প্র্যাকটিসে নতুন আগ্রাসন ধোনির। ছবি: দেবাশিস সেন
প্রায় পাগলের মতো ছুটোছুটি করছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। দেশজ ক্রিকেট তাঁকে শীতলতম চরিত্র বলে জানে, বোঝে। প্রতিক্রিয়াশীল কোনও ব্যাপারকে খুব পাত্তা দেন না। দিলেও বাড়তি টগবগে দেখানোটা ধাতে নেই। রিল্যাক্সড, অনাবেগী প্রতিমূর্তির তিনি চলমান বিজ্ঞাপন বরাবর। অথচ সেই একই লোক কাঠফাটা রোদে টিমের ফুটবল সেশনে ধবল কুলকার্নিকে বডি ফেইন্টে ফেলে দিচ্ছেন। ভুবনেশ্বরকে ড্রিবল করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। নেটে ঢুকছেন দু’বার। দীর্ঘক্ষণ থ্রো ডাউন নিচ্ছেন। স্পিনারকে টেনে টেনে মারছেন। টিম ডিরেক্টর ও দুই জাতীয় নির্বাচকের সঙ্গে নেট চলাকালীন ঢুকে যাচ্ছেন আলোচনায়।
এত রগড়ানি, এমন অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের কারণ কী ক্যাপ্টেন কুলের? ‘প্রতিশোধে’র পূর্বাভাস?
গান চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ জোরে। তেতে থাকা বালির উপর পাওয়ার ট্রেনিং করে চলেছেন দু’জন। ভারতের কেউ নন, বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর রহমান। ইয়ার্কি-ঠাট্টা, হাসি সবই চলছে।
টিমটা সত্যিই ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে সাত তো? একটা ম্যাচ জিতে এত কিছু?
রোহিত শর্মা মেনে নিচ্ছেন, সম্ভব। মাশরফি মর্তুজার টিমের পক্ষে ভারতের জন্য আরও একটা ‘শক থেরাপি’ আমদানি করা খুবই সম্ভব। নিজের টিমের আগ্রাসনে ঘাটতি দেখছেন মরাঠি। দেখছেন বোলারদের লাইন লেংথেও। বলছেন, “ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা ক্রিকেটটা বার করে আনতে হবে। আরও আগ্রাসী হতে হবে।”
কিছু খচখচ করছে নাকি রোহিত গুরুনাথ শর্মার?
অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড সফরে গেলে নাকি ওটা বার হয়। প্র্যাকটিস উইকেটে তখন গ্র্যানাইট ফেলে আলাদা মহড়ার সেশন বসে। লাভ হল, বল পাথরে পড়লে লাফিয়ে মুখের কাছে উঠে আসবে। কাট-পুল ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য নাকি আদর্শ। কিন্তু মীরপুর উইকেটের জন্য বাংলাদেশ এটা প্র্যাকটিসে আমদানি করল কেন?
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের নতুন পিচে কি তা হলে বল মুখের কাছে আসছে?
জীবনে কখনও একটা দিন, একটা মুহূর্ত, একটা শিক্ষা অনেক কিছু পাল্টে দিয়ে যায়। কেউ শৈশবে পাওয়া এক ধাক্কায় সময়ের আগে পৌঁছে যায় যৌবনের পরিণতিবোধে। কেউ হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে আচমকা এক দিন খুঁজে নেয় পাল্টা মারের বিশল্যকরণী। কাউকে কাউকে আবার স্রেফ একটা জয় বদলে দেয়। আপন পৃথিবীতে বহু দিন মর্যাদায় নিম্নবিত্ত থাকতে থাকতে একটা দিন সে উচ্চবিত্তের শ্রেণিতে উত্তরণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
টিম বাংলাদেশের কথা হচ্ছে।
ভারত বনাম বাংলাদেশের সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারকে শেষ কবে এমন মেজাজ গরম করিয়ে দেওয়ার মতো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, বলা মুশকিল। রোহিত শর্মা আপনারা কি চাপটা বুঝতে পারছেন? প্রথম ম্যাচে কি আপনারা ঠিকমতো প্রস্তুতি নিয়ে নামেননি? তিনশো অত্যাধিক চাপে ফেলে দিয়েছিল? এমএস ধোনি আর মুস্তাফিজুরের মধ্যে যেটা হল, সেটা নিয়ে কী বলবেন? বাংলাদেশ আবারও আপনাদের স্তব্ধ করে দিতে পারে বলে মনে হয়? মুম্বইকর মেজাজ শান্ত রাখতে জানেন, পাল্টা উত্তেজক কিছু তাই বেরোল না। প্রতিপক্ষকে সম্মান দিয়ে নিজেদের শক্তিকে বুঝিয়ে চলে গেলেন। রেকর্ডবুক মনে করিয়ে শুনিয়ে গেলেন যে, তিনশো বা তার বেশি সবচেয়ে সফল ভাবে তাড়া করেছে যে টিম, তার নাম ভারত। আর ভারত কাউকে নিয়ে চাপে থাকে না। কিন্তু তার পরেও তো বাস্তবকে উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
যে জায়গায় আজ বাংলাদেশের থাকার কথা ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে ভারত।
যে জায়গায় আজ ভারতের দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।
গিলতে কষ্ট হলেও সত্যি যে, রবিবাসরীয় মীরপুর যুদ্ধ ভারতের হেরে যাওয়া মানে, সিরিজকে পদ্মায় ভাসিয়ে দেশে ফিরে আসা। বৃষ্টি টেস্ট জয় আটকে দিয়েছে। ওয়ান ডে সিরিজে গণ্ডগোল কিছু হয়ে গেলে সমালোচনার দাঁতনখ প্রখর ভাবে কিন্তু বেরোতে শুরু করবে। এমনিতেই সময় বিশেষ ভাল যাচ্ছে না। শর্ট বলের আলাদা অনুশীলন এ দিন করল ভারত। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আবার কাঁধে চোট পেলেন বিরাট কোহলি। কিছুক্ষণ আইসপ্যাক দিয়ে বসে থাকার পর আবার নামতে দেখা গেল বিরাটকে। রাত পর্যন্ত যা খবর, তাঁর নামা নিয়ে তেমন সন্দেহ নেই। কিন্তু মীরপুর উইকেটের বর্ণিত চরিত্র সত্যি হলে, তার থেকে কতটা ফায়দা তোলা যাবে, সন্দেহ আছে।
ভারত নাকি এক পেসারেও যেতে পারে!
এমনিতেই ধোনি বনাম মুস্তাফিজুর পর্ব ম্যাচ রেফারির ঘরে মিটে গেলেও আমজনতার দরবারে মেটেনি। সেখানে ভারত অধিনায়ক এখনও দোষী। এ-পারের সাংবাদিকরাও ভারতের কাউকে দেখলে জিজ্ঞেস করে বসছেন, ইন্ডিয়া ধোনির এমন আচরণ নিয়ে কী বলছে? ঘনিষ্ঠমহলে ভারত অধিনায়ক শোনা গেল, জরিমানার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও উষ্মা দেখিয়েছেন অনিচ্ছাকৃত কাণ্ডেও এ ভাবে তাঁকে টেনে নামানো নিয়ে। অর্থাৎ, অহেতুক চাপের বাতাবরণ একটা আছে। সঙ্গে আবার আবহের চাপ। রমজান, ইফতার, জয় সব মিলেমিশে পদ্মাপারের মননের নির্যাস এখন খুব সহজ। যে ক’টা ম্যাচই আর থাকুক, সিরিজ আমরাই জিতছি!
যুক্তি বলে, যা আবেগ বশীভূত ধারণা। ধারে-ভারে, কাগজ-কলমে র্যাঙ্কিংয়ে ধোনিরা এখনও এগিয়ে। শক্তি অনুযায়ী খেললে, আবেগকে ছিঁড়ে দু’টুকরো করে দিতে তারা এখনও পারে। শোনা গেল, টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী এ দিন ব্রেকফাস্ট টেবলে নাকি বলে ফেলেছেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যা-ই করে থাকুক, বাড়তি সমীহ আর করা যাবে না। প্রথম ম্যাচে যা করতে গিয়ে ডুবতে হয়েছে। ভারতের নিজস্ব ক্রিকেট-ব্র্যান্ডকে বার করার এ বার সময় হয়েছে। যেখানে প্রথম বল থেকে প্রতিপক্ষের মাথায় চড়ে বসার লক্ষ্য থাকবে।
ভাল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে তো প্রশ্ন থাকছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ব্যাটিং অর্ডারে কেন আরও উপরে আসছেন না, উত্তর নেই। শাস্ত্রী নিজেও তাঁকে কিছু এ নিয়ে বলছেন না। আর পিচ চরিত্র নিয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিককুলের বক্তব্য যদি সত্যি হয়, তা হলে স্ট্র্যাটেজিটাও অদ্ভুত। মীরপুরের এই পাঁচ নম্বর পিচ নাকি পাকিস্তানকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিল। বলা হচ্ছে এর গতি গত বৃহস্পতিবারেরটার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ চার পেসারে যাচ্ছেই যাচ্ছে।
ভারত সেখানে এক বা দেড়। দু’টো কম্বিনেশন শোনা গেল। উমেশ যাদব আর মোহিত শর্মার নামার সম্ভাবনা নাকি কম। তাঁদের বদলিতে দু’টো বিকল্প। অম্বাতি রায়ুডু প্লাস অক্ষর পটেল। অথবা স্টুয়ার্ট বিনি প্লাস অক্ষর পটেল। ভারত মনে করছে, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নাকি টেকনিকের তোয়াক্কা না করে উত্তেজক ক্রিকেটে চলে যাচ্ছে। ফাস্ট বোলার পেলেই এমন তেড়ে চালাচ্ছে যে লাগলেই বাউন্ডারি! স্পিনার বেশি থাকলে সেটা হবে না। প্রমাণ গত ম্যাচে রায়নার দশ ওভার। তা ছাড়া উমেশ-মোহিত প্রথম ম্যাচে মনে রাখার মতো কিছু করেছেন, এমনও নয়। স্ট্র্যাটেজি খেটে গেলে কিছু বলার নেই। কিন্তু ফেল করলে?
পদ্মাপারের সূক্ষ্ম বিদ্রূপ তখন কিন্তু কর্ণগহ্বরের বারোটা বাজিয়ে দেবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy