রাফায়েল নাদাল।
যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনাল রবিবার দেখতে দেখতে বছর খানেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
মায়োরকায়, রাফায়েল নাদাল ওর নতুন টেনিস অ্যাকাডেমিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বন্ধু রজার ফেডেরারকে। তার কয়েক মাস আগেই ফেডেরার বাকি মরসুম থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। নাদালও ভুগছিল চোট সমস্যায়। তাই শুনেছি সে দিন অ্যাকাডেমিতে তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাল্কা গা ঘামানোর মতো অবস্থাও ছিল না দু’জনের। ঠিক তার এক বছরের মধ্যে দেখুন সেই দু’জনের হাতেই আরও দুটো করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম!
রবিবার তো নাদাল ফাইনালে কেভিন অ্যান্ডারসনকে দাঁড়াতেই দিল না। ৬-৩, ৬-৩, ৬-৪ স্কোরলাইনেই সেটা আরও পরিষ্কার। চার বছর পরে একই মরসুমে ফের দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতল নাদাল। তবে নাদালের এই প্রত্যাবর্তনে আমি কিন্তু অবাক হইনি। প্রায় এক বছর ফিটনেস বাড়াতে প্রচুর পরিশ্রম করার পরে এ বছর গোড়ার দিকে ও সার্কিটে নতুন ভাবে ফিরে এসেছিল। আমি তো ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডন জিতবে নাদালই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেডেরার আর উইম্বলডনে জাইলস মুলারের বিরুদ্ধে নাদাল হেরে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে কিন্তু ও কোনও ভুল করেনি। জিনিয়াসরা এ রকমই হয়। জিনিয়াসরা এ রকমই চমকে দেয় প্রত্যাবর্তনে।
রবিবার ফাইনালের পরে অনেকে আমার কাছে জানতে চেয়েছে ১৬ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় আমি নাদালকে কোথায় রাখব?
নাদালকে আমি রাখব তিন নম্বরে। ফেডেরার আর রড লেভারের পরেই। পিট সাম্প্রাস (১৪), রয় এমার্সন (১২), বিয়র্ন বর্গ (১১)-এর মতো কিংবদন্তিদের কথা মাথায় রেখেই বলছি। নাদালকে এক কথায় বলা যায়, অলরাউন্ডার। যার হাতে বিগ সার্ভ নেই কিন্তু ওর সার্ভিস অনেকটা ফাস্ট বোলারের মতো। সুইং আছে, গতি আছে। দুটোকেই দারুণ ভাবে কাজে লাগায়। সঙ্গে ঘাতক ফোরহ্যান্ড, ভলি, রিটার্ন আর অবিরাম র্যালি করে যাওয়ার ক্ষমতা ওর প্রধান অস্ত্র। অ্যান্ডারসনের মতো ‘এস’ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে ওর স্ট্র্যাটেছি ছিল স্রেফ র্যালি করে যাওয়া। অ্যান্ডারসনকে উইনার মারতে না দিয়ে হতাশ করে ভুল করতে বাধ্য করা। পরিকল্পনাটা দারুণ ভাবে প্রয়োগ করেও দেখাল নাদাল।
এক সময় বলেছিলাম, ফেডেরার কোনও দিন লেভারকে টপকাতে পারবে না। আমার সর্বসেরাদের তালিকায় লেভারই এক নম্বরে থাকবে। কিন্তু ফেডেরার আমায় ভুল প্রমাণ করেছে। এ বছর অবিশ্বাস্য ভাবে ফিরে এসে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডন জিতেছে। জানি আবার আমি নিজের কথা গিলতে বাধ্য হতে পারি। কারণ, নাদাল যদি এই ফর্ম আর ফিটনেস ধরে রাখতে পারে তা হলে লেভারকে সরিয়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ও দু’নম্বরে উঠে আসবে। তা ছাড়া ওর এখন বয়স ৩১। ফেডেরারের ৩৬। তাই এখনও ২-৩ বছর খেলার মতো ফিটনেস নাদালের থাকবে ধরে নেওয়া যায়। সেটা হলে ফেডেরারের ১৯টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ডও নাদাল ভেঙে দেবে।
নাদালের যে রকম খেলার ধরন, মানে ও প্রচুর শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে খেলে বলে, চোট লাগার প্রবণতাও বেশি থাকে। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিটনেস নিয়ে সমস্যা বেড়েছে নাদালের। কখনও হাঁটু, কখনও কবজি, কখনও কাঁধের চোটে ভুগেছে। একটা সময় তো ওর বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১২ নম্বরে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে এই দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের পিছনে প্রচুর অবদান ওর কাকা টোনি আর নতুন কোচ প্রাক্তন বিশ্বসেরা কার্লোস ময়া-র।
টেনিস এমন একটা খেলা যেখানে বিশ্রামের সুযোগ কম। একটা গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দু’সপ্তাহে ৭-৮টা ম্যাচ খেলতে হয়। সেটা মুখের কথা নয়। ৩৬-এর ফেডেরারকে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দেখে সেটা এ বার তা কিছুটা টের পাওয়া গিয়েছে। দেল পোত্রোর বিরুদ্ধে চতুর্থ সেটটা তো ক্লান্তির জন্য প্রায় ছেড়েই দিল ফেডেরার।
আমার তো মনে হচ্ছে ২০১৮ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে নাদালই ফেভারিট। শুধু তাই নয়, ফরাসি ওপেন মানে ওর প্রিয় ক্লে-কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে আগামী মরসুমেই নাদাল ১৮ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামটাও তুলে ফেলবে ট্রফি ক্যাবিনেটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy