবেগ। সব কিছু দেখিয়েছে ওরা।’’ পিকে-কে নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতেও ছাড়েননি স্পেনের কোচ। বলেছেন, ‘‘আমার মতে জেরার খুবই শান্ত থাকতে পারে। ওকে দেখে মনে হয়নি খুব উদ্বেগে রয়েছে। ওকে দলের সকলে খুবই সম্মান করে। স্পেনের জাতীয় দলের জন্য পিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জন খেলোয়াড়।’’
কোচ বা দল পাশে দাঁড়ালেও স্পেনের সমর্থকদের কিন্তু অতটা সদয় দেখাচ্ছে না পিকের ব্যাপারে। কয়েকজন সমর্থক সংবাদ প্রতিনিধিদেরও বলে গেলেন, ‘‘স্পেনের ঘরের মাঠে বার্সেলোনার জার্সি কেউ পরে না, পরে স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি। সেই জাতীয় দলের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলে টুইট করেছে পিকে। আমরাও তাই ওকে ধিক্কার দিতেই থাকব।’’
নিরপেক্ষ মহলে আবার কেউ কেউ মনে করছেন, পিকে খুব সাংঘাতিক কোনও বিপ্লব করেননি। তিনি কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার দাবি কখনও তোলেননি। শুধু বলেছেন, তাদের নায্য দাবি শোনা উচিত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের। সেটাও কিন্তু স্পেনের নরমপন্থী কোনও কোনও ফুটবল সমর্থক বলছেন। এঁদের বক্তব্য, ‘‘যতদূর জানি, পিকে কখনও বলেনি ও কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে। ও শুধু বলেছে, কাতালুনিয়ার পক্ষে থাকা মানুষের কথাও শোনা হোক।’’
খেলার মধ্যে অবশ্য সব চেয়ে জোরাল যে দু’টি স্লোগান শোনা গিয়েছে, তাতে স্পেনের ক্রীড়াপ্রেমীদের মনোভাব স্পষ্ট। সেই দুই স্লোগান— ‘আই অ্যাম স্প্যানিশ’ (আমি স্প্যানিশ) এবং ‘ভিভা এসপানা’ (দীর্ঘজীবী হও স্পেন)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy