Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘রত্ন’ নিয়ে প্রসূন বললেন, অর্জুনের চেয়েও বড় সম্মান

প্রতি বছর ২৯ জুলাই যা হয়, এ বারও ব্যতিক্রম হল না। ‘মোহনবাগান দিবস’ এখন পাড়ার দুর্গাপুজোর মতো হয়ে গিয়েছে।  আবেগ এবং ঐতিহ্য আছে, তবে তা  উদ্বেলতায় ডুবে যায় না।

সম্মান: মোহনবাগান রত্ন প্রসূন। পাশে সত্যজিৎ। নিজস্ব চিত্র

সম্মান: মোহনবাগান রত্ন প্রসূন। পাশে সত্যজিৎ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৩
Share: Save:

সবুজ-মেরুন আলোয় সাজানো হয়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন তাঁবুর প্রধান গেট। বিশাল প্যান্ডেলে ঝুলছিল থোকা থোকা জুঁইয়ের মালা। গেটে ঢোকার মুখে বাজছিল লাইভ সানাই। গ্যালারিতে তুবড়ি, মশালও জ্বলল। মঞ্চে ১৯১১-র ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড জয়ের অমর একাদশের ছবি। মন্ত্রী থেকে চিত্রতারকা, কিংবদন্তি ফুটবলার থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব— উপস্থিত সকলেই।

প্রতি বছর ২৯ জুলাই যা হয়, এ বারও ব্যতিক্রম হল না। ‘মোহনবাগান দিবস’ এখন পাড়ার দুর্গাপুজোর মতো হয়ে গিয়েছে। আবেগ এবং ঐতিহ্য আছে, তবে তা উদ্বেলতায় ডুবে যায় না। তর্পণের মতো তা নিয়ম করে পালন করেন ক্লাবের সভ্য-সমর্থকরা।

মঙ্গলবার মোহনবাগান রত্ন, জীবনকৃতি-সহ নানা পুরস্কার দেওয়া হল ক্রীড়াবিদদের। কর্তারা চেষ্টা করেছিলেন, অন্য মোড়কে তা উপস্থাপিত করতে। প্রত্যেক প্রাপক পুরস্কার নেওয়ার সময় বড় পর্দায় ভেসে উঠছিল তাঁর জীবনের কথা। কীভাবে তিনি গৌরবান্বিত করেছিলেন এই ক্লাবকে।

সেটা দেখেই সম্ভবত ‘রত্ন’ গলায় ঝুলিয়ে ফুটবলার-সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগে ভেসে গেলেন। বলে দিলেন, ‘‘অর্জুন পুরস্কারের চেয়েও এটা আমার কাছে বেশি সম্মানের। কারণ মোহনবাগান জার্সি না পরলে আমাকে কেউ চিনত না। ভারতের জার্সি গায়ে দিতে পারতাম না। সাধারণ স্নাতক আমি। এখানে ফুটবল না খেললে চাকরিও পেতাম না। এই ‘রত্ন’ কবে পাব, তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই পুরস্কার আমার হৃদপিন্ড হয়ে থাকবে।’’ প্রসূন যখন এসব বলছেন, তখন মঞ্চের সামনে বসে কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী, সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক, গৌতম সরকার, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়রা। প্রথা ভেঙে এ বার দু’জনকে ‘মোহনবাগান রত্ন’ –এর জন্য বাছা হয়েছিল। প্রসূন এলেও আসতে পারেননি দু’বারের অলিম্পিকজয়ী হকি তারকা কেশব দত্ত। ৯২ বছর বয়সী কেশববাবুর বাড়িতে গিয়ে তা তুলে দিয়ে এসেছিলেন ক্লাব কর্তারা। এক কিংবদন্তি না এলেও আর এক জীবন্ত কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী এসেছিলেন মোহনবাগানের আজীবন সদস্য পদ দিতে। তবে তিনি মঞ্চে উঠতে পারেননি। সস্ত্রীক অনুষ্ঠান স্থলে ঢোকার মুখে হঠাৎ-ই হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যান তিরাশি বছর বয়সী চুনী। দৌড়ে এসে তাঁকে তোলেন অনুজ সুভাষ-সুব্রত-গৌতম-সত্যজিৎরা। তাঁকে মঞ্চ থেকে নেমে এসে কার্ড তুলে দেন কর্তারা। সদস্য কার্ড দেওয়া হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবশঙ্কর হালদারকে। অনুষ্ঠান শেষের মুখে আসেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। এ দিন সেই ক্লাব থেকে আজীবন সদস্যের কার্ড পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘আমি বাবার হাত ধরে মোহনবাগানের খেলা দেখতে আসতাম। আমি ক্রিকেট প্রশাসক। ক্রিকেট চালানো সহজ। কিন্তু ফুটবল ক্লাব চালানো কঠিন। যে ভাবে বর্তমান সচিব মোহনবাগানকে সাহায্য করেছেন, সেটা বিশাল ব্যাপার। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আইএসএল খেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করব ওরা সফল হবে।’’

জীবনকৃতি পুরস্কার পান ভারতীয় ফুটবলের ষাটের দশকের তারকা ফুটবলার অশোক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গলাতেও সম্মান পাওয়ার পর আবেগ। ‘‘শৈলেন মান্না বলেছিলেন এখানে ভাল খেললে দেশের হয়ে খেলতে পারবি,’’ বলার সময় তাঁর চোখে জল। মহম্মদ শামি আসেননি। এসেছিলেন মনোজ তিওয়ারি-সহ স্থানীয় ক্রিকেটে জোড়া ট্রফি জয়ী পুরো ক্রিকেট দল। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার নিতে ওঠার সময় অরিজিৎ বাগুইয়ের জন্য হাতাতালির ঝড় উঠল। যা দেখে মনে হল, ক্লাব ইতিহাসের প্রথম স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা এবং নতুন চার বিদেশি হাজির থাকলে অনুষ্ঠান বর্ণময় হত হয়তো!

অনুষ্ঠানে ক্লাব ভোটের ঝামেলার কথা বারবার তুলে তাল কাটলেন এক কর্তা। আর মঞ্চে কলকাতার মেয়র পারিষদ চেয়ার পেলেও জায়গা হয়নি সুব্রত ভট্টাচার্যের। ‘ঘরের ছেলে’ দর্শক হয়েই বাড়ি ফিরলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Football Prasun Banerjee Mohun Bagan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy