দাপট: ফাইনালে উঠে দর্শকদের অভিবাদন সরফরাজদের। ছবি: গেটি ইমেজেস
আইপিএলের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে যাকে নাকি অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের উত্তরসূরি ভাবা হয়, সেই বেন স্টোকস ৬৪ বলে ৩৪ রান তুলল! তাও আবার কোনও বাউন্ডারি ছাড়াই! ভাবা যায়?
স্টোকসের এই অসহায় অবস্থাই বুধবার কার্ডিফে ইংরেজ ব্যাটিংয়ের দুরবস্থার ছবিটা তুলে ধরল। ২৭ ওভারে ১২৮-২ থেকে ২১১ রানে অল আউট হওয়ার পরেই তো ইংল্যান্ডের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। পাকিস্তান মাত্র ৩৭.১ ওভারেই রানটা তুলে নেয়। তাও মাত্র দু’উইকেট হারিয়ে।
নিখুঁত বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের দাপট। এই দুইয়ের সামনেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে কার্যত আত্মসমর্পণ করতে হল। তাও পিঠের চোটের জন্য মহম্মদ আমিরকে ছাড়াই নামতে হয় পাকিস্তানকে। তেমন উইকেট না পেলেও ব্যাটসম্যানদের চাপে তো রাখছিলই। কিন্তু তার জায়গায় যে বাঁ-হাতি পেসার রুমান রইস দলে এল, সেও কম যায় না। মনেই হল না, আমির দলের বাইরে। উল্টে ওকে চাপে ফেলে দিল করাচির ২৫ বছরের ছেলেটা। এদের দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, পাকিস্তানে কি পেসার তৈরির কারখানা আছে? টুর্নামেন্টের শুরুতে বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই বলেছিল, পাকিস্তানের কোনও সম্ভাবনাই নেই শেষ চারে ওঠার। অথচ ওরাই ফাইনালে চলে গেল!
আসলে ভারতের কাছে হারটাই ওদের চোখ খুলে দেয়। ওই ম্যাচে জুনেইদ খানকে না খেলানোটা বড় ভুল হয়েছিল। স্ট্র্যাটেজিও ঠিক হয়নি। সবাই ভেবেছিল, ওই হারের পরে ওরা ভেঙে পড়বে। কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, বরং মানসিকতা বদলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারেরা ঝাঁপিয়ে পড়ল বিপক্ষের ওপর। পাশাপাশি, স্ট্র্যাটেজিগত সিদ্ধান্তগুলোও সব ঠিক নিল। যেমন, বুধবার পেসার ফইম আশরাফকে বসিয়ে লেগ স্পিনার শাদাব খান-কে খেলানো। তার আগে দলে নিয়ে এসেছিল ওপেনার ফখর জমান-কে। যে ছেলেটা ওপেনে নেমে শুরুতে আক্রমণ করল ইংল্যান্ডের বোলারদের।
টেকনিকে যে প্রচুর বদল হয়েছে, তা কিন্তু নয়। পুরোটাই মানসিকতায় বদল আর তা থেকেই ছন্দে ফেরা।
পাক বোলাররা নিখুঁত লাইন ও লেংথ বজায় রেখে যাওয়ায় বুধবার ইংরেজ টপ অর্ডার পুরো ফ্লপ করল। শুধু টপ অর্ডার কেন, মিডল অর্ডারও। না হলে স্টোকসের মতো ব্যাটসম্যানের ওই অবস্থা হয়? আরও অদ্ভুত ব্যাপার, দলের অধিনায়ক অইন মর্গ্যান ওই সময় ভুল শট খেলে আউট! আসলে পাক বোলাররা যে রকম চাপে ফেলে দিয়েছিল ওদের, তাতেই ওরা অদ্ভুত সব পরপর ভুল করে বসে। পাক বোলারদের কারও ইকনমি রেটই এ দিন পাঁচও ছোঁয়নি। ইংল্যান্ডের ইনিংসটা দেখতে দেখতে সন্দেহ হচ্ছিল, ওয়ান ডে, না টেস্ট ক্রিকেট দেখছি।
বোলিংই যে ওদের সেরা শক্তি, এই সত্যিটা অনেক দিন পর ফের উঠে এল পাকিস্তানের ক্রিকেটে। বৈচিত্রে ভরা বোলিং। যেখানে হাসান আলিই সেরা। শুধু পাকিস্তানের নয়, এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা পেসার এই হাসান। স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিং। মর্গ্যানদের খেলার জায়গাই দেয়নি। রাউন্ড দ্য উইকেট বল করার সময়ও স্টাম্পের একেবারে গা ঘেঁষে বল করছিল। মাঝে মাঝে সুইং করাচ্ছিল। মাঝে একবার পিঠে ব্যথা অনুভব করে ও। ফিজিও এসে পরিচর্যা করে যাওয়ার পরেও দেখলাম বলের গতি একই রকম আছে। নিখুঁত লাইন-লেংথ। কোনও পরীক্ষায় না গিয়ে সারাক্ষণ একই জায়গায় বল রেখে গেল। মাঝে মাঝে গতি পরিবর্তন করছিল। ডিপার ইন সুইং করাচ্ছিল আর ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা রান না পেয়ে ছটফট করছিল। এক মুহূর্তের জন্যও ম্যাচে ঢুকতে দেয়নি ওদের।
টার্গেট কম হলে ব্যাটিংয়ে চাপটা অনেক কমে যায়। আর তাতেই ফখর-আজহার জুটির ইনিংসের ভিতটা গড়তে সুবিধে হয়। ইংরেজ বোলারদের আত্মবিশ্বাসও তলানিতে এসে ঠেকেছিল। ফখর টি-টোয়েন্টি যুগের আদর্শ ব্যাটসম্যান। ফাইনালে মুখোমুখি হলে ওর বিরুদ্ধে কিন্তু অশ্বিনকে কাজে লাগাতে হবে।
তার আগে ভারতকে অবশ্য জিততে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy