কাতসুমি কুপোকাত। রবিবারের মিনি ডার্বি । ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মোহনবাগান-০
মহমেডান-০
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম নাকি?
বারাসত স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে যে পরপর সাতটা চেকপোস্ট পড়ল, সেগুলোতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখলে যদি সেটাই মনে পড়ে, খুব অবাকের নেই বোধহয়!
না, কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আক্রমের মতো এখানে কারও উপর গুলিগোলা চলেনি। কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবরও নেই। কিন্তু সাত দফা নিরাপত্তা বলয় দেখলে একটু ঘাবড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কলকাতা লিগে তো এত গা ছমছমে টেনশনের কারণ ঘটে না।
‘মিনি ডার্বি’ নিয়ে আইএফএ যে ঠিক কী ভেবেছিল, বলা কঠিন। বাগানের তিন ফুটবলার প্রীতম কোটাল, শৌভিক চক্রবর্তী আর দেবজিৎ মজুমদারকে গাড়ি স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে রেখে ঢুকতে হল ড্রেসিংরুমে। যেন বুঝিয়ে দেওয়া, অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ঘটতে চলেছে রবিবার বারাসতে। সমস্যা হল, অনুষ্ঠানের মোড়ক এত জৌলুসময় হলে আসল অনুষ্ঠানটাকেও ঠিক ততটাই ঝকঝকে হতে হয়। কিন্তু মাঠের বাইরে যে তীব্র পেশাদার মনোভাব দেখানোর চেষ্টা হল, ভেতরে সেটা পাওয়া গেল না। টিকিট পেতে দর্শকদের হেনস্থা, ব্যবস্থাপনার অভাব। ভোগান্তি ফুটবলারদের, ভোগান্তি সমর্থকদের। ভোগান্তি ফুটবলেরই।
কেননা এত কিছু করেও তো সেই সুপরিচিত কালিঝুলি মাখা ভারতীয় ফুটবল!
মোহনবাগান, মহমেডান—দু’টো টিমেরই খেলা দেখলে ‘মিনি ডার্বি’, না পাড়ার ম্যাচ গুলিয়ে যেতে পারে! চল্লিশ মিনিটে প্রথম পজিটিভ কোনও মুভ দেখতে পাওয়া গেল বাগান ফুটবলারদের থেকে। চার-পাঁচটা সুন্দর ওয়াল খেলার পরে রাম মালিক সেটাও ‘সযত্নে’ মারলেন বারের অনেক উপর দিয়ে! এর মধ্যেই অবশ্য লাল কার্ড দেখে মহমেডানকে দশ জনে নামিয়ে দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন বিদেশি স্ট্রাইকার করিম।
লাল কার্ড নিয়ে কোনও তেতো ঝামেলা না থাকুক, লাল কার্ড-উত্তর ফুটবলার পরিবর্তন নিয়ে সামান্য বিভ্রান্তি তৈরি হয়। দশ জন হয়ে যাওয়ার পর এক স্বদেশি ফুটবলারের বদলে বিদেশি ডলফিনকে নামান সাদা-কালো কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে ছোটখাটো একটা হইচই হয় মাঠে। তবে আইএফএ-র বিধানে নিয়মটা স্পষ্ট করে লেখা নেই বলে কোনও বাড়তি উত্তেজনা ছড়ায়নি।
নিয়ম নিয়ে উত্তেজনা তৈরি না হলেও বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের লিগ জয়ের স্বপ্ন কিন্তু শুরুতেই উত্তেজনাময় ধাক্কা খেল। দশ জনের মহমেডানকে ছাপ্পান্ন মিনিট পেয়েও হারাতে না পারা মানে নৈতিক হার ভারতসেরা দলের কোচের কাছে। নর্ডি-ডুডু-কিংশুকদের অনুপস্থিতিতে অনভিজ্ঞ তীর্থঙ্কর সরকার, রাজা দাস, প্রতীক চৌধুরীকে সুযোগ দিয়েছিলেন কোচ। কিন্তু তিনজনই ব্যর্থ। প্রাপ্তি বলতে লালকমলের ফের ফুটে ওঠা। শেষ পুরো ম্যাচ খেলেছিলেন গত ফেব্রুয়ারিতে। তার পরে এ দিনই পুরো নব্বই মিনিট মাঠ দাপালেন। ম্যাচের সেরাও হলেন।
সঞ্জয় অবশ্য নিরাশ নন জুনিয়রদের পারফরম্যান্সে। বললেন, ‘‘এক দিনে ফুটবলারের প্রতিভা মাপা যায় না। প্রতীক একটু নড়বড়ে। তীর্থঙ্করও সেই ভাবে পারেনি। তবে রাজা একটু সাপোর্ট পেলে আরও ভাল খেলবে। আর লাল কিন্তু আমাকে চমকে দিয়েছে।’’
মরসুমের প্রথম ম্যাচেই কোনও টিমের খারাপ-ভাল বিচার করা যায় না। তবে বাগানের একটা দুর্বলতা অসম্ভব চোখে লাগছিল ম্যাচে। একজন প্রকৃত স্ট্রাইকারের অভাব। এবং তার জন্যই বোধহয় দশ জনের মহমেডানকে টপকানো গেল না। রাম মালিক, কাতসুমি, দুই পরিবর্ত পঙ্কজ মৌলা, এমনকী এমএলএস খেলে আসা কেন লুইস— চারটে নিশ্চিত মিস করলেন।
আশা করা যায়, ডুডু এসে পড়লে স্ট্রাইকার-সমস্যাটা অন্তত কলকাতা লিগের মতো মিটলেও মিটতে পারে সঞ্জয়ের।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, সফর, প্রতীক, প্রীতম, সুখেন, শৌভিক, লালকমল, তীর্থঙ্কর (কেন), রাম (উজ্জ্বল), কাতসুমি, রাজা (পঙ্কজ)।
মহমেডান: ঈশান, বিক্রমজিৎ, রানা, দীপক, করিম, বিজয় (ডলফিন), মমতাজ, দীপঙ্কর, তন্ময়, বসন্ত (মুনিরুল), নুরুদ্দিন (কামরান)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy