যুদ্ধের আগে। মাঠে মেসি। বিমানবন্দরে রোনাল্ডো। ছবি: এএফপি, টুইটার
ক্লাব ফুটবলের এল ক্লাসিকো নয়! মঙ্গলবারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড দেখতে চলেছে দেশজ ফুটবলের এল ক্লাসিকো!
আর্জেন্তিনা বনাম পর্তুগাল!
লিওনেল মেসি বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!
বিশ্ব ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সব মিলিয়ে এটা সাতাশতম মুখোমুখি লড়াই হলেও জাতীয় জার্সিতে মাত্র দ্বিতীয় সাক্ষাত্। নীল-সাদা জার্সিতে মেসি আর মেরুন জার্সিতে রোনাল্ডো অতীতে একবারই মুখোমুখি হয়েছেন। আর দু’হাজার এগারোর ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে আর্জেন্তিনা ২-১ পর্তুগালকে হারালেও মেসি-রোনাল্ডো ব্যক্তিগত মহাযুদ্ধ অমীমাংসিত ছিল। যে-হেতু এলএম টেন আর সিআর সেভেন দুই মেগাতারকারই একটি করে গোল ছিল সেই খেলায়।
মঙ্গল-সন্ধের মহাম্যাচের আগে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অঙ্কে অ্যাডভান্টেজ রোনাল্ডো। যার সবচেয়ে বড় কারণ বোধহয় মহাম্যাচের স্থান-মাহাত্ম্য!
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হোম গ্রাউন্ড ওল্ড ট্র্যাফোর্ড।
রোনাল্ডোর রোনাল্ডো হয়ে ওঠার আতুরঘর।
যে ঘর পাঁচ বছর আগে ছেড়ে চলে গেলেও এখনও ভুলতে পারেন না রিয়াল মাদ্রিদ মহাতারকা। মাদ্রিদে যাওয়ার পর রোনাল্ডোর এটা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মোটে দ্বিতীয় ম্যাচ। গত বছরই রিয়াল জার্সিতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নামা রোনাল্ডোর গোলে তাঁর প্রিয় পুরনো ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়ে।
মঙ্গলবার তো সেই অতিপরিচিত পুরনো মাঠে সামনে আবার চিরশত্রু মেসি! প্রশ্ন উঠলে রোনাল্ডো বলে দিয়েছেন, “ফুটবলটা যদি একজন বনাম একজন হত, তা হলে কাল নিশ্চয়ই আমি বনাম মেসি হত। কিন্তু এটা টিমগেম। দু’দলেই আরও দশ জন করে খেলবে। তা সত্ত্বেও এটা খুব স্পেশ্যাল ম্যাচ। কারণ আমি আবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফিরে আসতে পেরেছি। ফের আমার প্রিয় পুরনো মাঠে নামতে পারছি। খেলতে পারছি।”
ফুটবলপণ্ডিতদের অনেকেই যদিও মনে করছেন, সিআর সেভেনের পুরনো মাঠ বলেই এলএম টেনের ভেতরে এই ম্যাচে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ফলে রোনাল্ডো বনাম মেসি একটা ফাটাফাটি ফুটবল হতেই পারে।
তা ছাড়া দুই মহাতারকাই এই মুহূর্তে ফুটবল-ফর্ম আর মানসিক ভাবে ভাল জায়গায় আছেন। মেসি মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের জার্সিতে ইংল্যান্ডের মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছেন। গত বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট হ্যামের আপটন পার্কে এ রকমই ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার ২-১ জয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ উইনিং গোল পেনাল্টি থেকে মেসিরই। রোনাল্ডো আবার শনিবারই ইউরো কাপের সর্বকালীন হায়েস্ট স্কোরারের পাশে নিজের নাম লিখে ফেলেছেন। কোয়ালিফায়ারে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে পর্তুগালের জয়ের ম্যাচে গোল করে।
যুদ্ধক্ষেত্রে অবতরণের ব্যাপারে অবশ্য রোনাল্ডো পিছনে ফেলে দিয়েছেন মেসিকে। লিসবনে পর্তুগাল দলের বেসক্যাম্প থেকে রবিবার রাতেই সতীর্থদের সঙ্গে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড পৌঁছে যান সিআর সেভেন। এমনকী তাঁর মাথায় লাল রঙা মাইকেল জর্ডান নাইকি বেসবল টুপির সামনের দিকে ‘বর্ন অ্যান্ড ব্রেড’ লেখা নিয়ে বিমানবন্দর থেকেই প্রচারমাধ্যমে তীব্র আগ্রহ তৈরি হয়।
তা হলে কি মহাশত্রু মেসির মুখোমুখি হওয়ার আগে সেটার থেকেও রোনাল্ডো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজের প্রত্যাবর্তনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? সোশ্যাল সাইটগুলো ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করে দেয়, ওই টুপি মাথায় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পা রেখে রোনাল্ডো আসলে বলতে চেয়েছেন এখানেই ফুটবলার রোনাল্ডোর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা।
মজার ব্যাপার, রোনাল্ডোর কথা মতো সত্যিই এই মহাযুদ্ধে তিনি আর মেসি ছাড়াও আরও কুড়ি জন ফুটবলার খেলবেন। এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাঁদের কয়েকজনের কাছেও মঙ্গলবারের ম্যাচ যথেষ্ট তাত্পর্যের। যেমন তেভেজ। যেমন আগেরো। যেমন দেমিচেলিস।
মেসির আর্জেন্তিনা রোনাল্ডোর অনেক পরে সোমবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ড পৌঁছয়। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির প্রধান প্র্যাক্টিস সেন্টারে অনুশীলন পর্ব মিটিয়ে। সেখানে মেসির সঙ্গে নিজেদের ক্লাবের মাঠে প্র্যাক্টিস করতে পেরে দারুণ তেতে আছেন বলে দাবি করছেন আগেরো-দেমিচেলিস। প্রাক্তন ম্যান ইউ এবং ম্যান সিটি তারকা তেভেজের কাছে আবার এটা জোড়া ঘরে প্রত্যাবর্তন! এক পুরনো ক্লাবের মাঠে প্র্যাক্টিস সেরে আরেক পুুরনো ক্লাবের মাঠে ম্যাচ খেলবেন জুভেন্তাসের আর্জেন্তিনীয় ফরোয়ার্ড।
মঙ্গলবার ফিফা ফ্রেন্ডলিতে মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি আর ইউরো জয়ী স্পেন। প্রদর্শনী লড়াই ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন বনাম বেঞ্জিমার ফ্রান্সে।
কিন্তু আসল ক্যাচলাইন একটাই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোনাল্ডো বনাম মেসি!
যুযুধান
দেশের হয়ে রোনাল্ডো ১১৭ ম্যাচে ৫২ গোল।
দেশের হয়ে মেসি ৯৬ ম্যাচে ৪৫ গোল।
সব মিলিয়ে মুখোমুখি ২৭ বার। রোনাল্ডো জয়ী ৭, মেসি জয়ী ১২, ড্র ৮।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy