—প্রতীকী চিত্র।
পুরো টিমকে হোটেলে রেখে ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল শনিবার সাত-সকালে হাজির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। এটা না কি তাঁর তুকতাক! অনুশীলনে টিম নামার আগে এসে প্রার্থনা করেন। সরঞ্জাম সাজান মাঠে একার হাতে।
তার অনেক আগেই একটা বিশাল লাল-হলুদ পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। টিম ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মশাল আর জোড়া ইলিশ নিয়ে হাজির কিছু যুবক। মুখে স্লোগান, ‘‘হাতে মশাল, বুকে বারুদ, আমরা হলাম লাল-হলুদ’’
ঘণ্টাখানেক পরে শিল্টন পাল, আজহারউদ্দিন মল্লিকদের টিম বাস স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়াতেই মোহনবাগান পতাকা আর কাগজের পাল তোলা নৌকো নিয়ে দৌড়ে এল এক দল যুবক। স্লোগান উঠল, ‘‘আমরা কারা, সবুজ-মেরুন।’’
দু’পক্ষের স্লোগান যুদ্ধ চলে প্রায় এক ঘণ্টা।
শিলিগুড়িতে দুর্গাপুজোর ঢাক বাজার আগেই ডার্বি উৎসব হাজির এ রকম সব ছবি নিয়ে। বন্যার জন্য ট্রেনের অনিশ্চয়তার ফলে দলে দলে কলকাতার দর্শকরা আসতে পারছেন না। বাসও অমিল। সঙ্গে পাহাড়ে অশান্তির জেরে টিকিটের হাহাকার হয়তো একটু কম। তাতেও কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেতাব-যুদ্ধ জয়ের রং একটুও ফিকে হয়নি।
শনিবার একটাই আশ্বাস দু’দলের কোচ-ফুটবলারদের, ‘‘খেতাব জিতে সমর্থকদের পুজো উপহার দিতে চাই।’’
দু’দলের কোচই ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। রাতে এখানে হঠাৎই প্রচণ্ড বৃষ্টি নামায় সেটা বদলাতে হচ্ছে শেষ মুহূর্তে। টিম হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সংবাদমাধ্যমকে। ফুটবলারদের কথা বলায় জারি করা হয়েছে ফতোয়া।
ইস্টবেঙ্গলের সামনে টানা আট বার খেতাব জিতে ইতিহাস তৈরির সুযোগ। আর তা আটকাতে তৈরি মোহনবাগান। গোলপার্থক্যে এগিয়ে থাকা মশালবাহিনী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও তাকে তোয়াক্কা করতে নারাজ গঙ্গাপারের ক্লাব। তাদের হাতে যে ‘ডার্বির গোল্ডেন বয়’ আজহারউদ্দিন মল্লিক। তাঁর গোলেই তো গত এপ্রিলে শিলিগুড়িতে প্রথম বার সবুজ-মেরুন আবির উড়েছিল। আজহার ফের ‘সোনা’ ফলাবেন, এই আশায় চোট সত্ত্বেও তাঁকে নামাচ্ছেন বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। সঙ্গে জুড়ে দিতে চাইছেন গোলের মধ্যে থাকা দুই বিদেশি কামো বাই এবং আনসুমানা ক্রোমা জুটিকে।
অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গলে দুরন্ত ফর্মে উইলিস প্লাজা। তাঁকে পাস দেওয়ার জন্য হাজির আল আমনা আর মহম্মদ রফিক। ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে এঁরাই মশাল জ্বালাবেন বলে বিশ্বাস লাল-হলুদ শিবিরের।
বহু দিন পর লিগের ফয়সালা হবে ডার্বিতে। তবে হাতে গোনা বঙ্গসন্তান খেলবেন এই ম্যাচে। যাঁরা মাঠে নামবেন, তাঁদের পঞ্চাশ শতাংশেরই ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা নেই। মোহনবাগানের শিল্টন পাল ছাড়া কেউ এই ট্রফি জয়ের স্বাদ পাননি কখনও। ইস্টবেঙ্গলের স্টপার গুরবিন্দর সিংহ আবার ছুঁতে চলেছেন সাতের দশকের প্রাক্তন তারকা সমরেশ চৌধুরীর আট বার লিগ জেতার রেকর্ড। রাস্তা ঘাটে নানা রকম চর্চা চলছে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা বলছেন, রবিবারে ডার্বি জয়ে লালহলুদ এগিয়ে। বাগান বলছে, ‘‘সেপ্টেম্বরে ডার্বি হলে বেশি জিতেছে সবুজ-মেরুন।’’
স্লোগান, ইলিশ-চিংড়ি, মিথ, পরিসংখ্যান তুকতাক— মনে হচ্ছে বাঙালির ডার্বি গা ভাসিয়েছে ১২৮ বছরের পরম্পরায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy