স্টেইন গানের চেয়েও দ্রুত গতি তাঁর বুলেটের। বছর দু’য়েক আগে আইপিএলে তাঁর ঘণ্টায় ১৭৩.৯ কিলোমিটারের গোলা আছড়ে পড়েছিল চিন্নাস্বামীতে। ক্রিকেটের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ গতির। গত এক বছরে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি। ডেল স্টেইন, ভার্নন ফিলান্ডারের থেকেও দীর্ঘ স্পেল করেছেন, তাঁদের চেয়েও বেশি গতি তুলেছেন অনায়াসে। রবিবার বিশ্বকাপে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ফাঁস হল তাঁর মর্নি মর্কেলের ফিটনেস ফান্ডা।
ফিটনেস কোচ ও ডায়েটিশিয়ান স্ত্রী রোজ কেলির পরামর্শই মর্কেলের দুরন্ত ফিটনেসের মূলমন্ত্র। বছরতিনেক স্ত্রীর ফিটনেস মন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে এখন তিনি সুপারফিট। কী সেই পরামর্শ? প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সব্জি খাওয়া, সোডা জাতীয় পানীয়ের বদলে জল, সবুজ শরবত ডায়েটে নিয়ে আসা আর পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন। মর্কেল বলছেন, “রোজ স্বাস্থ্য নিয়ে খুব সচেতন। যেটা আমাকেও ফিট থাকতে খুব সাহায্য করেছে। এ ব্যাপারে ও-ই আমার গাইড।”
তবে তার মানে এই নয় যে সুখাদ্য একেবারে বর্জন করে ফেলেছেন মর্নি। এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত রসনা মাঝেমধ্যে চেখে দেখেন ৩০ বছরের ফাস্ট বোলার। “এখনও আমি কিন্তু মাংস খাই,” বলেন তিনি। সেটা অবশ্য পরিমিত। সঙ্গে যোগ করেন, “তবে চিনিটা অনেক কাটছাঁট করেছি। চিনি খুব কম খাই। শরীরে কতটা চিনি যাচ্ছে সে ব্যাপারে আমি খুব কড়া। সোডা জাতীয় পানীয়ও কমিয়ে দিয়েছি। বদলে জল আর প্রচুর সবুজ শরবত খাই।” সবুজ শরবত বা ‘স্মুদি’ বলতে শাকপাতা, পাতা কপি, সুইস শার্ড, সেলারির সঙ্গে কমলালেবু, কিউয়ি, আপেল, আম, নাশপাতি আর কলার তরল মিশ্রণ।
যার নিট ফল: অনেক বেশি ফিট, আগুনে গতি। গড় গতির দিক থেকে মর্কেল এখন স্টেইনকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন। সতীর্থদের চেয়ে বেশিক্ষণ বল করার ক্ষমতার দিক থেকেও এগিয়ে। “এখন বল করতে নামলে এনার্জির অভাব হয় না। লম্বা স্পেলে সমস্যা হয় না। বোলিংয়ের গতিও বেড়ে গিয়েছে।” পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার আট টেস্টে স্টেইন আর ফিলান্ডারের থেকে বেশি হাত ঘুরিয়েছেন। শুধু টেস্ট নয়, ১৪টা ওয়ান ডে-তেও তাই। স্টেইনের পর গত বছর তিনি টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি যেমন, ওয়ান ডে-তেও এই সময়ে তুলে নিয়েছেন ২৪টা উইকেট।
একটা সময় ধারাবাহিকতার অভাব নিয়ে প্রচুর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। এখন সেটাই মর্কেলের শক্তি। “প্র্যাকটিসেও প্রচুর সময় দিতে পারি। ডেথ ওভার, স্লোয়ার বোলিং আরও নিখুঁত করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতে পারি। একটা ছন্দ পেয়ে গিয়েছি। তাতে আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে গিয়েছে।”
তবে শুধু ফিটনেস বা আত্মবিশ্বাস তো ম্যাচের ফয়সালা করে না। যেটা বিশ্বকাপে স্টেইনদের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবোয়ে টের পাইয়ে দিয়েছিল। ওপেনারদের ব্যর্থতার পর মর্কেলরা বল করতে নেমেও জিম্বাবোয়ের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে প্রথমে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যান। তবে পরিস্থিতি যতই চাপের হোক না কেন, এখানেও মর্কেলের মন্ত্রই বাজিমাত করছে। “কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আমার প্রথম সাতটা ম্যাচ হারার পর টানা ন’ম্যাচ জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আসল ব্যাপারটা হল ঠিক সময়ে পিকআপ বাড়ানো।”
আর প্রত্যাশার চাপ? সেটা কী ভাবে সামলাবেন? মর্কেল বলছেন, “বিশ্বকাপ জয় আমাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। তার জন্য বিশ্বকাপে ক্রিকেটকে খেতে হবে, ক্রিকেটের সঙ্গে ঘুমোতে হবে আমাদের। সতীর্থদেরও তাই বলেছি। এখানে জয় পাওয়া কিন্তু সোজা নয়।”
এ বার চ্যাম্পিয়ন হলে কি জয়ের সেলিব্রেশনে শ্যাম্পেনের বদলে সবুজ শরবত থাকবে? “গ্রিন আর গোল্ড দুটোই, তার সঙ্গে একটু আম আর হয়তো একটা স্টেকও জুড়ে দেব!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy