মহম্মদ আমেরের জীবনে এখন অন্যতম মোটিভেটরের নাম কী?
আশ্চর্য শোনালেও তিনি একজন ভারতীয়। তিনি— বিরাট কোহলি!
মেগা প্রত্যাবর্তনের পাকিস্তানি মহানায়ক মনে করেন, কোহলির সপ্রশংস মন্তব্য তাঁকে আরও ভাল খেলতে সাহায্য করবে। ‘‘বিরাট অসাধারণ প্লেয়ার। ওর ভাল ভাল কথাগুলো আমাকে আরও ভাল খেলতে সাহায্য করবে,’’ ভারত ম্যাচ খেলে উঠে এবিপি-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন আমের। ‘‘কোহলিকে বল করে আমার অসম্ভব ভাল লেগেছে। আর কোহলি আবার প্রমাণ করেছে যে, ও একজন বিশ্বমানের প্লেয়ার। সাধারণ ক্রিকেটার হলে ওই তিন ওভারে তিন উইকেট চলে যাওয়ার চাপ নিতেই পারত না। কিন্তু কোহলি ও সবে কাবু হওয়ার ছেলে নয়,’’ ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের দিকে পাল্টা শংসাপত্র ছুড়ে দিয়েছেন আমের।
মীরপুরে শনিবার রাতের একটা মারণ-স্পেল এই মুহূর্তে ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। আগে তো বটেই, বিরাট ম্যাচের মধ্যেই আমেরকে তাঁর অসামান্য স্পেলের প্রশংসা করেছিলেন। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— ম্যাচ শেষে তাঁকেও আমের-প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত দেখিয়েছে। তরুণ পাক পেসারের মনে হচ্ছে যা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করবে। আরও উদ্দীপ্ত দকরবে। ‘‘আমার কাজ হল ক্রিকেটটা খেলা। আর কিংবদন্তিরা অতীতেও আমার খেলার প্রশংসা করেছেন। এঁরা প্রশংসা করলে আমার কাছে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। মনে হয়, আমাকে এই প্রশংসার সম্মান করতে হবে।’’
মহানাটকীয় মনে হবে। গড়াপেটার অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত এক ক্রিকেটার। জীবনের পাঁচটা বছর যাঁর ক্রিকেট থেকে হারিয়ে গিয়েছে। ফিরে এসেও যাঁকে ভুগতে হয়েছে নিরন্তর যন্ত্রণায় কারণ সতীর্থদের কেউ কেউ তো এমনও বলে দিয়েছিলেন যে, ও খেললে আমরা নেই। পাকিস্তান পেসার মুখে অতীতের যন্ত্রণার দিনগুলোকে তুলে আনেননি। কিন্তু বুঝেছিলেন যে, এই একটা ম্যাচ তাঁকে গলির অন্ধকার থেকে সম্মানের রাজপথে ফিরিয়ে আনতে পারে।
আনলও। আনল মাত্র দু’ওভারের আগুনে বোলিং, তিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের উইকেট।
‘‘শুধু একটাই খারাপ লাগছে যে, আমরা বেশি রান করতে পারলাম না। ১১০ মতো তুলতে পারলে ম্যাচ আমাদের হতে পারত। কিন্তু আমি নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি কারণ তাতে অন্তত একপেশে হারটা আটকানো গিয়েছে,’’ বলছিলেন আমের। ম্যাচকে একপেশে হওয়া থেকে শুধু আটকানো নয়, আমের প্রথম দিকে যা শুরু করেছিলেন তাতে বিরাট না সামলালে ভারত হেরেও যেতে পারত।
কী প্ল্যানিং করেছিলেন? ‘‘কোনও প্ল্যানই ছিল না। ভারত-পাক ম্যাচে কোনও প্ল্যান হয় না। পুরোটাই স্নায়ুর যুদ্ধ হয়। প্রত্যেকে ফোকাস্ড থাকে,’’ বলে দিচ্ছেন আমের। ‘‘আমরা সবাই জানতাম ভারতের বিরুদ্ধে যদি আমরা ভাল বল করি, তা হলে আমাদের খ্যাতি, মূল্য সবই বেড়ে যাবে। সমর্থকদের কাছেও ব্যাপারটা স্পেশ্যাল হয়ে যাবে। ভারতের বিরুদ্ধে আমি আগেও খেলেছি। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সেখানে সচিন (তেন্ডুলকর) আর ইউসুফ পাঠানের উইকেট নিয়েছিলাম। ম্যাচটা সে দিন জিতেওছিলাম আমরা। আমিও প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলাম।’’ তবে কোনও পরিকল্পনা না থাকলেও আমের বুঝেছিলেন যে, মীরপুর উইকেটে বল কিছু না কিছু করবে। ‘‘গত ম্যাচ দেখেই বুঝেছিলাম যে বল এখানে সুইং করবে। অত কম রান হাতে নিয়ে আমাদের শুরুতেই উইকেট তুলতে হত। শাহিদ ভাই (আফ্রিদি) আমাকে বললও অলআউট যেতে। কোনও বিকল্প তো আর ছিল না। আর ওটা কাজেও লেগে গেল। আমার তো মনে হয়েছিল রোহিতকে প্রথম বলেই পেয়ে গিয়েছি। প্রথম ওভারেই দু’টো উইকেট তোলা, স্রেফ অসাধারণ অনুভূতি। মনে হচ্ছে, আমি সপ্তম স্বর্গে আছি!’’
ঠিকই। অন্ধকূপের অভিশাপ শেষে মুক্তির ছবি এমন হলে, তাই তো হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy