শ্রদ্ধা: মেহতাবকে ‘ফেয়ারওয়েল’ অ্যারোজের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ১ n অ্যারোজ ৩
জীবনের শেষ ম্যাচে খেললেন পুরো চুরানব্বই মিনিট!
অধিনায়কের ‘আর্ম ব্যান্ড’ পরে নেতৃত্বও দিলেন মোহনবাগানকে।
কিন্তু ম্যাচ শেষে সেই মেহতাব হোসেনকে ফেলে রেখেই সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকারা চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। মাঠেই পড়ে রইল দু’দশকের বর্ণময় এক দুর্দান্ত ফুটবলারের শেষ দিনের জন্য আনা বিদায়ী স্মারক, উত্তরীয়, ফুল-মালা। পরে যখন আজাহারউদ্দিন মল্লিকদের মতো কেউ কেউ কর্তাদের ডাকে অনুষ্ঠানে ফিরলেন, তখন অন্য এক চমকপ্রদ দৃশ্য দেখে ফেলেছে বৃহস্পতিবার রাতের যুবভারতী। মেহতাব যাঁদের হারিয়ে মধুর করে রাখতে চেয়েছিলেন অবসর দিনের স্মৃতি, সেই ইন্ডিয়ান অ্যারোজের ফুটবলাররাই ম্যাচ জেতার পর তাঁকে নিয়ে আবেগে ভাসলেন।
মেহতাব হাত নাড়তে নাড়তে হেঁটে যাচ্ছিলেন গ্যালারির দিকে। হাতে ধরা শেষ ম্যাচ খেলার বল। পিছন পিছন হাঁটছিলেন অ্যারোজের যুব বিশ্বকাপাররাও। তাঁরাই দৌড়ে গেলেন মেহতাবের কাছে। তারপর সবাই মিলে আকাশে তুলে, শূন্যে ছুড়ে কুর্নিশ জানালেন ময়দানের মিডফিল্ড জেনারেলকে। ‘‘ম্যাচটা অন্তত ড্র রেখে ফিরতে পারলে ভাল লাগত। আই লিগ না জেতার মতো এটাও আক্ষেপ থেকে গেল। জীবনের সব সাধ তো সবসময় মেটে না,’’ বলার সময় গলা ধরে আসছিল সতেরো বছর দুই প্রধানে খেলা মেহতাবের। দূরে দাঁড়িয়ে তখন তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে।
যাঁদের হারাতে নেমেছিলেন, তাঁরাই ম্যাচ জিতে আপনাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, এরকম দৃশ্য তো সচরাচর দেখা যায় না। আর আপনার সতীর্থরা....? প্রশ্ন শেষ হল না। ম্যাচ শেষে সনিদের আচরণ নিয়ে যে বিতর্কের ঢেউই উঠুক, মেহতাব তাতে ঢুকলেন না। ‘‘আমি যখন ফুটবল খেলা শুরু করি তখন অ্যারোজের এই ফুটবলাররা হয়তো অনেকেই হাঁটতে শুরু করেছে। ওরা আমাকে যে সম্মান দিল সেটা মনে থাকবে। আর আমার মোহনবাগানের বন্ধুরাও আমাকে মাঠে বা ড্রেসিংরুমে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে।’’
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান থেকে ফিলিপ ডি’রাইডার—বহু কোচ ও ফুটবলার মেহতাবকে মেসেজ করেছেন। তাঁদের সবারই আক্ষেপ, আরও দু’একবছর কেন খেললেন না দেশের অন্যতম সেরা মিডিয়ো? মেহতাব বললেন, ‘‘সবাইকে বলেছি এটাই খেলা ছাড়ার সেরা সময় বলে মনে হয়েছে। ২৩ বছর তো ক্লাব ফুটবল খেললাম।’’ মেহতাব এড়ালেও সনিদের এভাবে ড্রেসিংরুমে ফেরা নিয়ে মোহনবাগান কোচকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। খালিদ বললেন, ‘‘এটা ভুল বোঝাবুঝিতে হয়েছে। আমাদের কেউ খেলা শেষে মাঠে থাকতে বলেনি।’’
অ্যারোজের যে দলটি এ দিন মোহনবাগানকে হারাল, সেই দলে দু’বছর আগের অনূর্ধ্ব সতেরো বিশ্বকাপে খেলা ছয় জন ছিলেন। ফ্লয়েড পিন্টোর দল বিদেশিহীন। শুধু তাই নয়, সবাই অনূর্ধ্ব ২২ ফুটবলার। তাঁদের কাছেই যে ভাবে সনি নর্দেরা আত্মসমর্পন করলেন তার জন্য ‘বিশ্রী হার’ শব্দটা যথেষ্ট নয়। বলা যায় ‘লজ্জার হার’। খালিদের দল এখন যেন দিশাহীন একটা নৌকা। গোলকিপার থেকে ফরোয়ার্ড—সব পজিসনই চূড়ান্ত অগোছাল। এ রকম একটা প্রতিপক্ষকে সামনে পেয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন রাহুল কেপি, অমরজিৎ সিংহরা। হুগলির দুই ছেলে দু’দলের হয়ে গোল করলেন। মশাটের আজাহারউদ্দিন মল্লিক গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন। ব্যান্ডেলের অভিজিৎ সরকার ১-১ করলেন অ্যারোজের হয়ে। তারপরই গতি আর পাসের ঝড় তুলে পালতোলা নৌকাকে ডুবিয়ে দিলেন এক ঝাঁক তরতাজা ছেলে। যাঁদের বেশিরভাগই আজ শুক্রবার অনূর্ধ্ব ২৩ এএফসি কাপের জাতীয় শিবিরে চলে যাচ্ছেন। হেনরি-কিংসলেদের দুর্দশা বাড়ালেন রাহুল কেপি আর রোহিত দানু। বিরতির পর গোল করলেন দু’জনেই। ম্যাচ শেষে তাই প্রশ্ন উঠে গেল, এই মোহনবাগান সুপার কাপে গিয়ে কিছু করতে পারবে?
মোহনবাগান: রিকার্ডো কার্ডোজো, অরিজিৎ বাগুই, গুরজিন্দর কুমার, কিংসলে ওবুমেনেমে, অভিষেক আম্বেকর, আজহারউদ্দিন মল্লিক (ওমর এলহুসেইনি), মেহতাব হোসেন, উইলিয়াম লালনুনফলা (দিপান্দা ডিকা), ব্রিটো পি এম (শেখ ফৈয়াজ), সনি নর্দে হেনরি কিসেক্কা।
ইন্ডিয়ান অ্যারোজ: প্রভসুখন সিংহ, বরিস সিংহ, জিতেন্দ্র সিংহ, আনোয়ার আলি, আশিস রাই, সুরেশ সিংহ, দীপক টাংরি, আমরজিৎ সিংহ, রাহুল কানোলি প্রভীন (রোহিত দানু), রহিম আলি, অভিজিৎ সরকার (খুমেনতেন মিতাই)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy