কিস্তিমাত: সাব-জুনিয়র দাবায় চমক দিল ওরা। বাঁ দিক থেকে অজয় কার্তিকেয়ন, দিব্যা দেশমুখ ও বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
কিস্তিমাত করল নতুনেরাই। নয় দিনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বাছাই খেলোয়াড়ের অপ্রত্যাশিত হার, নতুন তারকার উঠে আসা, চূড়ান্ত গেমে হেরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো নানা নাটকের সাক্ষী দিনভর রইল কল্যাণী। বুধবার শেষ হল চুয়াল্লিশতম জাতীয় সাব-জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ।
গত ১৭ জুলাই থেকে কল্যাণীর জেআইএস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বি সি রায় অডিটোরিয়ামে চলছিল ৪৪তম জাতীয় সাব-জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। অনূর্ধ্ব পনেরো এই দাবা টুর্নামেন্টে বিভিন্ন রাজ্যের ৩৮৬ জন দাবাড়ুর মধ্যে থেকে উঠে এল সেই বিজেতারা যারা পরের বছর সেপ্টেম্বরে অনূর্ধ্ব ষোলো বিশ্বদাবার আসরে দেশের সম্মানরক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নেবে। এই প্রথম ওই বিশ্বদাবার আসর ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
এ বার প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটেছে বালক বিভাগে। এই বিভাগের শীর্ষ বাছাই বাংলার কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়কে ছিটকে দিয়ে উঠে এসেছে তামিলনাড়ুর অজয় কার্তিকেয়ন। নয় পয়েন্ট পেয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন সে-ই। আট পয়েন্ট পেয়ে অষ্টম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল কৌস্তভকে। এলো রেটিংয়ে তার (২৩৮৩ পয়েন্ট) বহু পিছনে থাকা কার্তিকেয়ন (২০৯৪ পয়েন্ট) এই প্রতিযোগিতায় প্রথম থেকেই চোখ ধাঁধানো ফর্মে ছিল। গোটা টুর্নামেন্টে একটিও ম্যাচ হারেনি সে।
একই ভাবে আবার সকলকে চমকে দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলার অবাছাই উৎসব চট্টোপাধ্যায়ও। এই প্রতিযোগিতায় তার সংগ্রহ সাড়ে আট পয়েন্ট। ঘটনাচক্রে তার এলো রেটিংও কার্তিকেয়নের সঙ্গে হুবহু এক। বাংলার আর এক বাছাই দাবাড়ু আরণ্যক ঘোষ (২৩১০ পয়েন্ট) বালক বিভাগে চতুর্থ স্থান পেয়েছে।
বালিকা বিভাগে প্রত্যাশা মতোই নয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, মহারাষ্ট্রের দিব্যা দেশমুখ। তবে শেষ ম্যাচে তাকে (২২০৩ পয়েন্ট) হারিয়ে চমকে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর সি লক্ষ্মী (১৮০৫ পয়েন্ট)। তাতে অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া আটকায়নি দিব্যার। সাড়ে আট পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সি লক্ষ্মী। বাংলার সুদীপা হালদার অষ্টম এবং বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় দ্বাদশ স্থানে শেষ করেছে।
এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্যোক্তা বেঙ্গল চেস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনু লাহিড়ীর কথায়, “কলকাতার বাইরে এত বড় মাপের দাবার আসর এই প্রথম। সেই জন্য ছোটখাটো কিছু সমস্যা হয়তো হয়েছে, কিন্তু দাবা ঘিরে গোটা নদিয়া জেলা জুড়ে যে উৎসাহের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, তা অভাবনীয়। দাবার এই প্রসারটাই আমরা চেয়েছিলাম।”
এই আয়োজনের সহযোগী, নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তুষার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জাতীয় দাবার এই আসর নদিয়া জেলায় দাবা খেলার ক্ষেত্রে একটা ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে রইল। জাতীয় স্তরের দাবা কেমন হতে পারে, তার একটা পরিপূর্ণ ধারণা আমরা পেলাম। এ থেকে জেলার দাবাড়ুরা ভীষণ উপকৃত হবেন।”
এলাকার দাবাড়ুদের এলো রেটিং বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী শীতে নবদ্বীপে একটি আন্তর্জাতিক রেটিং টুর্নামেন্ট হতে চলেছে বলেও জেলা দাবা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy