মঙ্গলবার বিকেলে নিজেদের টিম রুমে বসা ইউসুফ পাঠান। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য
তিনি এখন ব্যাটে যেমন, কথাতেও তেমন। নাইটদের ম্যাচ উইনার ইউসুফ পাঠান যেন সব কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছেন বিগ ব্যাট দিয়ে। ‘মরো অথবা বাঁচো’ শীর্ষক এলিমিনেটরের আগের বিকেলে তিনি একান্তে এবিপি-র মুখোমুখি।
প্রশ্ন: কোথাকার বিরিয়ানি আপনার সবচেয়ে প্রিয়? কলকাতা, হায়দরাবাদ না দিল্লি?
ইউসুফ: কলকাতায় আরসালানের বিরিয়ানি ভাল। কিন্তু আমার সবচেয়ে মনমতো হল আমার নিজের বাড়িতে তৈরি বিরিয়ানি। ওর মতো স্বাদ কিছুতে পাই না।
প্র: দিল্লিতে তা হলে খুঁজে খুঁজে খান কী? না কি কিছুই না?
ইউসুফ: দিল্লিতে আমার প্রিয় হল কাবাব। নানা ধরনের খুব সুস্বাদু কাবাব পাওয়া যায় এখানে।
প্র: কোটলা পিচ কি আপনার কাছে কাবাবের মতোই সুস্বাদু?
ইউসুফ: ও ভাবে আলাদা কিছু বলতে পারব না। নকআউট ম্যাচে কী জানেন, পিচ-টিচ কিছু নয়। আসল হল আপনার টিম প্রেশার কতটা নিতে পারল? দুটো টিমই প্রচণ্ড চাপে থাকবে। যারা কালকে চাপটা ম্যানেজ করতে পারবে, তারা জিতবে।
প্র: ইডেনে আপনারা কুলদীপকে নামিয়ে বিশাল গ্যাম্বল করেছিলেন।
ইউসুফ: হ্যাঁ, বিরাট বড়। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল। ফাটকা ছাড়া উপায় ছিল না। তা বলে কুলদীপ যে কাল প্রথম এগারোয় থাকবেই, নিশ্চিত বলা যায় না। হয়তো থাকবে। কিন্তু পিচ দেখে তবেই না শেষ ডিসিশন। এক-একটা ম্যাচে এক-এক রকম স্ট্র্যাটেজি চাই। বিশেষ করে বিপক্ষ যদি রিপিট হয়।
প্র: আপনার ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি এ বার অদ্ভুত অন্য রকম। টানা কয়েকটা বছর মনে হত দর্শকদের বায়নাক্কা মেটানোটাই আপনার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এ বার সেটা একেবারেই নেই। নিজের টার্মসে ব্যাট করছেন। সেট হতে সময় নিচ্ছেন। তার পর চালাচ্ছেন।
ইউসুফ: তার কারণ আমাকে দশ-বারো ওভার খেলতে দেওয়া হচ্ছে। আগে আমাকে বলে দেওয়া হত চার ওভারে লণ্ডভণ্ড করে দাও। আমার তখন শুরু থেকে চালানো ছাড়া উপায় থাকত না। এখন কালিস কোচ হওয়ার পর অনেক কিছু বদলেছে।
প্র: যেমন?
ইউসুফ: যেমন আমাকে ওই মেন্টাল স্পেসটা দেওয়া হচ্ছে যে, ইউসুফ সময় নাও সেট হওয়ার। এখন আমি জানি যে, প্রথম চার ওভারে কয়েকটা যদি ডট বলও খেলি, ডাগআউট থেকে আমাকে সেই লাইসেন্স দেওয়া রয়েছে। পরের ছ’ওভার আমি মারতে পারব। সেই অধিকারটা আমার হাতে রয়েছে। ক্রিকেট দিনের শেষে মনের খেলা। মন ঠিক তো আপনার খেলাও ঠিক।
প্র: নাইট টিমে কেউ কেউ মাইক হর্নকে খুব কৃতিত্ব দিচ্ছেন। উনি নাকি পজিটিভ চিন্তা এনেছেন।
ইউসুফ: হর্নের অভিজ্ঞতাগুলো শুনলে আসলে একটা অদ্ভুত উপলব্ধি হয়। মনে হতে থাকে, উনি যে পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গল প্রাকৃতিক বাধাবন্ধর কথা বলছেন, সেগুলো তো আমরাও জীবনে কত পেরিয়েছি। উনি কত শ্বাপদসঙ্কুল সমুদ্রে সাঁতরেছেন। কিন্তু সেগুলো তো আমরাও ক্রিকেট জীবনে কত সাঁতরেছি। হর্নের অভিজ্ঞতাগুলো শুনলে নিজের অতীতই মনে পড়ে যায়। মনে অসম্ভব জোর আসে।
প্র: আপনার টেকনিক্যাল উন্নতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলছে, এ বার পুলের ওপর ইউসুফের নিয়ন্ত্রণ অনেক ভাল। পুল নিয়ে বাড়তি খেটেছেন?
ইউসুফ: কালিস এখানেও খুব হেল্প করেছেন। ম্যাচে যা দেখছেন সেটা অনুশীলনে কেটে কেটে করানো হয়েছে।
প্র: নাইট সমর্থকেরা মাঝে এক-আধ বছর আপনার সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই বছর আবার তাঁরা চাঙ্গা। পুণে ম্যাচে অশ্বিনকে আপনি দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও যে ভাবে মারলেন, যেন পুরনো ইউসুফ।
ইউসুফ: আমরা চাপে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি নিজেকে বলি নেটে সবাইকে এত মারছি। আমাদের সেরা বোলারদের পেটাচ্ছি। তো অশ্বিনকে মারতে পারব না কেন? কনফিডেন্সটাই আসল। আমার যেন মনে হচ্ছে আইপিএলে প্রথম বছর শেন ওয়ার্নের সঙ্গে খেলার সময় যে মেন্টাল স্পেসে ছিলাম, আবার সেই জোনটায় ফেরত গেছি।
প্র: শাহরুখ খান মধ্যিখানে আপনার খারাপ সময় পাশে থেকেছেন। ওঁর জীবনকাহিনি জানেন?
ইউসুফ: জানি আর সেগুলো থেকেই উদ্বুদ্ধ হই। উনি নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ভাবা যায় না একটা জেনারেশনে একটা মানুষ কোথা থেকে কোথায় উঠে গেল স্রেফ লড়াই করে। কী স্ট্রাগল করেছে, সব গল্প শুনেছি।
প্র: দু’একটা বলুন না।
ইউসুফ: বলছি... নাহ, একটাও মনে করতে পারছি না। একটা সত্যি কথা বলব। আমি না কালকের ফ্লাইট আতঙ্ক থেকে এখনও মুক্তি পাইনি। কিছু ভাবতে গেলেই অন্ধকার ফ্লাইটটা মনে পড়ছে। উরি বাবা।
প্র: ওকে। এটুকু তো বলুন, সচিন আর কোহালি, নিরন্তর এই আলোচনা আপনি কী চোখে দেখেন?
ইউসুফ: আমার মনে হয় বিরাট যতই অসামান্য খেলুক, সচিন সচিনই। সচিন-ক্লাস একটা আলাদা ব্যাপার। আমার মতে বিরাটকে নিয়ে ধন্য ধন্য হোক না। ওই লোকটাকে তুলনা করছ কেন? ওকে ছেড়ে দাও। ওই লোকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে, বোঝো না কেন?
প্র: বাবা, তাই?
ইউসুফ: একদম তাই। সচিনকে ওঁর নিজের গ্রহে সম্মানে থাকতে দাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy