Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

সেমেনিয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার

২৫ এপ্রিল লোজানে সভা ছিল আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের। সেখানেই অ্যাথলেটিক্সের দুনিয়ায় পুরুষ- মহিলা বিতর্ক বন্ধ করতে নয়া নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আলোচনায়: সেমেনিয়াকে নিয়ে বিভক্ত ক্রীড়ামহল। ফাইল চিত্র

আলোচনায়: সেমেনিয়াকে নিয়ে বিভক্ত ক্রীড়ামহল। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:২৭
Share: Save:

পর পর দুই অলিম্পিক্সেই ৮০০ মিটারে সোনা জিতেছেন তিনি। একই ইভেন্টে তাঁর সোনা রয়েছে গত বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপেও। গোল্ড কোস্টে সদ্য সমাপ্ত কমনওয়েলথ গেমসেও ৮০০ ও ১৫০০ মিটারে সোনা জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কাস্তের সেমেনিয়া। কিন্তু দেশে ফিরেই আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের (আইএএএফ) নতুন নিয়মে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে তাঁর। যা চালু হতে চলেছে চলতি বছরের পয়লা নভেম্বর থেকে।

কী বলা হয়েছে এই নতুন নিয়মে? ২৫ এপ্রিল লোজানে সভা ছিল আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের। সেখানেই অ্যাথলেটিক্সের দুনিয়ায় পুরুষ- মহিলা বিতর্ক বন্ধ করতে নয়া নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে নিয়ম চালু হয়েছিল, কোনও মহিলা অ্যাথলিটের শরীরে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকলেও তাঁকে মহিলা অ্যাথলিট হিসেবেই গণ্য করা হতে পারে।

কিন্তু নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, যদি কোনও মহিলা অ্যাথলিটের প্রতি লিটার রক্তে ৫ ন্যানোমোল-এর বেশি টেস্টোস্টেরন থাকে তা হলে তাঁকে ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটারে নামতে দেওয়া হবে না। তবে ১০০ ও ২০০ মিটার-সহ, হাইজাম্প, লংজাম্প, শটপাট ও জ্যাভলিন থ্রো-র মতো বিভাগে নামতে পারবেন তাঁরা। ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটারে নামতে হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাথলিটকে দীর্ঘ ছয় মাস চিকিৎসা করিয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে হবে। না হলে তাঁকে প্রতিযোগিতায় মহিলাদের বদলে নামতে হবে পুরুষদের সঙ্গে।

ভারতের স্প্রিন্টার দ্যুতিচন্দের রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকলেও স্বল্পপাল্লার দৌড়ে (১০০ ও ২০০ মিটার) অংশ নেওয়ায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ৮০০ ও ১৫০০ মিটারে অংশ নেওয়ায় সমস্যার সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমেনিয়া। তাঁর অ্যাথলেটিক্স জীবনই শেষ হয়ে যেতে পারে এই নিয়মে। নতুন নিয়মে না আটকানো দ্যুতিচন্দ বলেছেন, ‘‘ই-মেল পাঠিয়ে সেমেনিয়াকে সমর্থন করেছি। আমার আইনজীবীর সাহায্য দরকার হলে ওকে সেটাও দিতে প্রস্তুত আমি।’’ সেমেনিয়া টুইট করে বলেছেন, ‘আমি ৯৭ শতাংশ নিশ্চিত, তোমরা আমাকে পছন্দ করো না। আর আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, তাতে আমার কিছু এসে-যায় না।’

আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান কো বলছেন, ‘‘আমরা চাই মহিলাদের সঙ্গে যারা দৌড়বেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শারীরিক ভাবে সমান দক্ষ হবেন। কেউ যেন তাঁর শারীরিক কারণে দৌড় শুরুর আগেই এগিয়ে বা পিছিয়ে না যান, তা রুখতেই এই নিয়ম। পরীক্ষায় প্রমাণিত, মহিলাদের দেহে টেস্টোস্টেরন বেশি থাকলে তাঁরা সুবিধা পান দৌড়ের সময়। এই নতুন নিয়মের সঙ্গে বর্ণবৈষম্য বা লিঙ্গবৈষম্যের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

কো-র এই মন্তব্য বাইরে আসার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে। হয়, ওযুধ খেয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাও, না হলে পুরুষদের সঙ্গে দৌড়াও—এই নিয়মের তীব্র প্রতিবাদ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতাসীন দল এএনসি। এই নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে ক্রীড়া-আদালতেও আবেদন করার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘এটা সেই বর্ণবিদ্বেষের কদর্য দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যখন ঘৃণ্য আইন প্রয়োগ করে সমাজের একটা অংশকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হত। আইএএএফ এ বার সে রকম নিয়ম এনে গত কয়েক দশকের চ্যাম্পিয়নদের থামাতে চাইছে।’’ যোগ করছেন, ‘‘এ ব্যাপারে সরকার অবগত। এই বৈষম্যের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ক্রীড়া-আদালতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। মানবাধিকারের স্বার্থেই অ্যাথলিটদের বাঁচাতে খেলাধূলার বিরোধী এই নিয়মকে ছুঁড়ে ফেলতে বিশ্বের সব ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের সমর্থন চাই। কারণ এটা লিঙ্গবৈষম্যের ঘৃণ্য উদাহরণ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Caster Semenya IAAF athlete Punishment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE