গ্যালারি রাঙিয়ে অভিযান শুরু করল ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ছবি: রয়টার্স
স্পেনের খেলা দেখতে বসলে মাঝেমাঝে আকাশের রামধনুর কথা মনে হয় আমার। কত রং সেখানে! দেল বস্কির টিমকে সোমবারও দেখার পর মনে হল এ বারের ইউরোতেও সেটা অমলিন।
গত আট বছরের ইউরোপ সেরাদের রঙিন করে ওদের পাসের বৈচিত্র। কখনও ত্রিকোণ, কখনও চতুষ্কোণ, কখনও আয়তক্ষেত্র। পাঁচ-ছয়-সাতটা পাস খেলতে খেলতে বিপক্ষ বক্সে পৌঁছে যাওয়া। ইনিয়েস্তা, বুসকেতস, আলবার পা থেকে ছিটকে আসে নানা পাস। যা দেখতে দেখতে ফুটবল-সৌন্দর্য উপভোগ করলাম চেকদের বিরুদ্ধেও।
হতে পারে ইনিয়েস্তার অসাধারণ পাস থেকে পিকে যখন ম্যাচের একমাত্র গোল করল তখন খেলা শেষ হতে মাত্র মিনিট তিনেক বাকি। হতে পারে জুভেন্তাস কাঁপিয়ে আসা মোরাতা বা সেল্টা ভিগোর নোলিতো প্রথম বার ইউরোতে নেমে সফল হতে পারেনি। তাতে কী? স্পেন খেলল তাদের নিজস্ব ঘরানায়। তিকিতাকার একটু খোলামেলা ফর্মেশনে। ৪-৫-১ মোড়কে চেকদের কার্যত পিষে ফেলল স্পেন। গোল হয়তো হয়েছে একটা। কিন্তু ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট বাদে বাকি সময়টা তো পের চেকরা ব্যস্ত ছিল ঘর বাঁচাতে। তিন-চার গোলে জেতা ম্যাচ স্পেন জিততে পারল না কিন্তু পের চেকের জন্য। দেশের হয়ে ১২২ নম্বর ম্যাচটাও চেক কিপার খেলল যেন প্রথম দিনের মতো জেদ নিয়ে। স্কাল ক্যাপ পরে গোল কিপিং তার নিজস্ব ব্র্যান্ড। মাথায় অস্ত্রোপচারের পর এটা ব্যবহার করছে। কিন্তু যেটা আশ্চর্যের, পের চেকের সাহসে তাতে মরচে ধরেনি একটুও। রিফেক্সেও। একটা সময় মনে হচ্ছিল, চেক বনাম স্পেন নয়, পের চেক বনাম স্পেন লড়াই হচ্ছে।
২০০৮-এর পর থেকেই আমি স্পেন-ভক্ত। ওদের খেলার স্টাইলের জন্যই। বিশ্বের কোনও টিম এত পাস খেলে না। মাঠে এত উইং শাফল করে না। সবই ঠিক। কিন্তু ইউরোয় ট্রফির হ্যাটট্রিক করার খিদে নিয়ে আসা টিমটার এত রঙের মধ্যে কিছু কালো দাগও চোখে পড়ল। পনেরোটা কর্নার পেলেও তা থেকে একটাও গোল করতে পারেনি দেল বস্কির টিম। সেট পিসের দুর্দশাই তাতে প্রকট। সঙ্গে রয়েছে গোল করার লোকের অভাব। তোরেসকে কেন যে দলে নিলেন না স্পেন কোচ, সেটা বুঝলাম না। এ মরসুমেও আটলোটিকো মাদ্রিদে তো ভালই খেলেছে তোরেস। ও থাকলে এ ভাবে গোলের জন্য মাথা খুঁড়ে মরতে হত না স্পেনকে। জর্জিয়ার কাছে যে প্রস্তুতি ম্যাচ ইনিয়েস্তারা হেরে ইউরোয় এসেছে সেখানেও কিন্তু এ দিনের মতোই একতরফা বল পজেশন ছিল স্পেনের। সোমবারও সে রকম কিছু ঘটে যেতে পারত। ইনজুরি টাইমে স্প্যানিশ ডিফেন্স গোললাইন সেভ না করলে। এত প্রাধান্য নিয়ে খেলেও ফাব্রেগাসরা যদি ম্যাচটা ড্র করে ফিরত তা হলে অঘটনই হত।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ সব সময়ই চাপের হয়। কিন্তু পিকে-আলবাদের দেখে কখনও মনে হয়নি ওরা ‘প্যানিক’-এ আছে। একটা টিম অনেক দিন ধরে খেললে এটা হয়। মোহনবাগানে কোচিং করার সময় এ বার এটা অনুভব করেছি। গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া টিমটা প্রায় পুরো আমার সঙ্গে ছিল এ বার। কোনও অবস্থায় সনি-কাতসুমিদের ভেঙে পড়তে দেখিনি। স্বভাবতই দেল বস্কির টিমে সেটা আরও অনেক ভাল হচ্ছে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমের হাফডজন ফুটবলার রয়েছে এই স্পেনে। এটাই কিন্তু ইনিয়েস্তাদের প্লাস পয়েন্ট। এ বারও যদি ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়, এই রসায়নের জন্যই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy