জুটি: রক্ষণে কিংগসলে (বাঁ দিকে)। আক্রমণে ক্রোমা। আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে এই দুই ফুটবলারই ভরসা মোহনবাগানের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ যেন ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ!
প্রতিপক্ষ কখনও পূর্বসূরি সঞ্জয় সেন। কখনও আবার খালিদ জামিল! কিছুটা নিজের সঙ্গেও। তিনি— শঙ্করলাল চক্রবর্তী।
মোহনবাগানে সহকারী কোচের পদটা যেন তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। সবুজ-মেরুনে শঙ্করলালের শুরু সুভাষ ভৌমিকের সহকারী হিসেবে। তিনি সরে যাওয়ার পরে সঞ্জয় দায়িত্ব নেন। কিন্তু শঙ্করলাল থেকে গিয়েছেন। অবশেষে স্বপ্নপূরণ। পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর আজ, রবিবার আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে নামছে মোহনবাগান। শেষ চারটি ম্যাচের তিনটিতে জয়। হার একটিতে লিগ টেবলের পাঁচ নম্বরে নেমে এসেছে মোহনবাগান। এই পরিস্থিতিতে আইজল ম্যাচের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে আই লিগে সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা-দের ভবিষ্যৎ।
বাইশ বছর আগে প্রথমবার সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নেমেই চমকে দিয়েছিলেন শঙ্করলাল। তাঁর নিজের বয়সও তখন ছিল বাইশ। কাকতালীয় ভাবে সেই মোহনবাগানেই স্বাধীন কোচ হিসেবে অভিষেকের অপেক্ষায় বছর বিয়াল্লিশের শঙ্করলাল।
গত বাইশ বছরে মোহনবাগান কোচের মাথার সামনের অংশের চুল শুধু উঠে যায়নি, বদলে গিয়েছে মানসিকতাও। ডাকাবুকো শঙ্করলাল এখন সতর্ক। মনের ভিতরে ঝড় বয়ে চললেও বহিঃপ্রকাশ নেই। শনিবার সকালে মোহনবাগান ক্লাবের লনে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ফুটবলার হিসেবে মোহনবাগানে যখন সই করেছিলাম, তখন তারুণ্যের তেজে টগবগ করে ফুটছি। মনে হতো, সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে গুড়িয়ে দিই। কিন্তু এখন আর সেই বয়স নেই।’’
যখন খেলতেন, ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ার ছিলেন শঙ্করলালের আদর্শ। কোচ হওয়ার পরে আদর্শ পেপ গুয়ার্দিওলা। যদিও ফুটবল জীবনের কথা অবশ্য খুব একটা বলতে চান না তিনি। মারাত্মক চোট অকালেই শেষ করে দিয়েছিল তাঁর স্বপ্ন। সেই যন্ত্রণা ভুলতে চান কোচ হিসেবে সাফল্য পেয়ে। শঙ্করলাল বলছিলেন, ‘‘গুয়ার্দিওলা শিখিয়েছেন, সমস্ত রকম পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থাকতে। স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হবে ফুটবলারদের দক্ষতা অনুযায়ী। শুরুর দিকে হয়তো ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তাতে অধৈর্য না হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’
শীতের সকালে মোহনবাগান মাঠে অনুশীলনে গুয়ার্দিওলার ভঙ্গিতেই ক্যামেরন ওয়াটসন, আনসুমানা ক্রোমা-দের পজিশন অনুযায়ী দাঁড় করিয়ে আইজল এফসি-বধের মহড়া দিলেন। যার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠল সঞ্জয় সেনের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার তীব্র আকাঙ্খা।
প্রাক্তন সবুজ-মেরুন কোচ ক্রোমাকে উইথড্রল ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাতেন। শঙ্করলালের স্ট্র্যাটেজিতে ডিকার সঙ্গে ফরোয়ার্ডে শুরু করবেন জর্জ ইউয়ার দেশের স্ট্রাইকার-ই। আর চোটের কারণে এই ম্যাচেও নেই হাইতি তারকা। পরিবর্তনের ইঙ্গিত মাঝমাঠেও। গত মরসুমে আই লিগ হাতছাড়া হয়েছিল আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেই। সেই ম্যাচে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন সনি-রা। রবিবাসরীয় যুবভারতীতে আইজলের মিডফিল্ডারদের থামাতে মোহনবাগান কোচের প্রধান অস্ত্র সুনীল ছেত্রীর প্রাক্তন সতীর্থ ওয়াটসন। মাত্র দু’দিন দলের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করা অস্ট্রেলীয় মিডফিল্ডার বলে দিলেন, ‘‘মাঠে নেমে সেরাটা দিতে চাই।’’
গত বারের আইজল এফসি-র অধিকাংশ ফুটবলারই দল ছেড়েছেন। নেই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করা কোচ খালিদ জামিল-ও। কিন্তু খালিদ যে আত্মবিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন গত মরসুমে, সেটাই এখন অস্ত্র আইজলের। দলের পর্তুগাল কোচ পাওলো মেনেজেস ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলেই দিলেন, ‘‘আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছি।’’ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশের কোচ আরও বললে, ‘‘সনির খেলতে না পারা তো মোহনবাগানের সমস্যা। আমি কেন ভাবব।’’ মোহনবাগান ক্লাবের লনে সাংবাদিক বৈঠক সেরেই মেনেজেস যুবভারতীর প্র্যাক্টিস মাঠে অনুশীলনে নেমে পড়েন। শঙ্করলাল তখনও ব্যস্ত আইজল-বধের স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে।
ব্যর্থ হলেই যে বিদায়ের আতঙ্ক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy