ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে যিনি আই লিগে কোচ করার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছিলেন, সম্মতি আদায় করে চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিলেন, সেই ইউ বি কর্তা অমিত সেন বৃহস্পতিবার বললেন, ‘‘আমি হাত ধুয়ে ফেলেছি। আমি এতে নেই। কিছু জানি না। যা আলোচনা হয়েছিল তার কিছুই করা হল না। কী আর বলব!’’
ব্রিটিশ কোচকে আনার ব্যাপারে সক্রিয় ক্লাবের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘শুরু থেকে পেলে নিতাম হয়তো। কিন্তু মাঝপর্বে এ ভাবে নেব কী করে? ক্লাবের বেশির ভাগেরই এতে মত নেই।’’
অমিত এবং সন্তোষ দু’জনেই কিন্তু গত শনিবার মধ্য কলকাতার এক হোটেলে শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকের পর উচ্ছ্বসিত ছিলেন, এ বার আই লিগে অন্তত মর্গ্যানকে কোচ করতে পারবেন বলে। সাংবাদিকদের ফোনে জানিয়েও দিয়েছিলেন সে কথা।
কিন্তু মাত্র ছয় দিনের মধ্যে হঠাৎ ইস্টবেঙ্গলে কেন এই উলাটপুরাণ? বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে এক বছরের কোচ ঘোষণার দিন মর্গ্যানের নাম একবারও মুখে আনেননি কর্তারা। বরং ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বলে দিয়েছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলে পার্ট টাইমের কিছু হয় না। বিশ্বজিতের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি হয়েছে।’’ যা শুনে মনে হয়েছে মর্গ্যানের এ বছর আর কোচ হওয়া হল না। কোচিং বৃত্তের বাইরেই হয়তো চলে গেলেন আই এস এলে মেহতাবদের কোচ।
ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের মতো ক্লাবে কোনও কিছুই স্থির নয়। আগের দিনের সিদ্ধান্ত পরের দিন বদলে যায় নানা অঙ্কে। ফলে মর্গ্যান পরের কোনও পরিস্থিতিতে আসবেন কি না তা-ও বলা সম্ভব নয়। তবে এটা ঘটনা, আপাতত মর্গ্যান এপিসোড শেষ।
মর্গ্যানকে নিয়ে পেকে যাওয়া ঘুঁটি কেন কেঁচে গেল? ক্লাব তাঁবুতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে তিনটি কারণ। এক) কর্তারা আলোচনায় বসে মর্গ্যানের কথা না তুললেও বিশ্বজিৎ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি একক ভাবে কাজ করতে পারলেই দায়িত্ব নেবেন। দুই) ক্লাবের এক শীর্ষ কর্তা দেবব্রতবাবু কোনওমতেই চাননি মর্গ্যান কোচ হোন। বরং তাঁর ইচ্ছে, যদি পরবর্তী সময়ে আই লিগে কোচ বদলাতেই হয় সুভাষ ভৌমিক আসুন। সুভাষ ‘এ’ লাইসেন্সের জন্য বৃহস্পতিবার পরীক্ষাও দিয়েছেন। তিন) শীর্ষ কর্তার অতি ঘনিষ্ঠ টিম ম্যানেজার অ্যালভিটো ডি’কুনহার সঙ্গে মর্গ্যানের সম্পর্ক খুবই শীতল। সেটা টিমে প্রভাব ফেলুক চাননি শীর্ষ কর্তা।
বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সচিব কল্যাণ মজুমদারই মর্গ্যানকে আনার প্রবল বিরোধী। কিন্তু সেটা অনেকটা মুখোশের মতো। কল্যাণবাবু নাকি চেয়েছিলেন, কোচের পিছনে ৩০-৩২ লাখের বেশি খরচ যেন না হয়। তার মধ্যে মর্গ্যান বা যেই আসুন আপত্তি নেই। কিন্তু ক্লাবের অন্দরের খবর, শীর্ষ কর্তা দেবব্রতবাবুই ছিলেন এ ব্যাপারে প্রধান ফ্যাক্টর। ক্লাবের বেশির ভাগ কর্মসমিতির কর্তা বা পদাধিকারীরা যেহেতু ওই শীর্ষ কর্তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, তাই মনে যাই থাকুক মুখে তাঁরা ‘এক বছরে এক কোচ’ নীতিতে সায় দিয়েছেন আপাতত। মর্গ্যানকে আটকাতে।
আর সেই অঙ্কেই বিশ্বজিতকে পুরো মরসুমের জন্য কোচ ঘোষণা করে দেওয়া হল শুক্রবার। তাতে আপাতত জল্পনা থামল। কিন্তু নতুন প্রশ্নেরও জন্ম হল, বিশ্বজিৎ কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে কে হবেন আই লিগের কোচ? সুভাষের পরীক্ষার রেজাল্টের উপর অনেক কিছুই কিন্তু নির্ভর করছে। তাঁকে পাশ করানোর জন্য ফেডারেশনের এক বড় কর্তা উঠেপড়ে লেগে রয়েছেন। সেই কর্তা যে আবার ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তারও অতি কাছের লোক ও বটে! তবে ময়দানে তো অনেক কিছুই ঘটে। তো দেখা যাবে, জানুয়ারিতেই মর্গ্যানকে ডেকে আনছেন ওই শীর্ষকর্তা দেবব্রতবাবুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy