Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
‘ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে শক্তিশালী দল লাজং’

পাহাড়ি ‘বাবুমশাই’কে সমীহ করছেন সঞ্জয়

সবুজ-মেরুন তাঁবুতে সাদা জার্সি-কালো হাফ প্যান্টের আউটফিটে সঞ্জয় সেন পরিচিত সাংবাদিকদের দেখা মাত্র বিস্ফোরণটা ঘটালেন। ‘‘আমার কাছে এখন ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে শক্তিশালী দল লাজং এফসি।’’ কথা শেষ করে উঠতে পারেননি, তার আগেই হাততালির ঝড় আছড়ে পড়ল চতুর্দিকে। বরাবরের চাঁচাছোলা, স্পষ্টবক্তা হিসেবে এমনিতেই বিখ্যাত বাগানের বাঙালি কোচ। ফেড কাপের দু’ম্যাচের দু’টোই নিরঙ্কুশ পকেটে পুরে গর্জন যে ছাড়বেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী?

বাগানের ‘কর্নেলকে’ নিয়ে কোচ। শনিবার। -নিজস্ব চিত্র

বাগানের ‘কর্নেলকে’ নিয়ে কোচ। শনিবার। -নিজস্ব চিত্র

প্রীতম সাহা
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

সবুজ-মেরুন তাঁবুতে সাদা জার্সি-কালো হাফ প্যান্টের আউটফিটে সঞ্জয় সেন পরিচিত সাংবাদিকদের দেখা মাত্র বিস্ফোরণটা ঘটালেন।

‘‘আমার কাছে এখন ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে শক্তিশালী দল লাজং এফসি।’’ কথা শেষ করে উঠতে পারেননি, তার আগেই হাততালির ঝড় আছড়ে পড়ল চতুর্দিকে।

বরাবরের চাঁচাছোলা, স্পষ্টবক্তা হিসেবে এমনিতেই বিখ্যাত বাগানের বাঙালি কোচ। ফেড কাপের দু’ম্যাচের দু’টোই নিরঙ্কুশ পকেটে পুরে গর্জন যে ছাড়বেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী? আশ্চর্যের হল সেমিফাইনালের টক্করে নামার আগে তিনি সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলকে ঘুরিয়ে দুর্বল বলছেন, যারা কি না এ মরসুমে একটাও ডার্বি হারেনি। তবু সাদা-জার্সির নিখুঁত ভাঁজের মতো বাগান কোচের কণ্ঠস্বরের ঝাঁঝ যেন বিন্দুমাত্র টাল খায়নি!

আসলে সঞ্জয়ের কোচিং-ধর্মও তো তাই। দুর্বলতা নিয়ে টেনশন না করে দুর্বলতাকেই নিজের পেশিশক্তি বানিয়ে ফেলা। গত বছর থেকে সবুজ-মেরুন সংসারে যা চালু করেছেন, এ বারও তা সদর্পে চলছে। বাগান-ডিফেন্সকেই ধরা যাক। আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের পৃথিবী থেকে টানতে টানতে বার করে দিয়েছে তাঁর টিমকে। অথচ সঞ্জয়, মোহনবাগান কোচ দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে। আই লিগ জোটেনি তো কী হয়েছে! চ্যাম্পিয়নদের পাঁচ গোল মেরেছে নিজের ডেরায়। তর্জন-গর্জন করছেন। প্রতি সেকেন্ডে বুঝিয়ে চলেছেন তিনি আলাদা, তাঁর টিমের দর্শনও আলাদা। ডিফেন্স নিয়ে দুর্ভাবনার সমুদ্রে ডুব না দিয়ে ডি আর ফেন্সকে যেন সন্তর্পণে আলাদা করে দিয়েছেন। রবিবারের লাজং ম্যাচের জন্য বাগানের ডিফেন্সিভ থার্ডে ডাইরেক্ট ট্যাকলের দায়িত্ব দিয়েছেন লুসিয়ানোকে। আর তাঁর পিছন থেকে লিডারশিপ দেবেন— কিংশুক।

সঞ্জয় ও তাঁর টিমকে নিয়ে প্রতিপক্ষের ঠকঠকানিটাও দেখার মতো। লাজং টিমে চাকচিক্য এমনিতে বাকিদের সঙ্গে তুল্যমূল্যে বেশ কম। কোনও এক ডু ডং নেই যিনি ভয়াবহ ফ্রি কিকে বিপক্ষ ‘প্রাচীর’-কে কাঁপিয়ে দেবেন। কোনও র‌্যান্টি মার্টিন্স কিংবা ওডাফা ওকোলি নেই, যিনি নামলে বয়সকে মাথায় রেখেও সমীহের দূরবিনে দেখতে হবে। আবার এখানে কোনও সুনীল ছেত্রীও পাবেন না, যিনি দৃষ্টিপথের মধ্যে থাকা মানে হাঁটাচলা, হাঁচি-কাশি সবই আপনাকে নোটবুকে টুকে রাখতে হবে। থাকার মধ্যে একজন পেন ওরজি। স্মৃতির সরণি হাতড়ালে ফুটে উঠবে তাঁর ঘোলাটে কিছু ছবি। লাল-হলুদে একদা ট্রেভর মর্গ্যানের মিডফিল্ড জেনারেল। বছর পাঁচেক আগের টিমলিস্ট দেখলে নামটা পাওয়া যাবে।

আর একজন আছেন। থাংবোই সিংটো। লাজং কোচ। তিনটে ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পরে তিনি এখন অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী। এখানকার সাংবাদিক দেখলেই হাসি-ঠাট্টা করছেন। পাহাড়ি হলেও সঞ্জু প্রধান কিংবা ভাসুমদের যেটা এখনও আটকায়, সেই বাংলা ঝরঝরে বলে চলেছেন। তাঁর উচ্চারণ শুনলে ধুতি-পাঞ্জাবির ‘বাবুমশাই’ ভেসে উঠবে চোখের সামনে। শনিবার সেই লাজং কোচ বলছিলেন, ‘‘দেশের এক নম্বর দল বেঙ্গালুরু। তার পর মোহনবাগান। কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে ওদের হারানো যাবে না, তা কিন্তু নয়।’’

এখন প্রশ্ন, তা হলে লাজংয়ে কী এমন জুজু আছে যার সংস্পর্শে আসতেই ইস্টবেঙ্গলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে? আছে। আর বাগানকেও সতর্ক থাকতে হবে গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে।

লাজং ড্রেসিংরুমে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলকাতা থেকে যে কোনও মূল্যেই হোক এক গোলের পুঁজি নিশ্চিত করে ফিরতে চাইছেন সিংটো। এমনকী অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা তুলতে এতটাই মরিয়া তিনি যে, দু’গোল হজম করতেও রাজি লাজং কোচ। স্ট্র্যাটেজি নতুন নয়। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের ‘কপি-পেস্ট’ স্ট্র্যাটেজি। শুরুতেই আক্রমণাত্মক ফুটবল। মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে ‘ডাউন দ্য মিডল’ দৌড়। দলের প্রধান স্ট্রাইকারকে ম্যান টু ম্যান মার্কিং। লাজংয়ের আরও একটা সুবিধা হল, টানা কলকাতা কেন্দ্রিক ম্যাচ থাকায় এখানকার পরিবেশের সঙ্গেও দুর্দান্ত ভাবে মানিয়ে নিয়েছে তারা।

পাহাড় টপকাতে বাগানের প্রতিষেধকটাও বেশ চমকপ্রদ। তারকাপ্রথা বিসর্জন দিয়ে পর্দার আড়ালে তাল ঠুকছেন সঞ্জয়। মুখে সেই চর্বিত চর্বণ, ‘‘লাজং শক্তিশালী দল। যে কোনও জায়গায় ওরা বিপজ্জনক।’’ আর তলে তলে লাজং টিমের খুঁটিনাটি নিয়ে পরের পর চর্চা করছেন ফুটবলারদের সঙ্গে। ম্যাচের ভিডিও দেখাচ্ছেন। বাগানের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার লুসিয়ানো বলছিলেন, ‘‘টিমটার শক্তি গতি। মাঠ ছোট করে আমাদের সবার আগে ওদের দৌড়টা থামাতে হবে।’’

ডোট-অ্যান্টিডোট সব তৈরি সঞ্জয়ের। সুপরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজির ব্লু-প্রিন্টও হাতে চলে এসেছে। এখন স্রেফ বারাসতে সেটাকে কার্যকর করতে হবে। জিততে হবে। না হলে সবাই ভুলে যাবে কত ভাল ফুটবল খেলল বাগান, কত গোলে জিততে পারতেন সনিরা।

সমর্থকরা যে শুধু ট্রফি বোঝে। আর এ মরসুমে সেটা এখনও পর্যন্ত সবুজ-মেরুনে ঢোকেনি!

রবিবারে

ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল— মোহনবাগান : লাজং এফসি (বারাসত, ৭-০০) ।

অন্য বিষয়গুলি:

Sanjoy Sen Shillong Lajong stronger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE