Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
শিবির ভারত: বৃষ্টি ভেজা দিনে ইলিশের খোঁজে অধিনায়ক

কোহলিকে বিরাট সার্টিফিকেট শাস্ত্রীর

ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সন্ধে এখন। প্রায়ান্ধকার পুলে দীর্ঘদেহী তখনও সাঁতরে চলেছেন। সংস্কারের কারণে শোনা গেল গোটা দিন উপোস, বৃষ্টির দাপটে তাঁর টিমের ক্রিকেট যেমন। রিমোট কন্ট্রোলে থাকা ম্যাচের গোটা একটা দিন এ ভাবে নিষ্ক্রিয় কেটে গেল, খারাপ লাগছে না?

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
ফতুল্লা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০৪:০৯
Share: Save:

ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সন্ধে এখন। প্রায়ান্ধকার পুলে দীর্ঘদেহী তখনও সাঁতরে চলেছেন। সংস্কারের কারণে শোনা গেল গোটা দিন উপোস, বৃষ্টির দাপটে তাঁর টিমের ক্রিকেট যেমন।

রিমোট কন্ট্রোলে থাকা ম্যাচের গোটা একটা দিন এ ভাবে নিষ্ক্রিয় কেটে গেল, খারাপ লাগছে না?

“কিছু করার আছে কি? খারাপ শট খেললে, খারাপ বল করলে সেটা নিজের হাতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টি আর কার হাতে থাকে,” বৃহস্পতিবার টিম হোটেলের পুল সাইডে দাঁড়িয়ে কথাগুলো যখন আনন্দবাজারকে বলছিলেন রবি শাস্ত্রী, ট্রেডমার্ক গুরুগম্ভীর আওয়াজের নেপথ্য-স্বরে কেমন যেন আক্ষেপ মিশে থাকে। স্বাভাবিক। টেস্ট সিরিজ বলে তো কিছু নেই, একটা টেস্ট মোটে। তার প্রথম দিনে টিম প্রায় আড়াইশো তুলে রেখেছে। উইকেট একটাও যায়নি। সেখানে কি না দ্বিতীয় দিনে একটা বলও পড়ল না!

সন্ধের দিকে টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বলছিলেন, গত বছরও জুনে বাংলাদেশ সফরে এসে একই ভোগান্তি হয়েছে। তিনটে ওয়ান ডে-র একটা হয়েছিল, একটা অর্ধেক, আর একটা সম্পূর্ণ পণ্ড। পরোক্ষ অনুযোগ উঠছিল, বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা জেনেও জুনে বাংলাদেশ সফরের কী মানে? যেখানে ললাটলিখন অতি সহজেই পড়া যায় যে, সফরের অধিকাংশ দিন টিমকে হোটেলে বসেই কাটাতে হবে। অনুযোগ যুক্তিযুক্ত। কারণ ঢাকার বৃষ্টি-পর্ব আজই শেষ হয়ে গেল এমন নয়। আগামী তিনটে দিনও এ-পারের আকাশের ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হয়ে ওঠার গভীর আশঙ্কা আছে।

আর রুদ্রমূর্তির নমুনা চাই? সকাল সাড়ে সাতটায় ব্রেকফাস্ট শেষ করে ভারতীয় দল সেই যে শুনল বৃষ্টি চলছে এখন বেরোতে হবে না, পরের পাঁচ ঘণ্টাতেও আর বেরনো হল না। তার মধ্যে মাঠের আউটফিল্ডে জল জমেছে, স্টেডিয়ামের অস্থায়ী আচ্ছাদন ভেঙে পড়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত দুপুর দু’টো নাগাদ টিমকে শুনতে হয়েছে আজ আর সম্ভব নয়। একটা বলও নয়।

শোনা গেল, যার পর মুরলী বিজয়ের মেজাজ এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে সোজা নিজের রুমে চলে যান। এটারও কারণ আন্দাজ করা স্বাভাবিক। ৮৯-এ আরও একটা দিন আটকে থাকা। কিন্তু ‘রেনি ডে’-র ভারতীয় সংসারে বিজয়ের সম্ভাব্য সেঞ্চুরির পিছিয়ে যাওয়া নয়, চর্চার বিষয় ছিল দু’টো। প্রথমটা অবশ্যই বৃষ্টির দাপটে টেস্ট-ভাগ্যকে ঘিরে আশঙ্কা। দ্বিতীয়টা টিম ডিরেক্টর স্বয়ং।

এ দিন আচমকাই শাস্ত্রীকে নিয়ে ভারতীয় প্রচারমাধ্যমে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি স্থায়ী ভাবে ভারতের হেড কোচ হতে চলেছেন। বাংলাদেশ সফরের শেষেই ঘোষণাটা হয়ে যাবে। যা নিয়ে শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে, মনে হল না এ জাতীয় কোনও জল্পনায় এই মুর্হূতে বিশ্বাস করতে চাইছেন বলে। বলছিলেন, “আমার অ্যাসাইনমেন্ট এখন বাংলাদেশ ট্যুর। আমার লক্ষ্য হল, ভাল ভাবে সফরটা শেষ করা। ফিরে গিয়ে তার পর বোর্ডের সঙ্গে বসব। যদি ঠিকঠাক সব চলে, তার পর না হয় ভেবে দেখা যাবে।” বরং টিম ইন্ডিয়া ডিরেক্টর বর্তমানে নিজের দ্বৈত লক্ষ্য পরিষ্কার করে গেলেন। ভারত টেস্টে যতই সর্বময় কর্তৃত্ব করুক, বাংলাদেশকে কোনও ভাবে হালকা নেওয়া নয়। আর বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর যে যৌথ প্রক্রিয়াটা চালু হয়েছে, সেটাকে টেনে যাওয়া।

“বিরাট আর আমার কাজটা হল ড্রেসিংরুমকে ফুরফুরে রেখে যাওয়া। তার আবহাওয়ায় সততা রেখে যাওয়া। যে কাজে আমরা সফল। যত বেশি সময় আমরা একসঙ্গে কাটাব, তত ভাল হবে,” বলছিলেন শাস্ত্রী। সঙ্গে যোগ করলেন, “বিরাট অধিনায়ক হিসেবে এমনিতেই দুর্দান্ত। কর্তৃত্ব করতে পছন্দ করে। আগ্রাসী। যেটা ভাবে সেটা বলে। টিমমেটদের কাছে সত্‌ থাকে। ও যত সময় পাবে তত নিজের অধিনায়কত্বকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাবে।” আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? তিনি তো আর দিন তিনেক পরেই চলে আসছেন। দুই অধিনায়কের দর্শনে ফারাকটা কোথায়? “এটা ঠিক যে দু’জন দু’রকম। দু’জনের শক্তি দু’রকম। এমএস যে টিমটা পেয়েছিল সেটা তরুণ ছিল। বিরাটের টিমে অভিজ্ঞতা বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় এরা অনেক কিছু শিখে এসেছে। আর ফারাক খুঁজতে যাওয়া নয়। দেখা দরকার, দু’জনের দর্শনটা টিমে কী ভাবে কাজ করছে। টিম কতটা তাতে উপকৃত হচ্ছে।”

টিম ডিরেক্টরের তাঁর ক্যাপ্টেন্সি-দর্শনের ব্যাখ্যা, অফুরান প্রশংসা বিরাট কোহলির জানার কোনও উপায় ছিল না। তিনি তখন পাশেরই কাঁচ ঢাকা জিমে। দুপুর থেকে যাঁর নাকি একটা খেয়াল চেপেছিল। বৃষ্টির দিনে কেউ একটা পদ্মার ইলিশের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন সামনে। ব্যস, হোটেলের শেফকে ডেকে অধিনায়ক ও জনা পাঁচেক সতীর্থের ইলিশ-চর্চা শুরু। স্মোকড ইলিশ না হলে চলবে না, ঢাকায় এসে ওটা লাগবে। দু’টো বিকল্প সামনে। আজকের মতো কালও হোটেলে কাটাতে হলে কাঁটা সমেত চলবে। আর মাঠে হলে কাঁটা ছাড়া।

শুক্রবারের ফতুল্লায় বল পড়বে কি না জানা নেই। কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার ‘মত্‌স-পুরাণ’ বিলক্ষণ হচ্ছে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE