ছবি রয়টার্স।
ব্যাটিং বা বোলিংয়ে অনেক আগে থেকেই ছিল। এ বার ভারতীয় দলে ক্যাচিংয়ে উন্নতি করার জন্যও চালু হয়ে গেল ভিডিয়ো বিশ্লেষণ। আর তার ফল যে উৎসাহিত হওয়ার মতো তা তো স্লিপ ক্যাচিংয়ের সাফল্যই বলে দিচ্ছে।
চলতি সিরিজে শুধু চার পেসারের গতিতেই নয়, অতীত ইতিহাস পাল্টে দিয়ে স্লিপ ক্যাচিংয়েও ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহালিরা। এই সিরিজে অন্তত ১৫টি ক্যাচ ফেলেছেন ইংল্যান্ডের স্লিপ ফিল্ডারেরা। তার মধ্যে কয়েকটি বেশ মোড় ঘোরানো। এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ডেভিড মালান দু’বার কোহালির ক্যাচ ফেলে দেন। কোহালি ছিলেন যথাক্রমে ২১ এবং ৫১। ইংল্যান্ড এজবাস্টনে জিতলেও কোহালি ১৪৯ করে গোটা সিরিজের জন্যই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ট্রেন্ট ব্রিজে দ্বিতীয় ইনিংসে জস বাটলার ফেলে দেন চেতেশ্বর পূজারার ক্যাচ। তিনি তখন ৪০। করে যান ৭২।
প্রথম দু’টি টেস্টে ভারতও স্লিপ ক্যাচিংয়ে ভুল করেছে। তার পরেই ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের আগে ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর ভিডিয়ো বিশ্লেষণে বসেন। দু’টি ভুল শুধরে নেওয়ার কথা আলোচিত হয়। এক) কোহালি, রাহুলরা খুব গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াচ্ছিলেন। এমন অবস্থা হচ্ছিল যে, হাত প্রসারিত করলেও পাশের ফিল্ডারের গায়ে লেগে যাবে। নিজেদের মধ্যে আরও কিছুটা জায়গা ছেড়ে রাখতে বলা হয়। দুই) ব্যাটিংয়ে সফল হতে গেলে যেমন এখানে দেরিতে বল খেলতে হয়, তেমনই স্লিপ ক্যাচিংয়ের ক্ষেত্রেও ফিল্ডিং কোচ পরামর্শ দেন, অপেক্ষা করে ক্যাচ নিতে যাও। ভিডিয়ো দেখিয়ে তিনি বোঝান যে, ইংল্যান্ডে বল বেশি সুইং এবং সিম করে। উইকেটের পিছনে গিয়েও বল ‘মুভ’ করতে পারে। তাই আগে থেকে কোনও একটা লাইনে ক্যাচ আসছে, ধরে নিলে বোকা বনতে হবে। ব্যাটসম্যানদের মতো স্লিপ ফিল্ডারদেরও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলের উপরে চোখ রাখতে হবে।
ফিল্ডিং নিয়ে এই বিশেষ ক্লাসের পরেই ভারতীয় স্লিপ ফিল্ডিংকে অনেক পরিণত এবং জমাট দেখাচ্ছে। খেলোয়াড় জীবনে দারুণ কিছু করে উঠতে পারেননি শ্রীধর। হায়দরাবাদের হয়ে ৩৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। ঘরোয়া ওয়ান ডে খেলেছেন ১৫টি। মূলত বাঁ হাতি স্পিনার ছিলেন, যিনি কিছুটা ব্যাটও করতে পারতেন। ৩৫ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৯১। কিন্তু কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতা ভালই। ঘরোয়া ক্রিকেটে নানা দলের কোচিং করিয়েছেন। ডানকান ফ্লেচার কোচ থাকার সময় ধোনির ভারতের যখন ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় বিপর্যস্ত অবস্থা, তখন রবি শাস্ত্রীকে ডিরেক্টর করে আনা হয়। শাস্ত্রী নিয়ে আসেন সব ভারতীয় সহকারী কোচ। বোলিং দেখার জন্য আনেন বি অরুণকে, ব্যাটিংয়ে সঞ্জয় বাঙ্গার এবং ফিল্ডিংয়ের দায়িত্বে শ্রীধর।
এই ইংল্যান্ডেই চার বছর আগের সেই সফরে ১-৩ হারার পরে ভারতীয় কোচিং বিভাগে বদল ঘটে। ওয়ান ডে-তে শাস্ত্রী এবং তাঁর সহকারীরা দায়িত্ব নিলেন, ফিল্ডিংয়ের ভয়ঙ্কর অবস্থা। ফ্লেচারের আমলে তখন ফিল্ডিং কোচ ছিলেন ট্রেভর পেনি। সব চেয়ে শোচনীয় অবস্থা ছিল স্লিপ ক্যাচিংয়ের। টেস্ট সিরিজে ট্রেন্ট ব্রিজে প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ার পরে লর্ডসে জেতে ভারত। সাউদাম্পটনে যখন ধোনিরা আসছেন, সিরিজে তাঁরাই এগিয়ে ১-০। একেবারেই রানের মধ্যে নেই অধিনায়ক অ্যালেস্টেয়ার কুক। হ্যাম্পশায়ারের মাঠে ২০ পেরনোর আগেই তাঁর ক্যাচ পড়ে স্লিপে। কুক তার সম্পূর্ণ ফায়দা তুলে ৯৫ রান করে যান। ইংল্যান্ড তোলে ৫৬৯। সিরিজই ঘুরে যায় সেখান থেকে।
চার বছরে নানা আধুনিকতা নিয়ে আসা হয়েছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছে ভারতীয় ফিল্ডিং। সব চেয়ে বড় কারণ অবশ্যই ফিল্ডিং এবং ফিটনেসের উপরে জোর দেওয়া। পাশাপাশি স্লিপ ফিল্ডিংয়ের উপর জোর দেওয়ার তাগিদ চোখে পড়ার মতো। এ বারের ইংল্যান্ড সফরের জন্যই যেমন অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর। ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন কী ভাবে স্লিপ ফিল্ডিং আর ক্যাচিংয়ে উন্নতি ঘটানো যায়। সেই আলোচনাতেই প্রথম ক্যাচিং মেশিন নিয়ে আসার কথা ওঠে। তার পর মেশিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে নিজে কথা বলে বিশেষ ভাবে ক্যাচিং মেশিন বানাতে বলেন, যাতে ইংল্যান্ডের পরিবেশে যে ভাবে ক্যাচ আসে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাস্তবসম্মত ক্যাচিং অনুশীলন করা সম্ভব হয়। বিরাট কোহালি, কে এল রাহুলরা যেমন সুইং করা বলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করতে পারেন, তেমনই এই মেশিনের মাধ্যমে সুইং করা ক্যাচ ধরার অনুশীলন করতে পারছেন। এর সঙ্গে আরও একটা অভিনবত্ব নিয়ে এসেছেন শ্রীধর। স্লিপ ফিল্ডারদের সামনে একটা সাদা পরদা মতো টাঙিয়ে তার পিছন থেকে ক্যাচ দিচ্ছেন তিনি। এর ফলে ফিল্ডারদের সব সময় সজাগ থাকতে হচ্ছে। আগে থেকেও তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কোথা থেকে বল কোন দিকে আসবে। ক্যাচ নাও, ম্যাচ জেতো— পাল্টায়নি এখনও ক্রিকেটের সেই আদি মন্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy