রোনাল্ডো-মেসি হাত মিলিয়ে শুরু খেলা।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রিয় পুরনো ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে মহালড়াই। সিআর সেভেনের পর্তুগালকে চ্যালেঞ্জ লিও মেসির আর্জেন্তিনার। এলএম টেনের গত মাসে এল ক্লাসিকোয় হারের কিছুটা হলেও বদলা নেওয়ার সুযোগ।
বিস্ফোরণের সব মশলাই মজুত ছিল। কিন্তু দেশের জার্সিতে ‘এল ক্লাসিকো’য় আগুনটা জ্বলল কোথায়!
৭৫ হাজার দর্শকাসনের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ভরলও না। এবং উপস্থিত মাত্র ৪২ হাজার দর্শকের মনও ভরল না। স্কোরবোর্ডে যদিও লেখা থাকছে, কোনও এক রাফায়েল গুয়েরেইরোর ম্যাচের একেবারে শেষের দিকের গোলে পর্তুগাল ১-০ হারিয়েছে আর্জেন্তিনাকে।
মঙ্গল-রাতের এই ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি আরও একটা বিষয় সরেজমিন মেপে নেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল ফুটবলদুনিয়াকে। জানুয়ারিতে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের ব্যালন ডি’অরের ট্রফি পাওয়ার যুদ্ধে মেসি-রোনাল্ডো কে কাকে ছাপিয়ে যেতে পারেন সেটার আভাস পাওয়ার। শেষ ছ’বারই যে মহার্ঘ্য পুরস্কার মেসি অথবা রোনাল্ডোর দখলে গিয়েছে। কিন্তু সে গুড়েও বালি! মেসি বা রোনাল্ডো কেউই ৪৫ মিনিটের বেশি মাঠে ছিলেন না। চড়া দামে টিকিট কেটেও দর্শকরা যে ম্যাচের পর হতাশ হবেন তাতে আর আশ্চর্য কী।
ছ’বছর ‘রেড ডেভিলস’ জার্সিতে খেলা রোনাল্ডোকে গত রাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তাঁর দুরন্ত ফর্মের ধারেকাছে দেখা যায়নি। অথচ দর্শকদের মাতামাতি তাঁকে নিয়েই বেশি ছিল। যত বার বল ধরেছেন, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সমর্থকেরা তাঁদের প্রাক্তন মহাতারকার জন্য বলে উঠেছে, “ক্রিশ্চিয়ানো, আমরা এখনও তোমার সঙ্গেই আছি।” কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। চলতি মরসুমে গোল করার অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা নিজের প্রিয় পুরনো মাঠেই রাখতে ব্যর্থ সিআর সেভেন। গোটা ম্যাচে আর্জেন্তিনা গোলে শট একটাই গোলদাতা রাফায়েলের!
ম্যাচে কিন্তু দু’জনই ম্লান। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।
“বেশির ভাগ সময় ব্যালন ডি’অর নামী প্লেয়াররাই জেতে। এ বারও
লড়াইয়ে রোনাল্ডো আর মেসি রয়েছে। তবে আশা করি কোনও জার্মান ফুটবলার
এ বার এই পুরস্কার পাবে। ওদেরই এটা প্রাপ্য।” লুই ফান গল, ম্যান ইউ কোচ
বরং ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামের টানেলে রোনাল্ডোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠে নামা মেসিকে বারদুয়েক কিছুটা জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে। সমর্থনের তোয়াক্কা না করে পর্তুগাল বক্সে নিজের বিখ্যাত ড্রিবলের ঝলকও দেখান আর্জেন্তিনা অধিনায়ক। দুর্দান্ত পাস বাড়ান অ্যাঞ্জেল দি মারিয়াকে। যাঁর কিনা এটাই ঘরের মাঠ। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে এ মরসুমের সবচেয়ে বেশি অর্থে সই করা দি মারিয়া অবশ্য সেই পাস জালের ভেতর রাখতে পারেননি। এক বার তো মেসির শট পোস্টেও লাগে।
মেসি-রোনাল্ডো মহারণে অবশ্য ম্যান ইউ সমর্থকদের জন্য ম্যাচের পর সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠল দি মারিয়ার চোট। নানির বিপজ্জনক ট্যাকলে আর্জেন্তিনীয় তারকার ডান পায়ে চোট লাগে। স্পোর্টিং লিসবনে লোনে থাকলেও খাতায় কলমে নানি এখনও ম্যান ইউয়ের প্লেয়ার। শনিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেড আর্সেনালের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাই নানিই ‘বিভীষণ’ হয়ে উঠলেন কি না, সেই আলোচনা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের আশপাশে তীব্র হচ্ছে।
তবে ম্যাচের আবহ যতই হতাশায় ভরা থাক, পরিসংখ্যান বলছে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার পর্তুগাল হারাল আর্জেন্তিনাকে। তাও বিয়াল্লিশ বছরের ব্যবধানে। ১৯৭২-এর পর এই প্রথম মেরুন জার্সির জয় নীল-সাদা জার্সির বিরুদ্ধে। মঙ্গল-রাতে বার্সেলোনা রাজপুত্রের বিরুদ্ধে মহারণে ক্যাপ্টেন রোনাল্ডোর হাতে এই ‘পেন্সিল’টুকুই যা প্রাপ্তি।
বিশ্বসেরা হারাল ইউরো সেরাকে: শেষ ছ’বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় চারটে টুর্নামেন্টই গিয়েছে স্পেন আর জার্মানির দখলে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলির রাতে সেই দুই মহাশক্তি মুখোমুখি লড়াইয়ে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত গোল করতে পারেনি। শেষ মিনিটে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে জেতান টনি ক্রুজ। তাঁর ২৫ গজের দুরন্ত শট পেরিয়ে যায় স্প্যানিশ গোলকিপার কাসিয়ার নাগাল। হ্যাঁ, কাসিয়ার। কাসিয়াস নন। ইনি কিকো। ইকের নন।
আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেকের ১৫ মিনিটেই (কাসিয়াসের পরিবর্ত হিসাবেই মাঠে নামা ম্যাচের ৭৫ মিনিটে) এত বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে হয়তো বুঝতে পারেননি কাসিয়ার। গত রাতের ০-১ হার ধরে চলতি মরসুমে ১২ ম্যাচে পাঁচ নম্বর ব্যর্থতা ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনের। ১৯৯১-এর পর তাঁদের সবচেয়ে জঘন্য মরসুম। ২০০৬-এর পর প্রথম বার ঘরের মাঠে হারও। অন্য ফ্রেন্ডলিতে ওয়েন রুনির জোড়া গোলে ইংল্যান্ড ৩-১ হারাল প্রতিবেশী স্কটল্যান্ডকে। দেশের হয়ে রুনির ৪৬ গোল হয়ে গেল। আর চার গোল করলেই তিনি ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা স্যর ববি চার্লটনের (৪৯) রেকর্ড ভেঙে দেবেন। দাভিদ লুইজ ও রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ব্রাজিল ২-১ হারায় অস্ট্রিয়াকে। ফ্রান্সও ১-০ জয় পায় সুইডেনের বিরুদ্ধে। ইব্রাহিমোভিচের দলের বিরুদ্ধে একমাত্র গোল ম্যাচের ৮৪ মিনিটে রাফায়েল ভারানের।
ছবি: রয়টার্স
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy