ম্যাচের পরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন চত্বরের বাইরের বেঞ্চে সতীর্থ সৌরভ দাসের সঙ্গে বসেছিলেন তিনি। রবিবারের ডার্বিতে দিনের প্রথম গোলদাতা সেই আজহারউদ্দিন মল্লিকের মুখে তখন লেগে বেদনার হাসি। আজহারকে দেখে উর্দি পরা এক পুলিশকর্মী এগিয়ে গেলেন তাঁর দিকে। এ দিন সবুজ-মেরুন শিবিরের প্রথম গোলদাতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আপনাকে যখন তুলে নেওয়া হচ্ছে তখন আমারই কষ্ট হচ্ছিল। উর্দি পরে ডিউটি করায় তা প্রকাশ করতে পারিনি। গোলটা দারুণ করেছিলেন।’’ শুনে মাথা নিচু করে ফেলেন হুগলি জেলার এই ফুটবলার।
শুধু এই পুলিশকর্মীই নন। ইস্টবেঙ্গলের কাছে ডার্বি হেরে মোহনবাগান সমর্থকদের অনেকেই প্রশ্ন তুললেন, কেন উইংয়ে দুরন্ত খেলা আজহারউদ্দিনকে মাঠে রাখলেন না মোহনবাগান কোচ? যদি ফৈয়াজকে নামাতেই হত, তা হলে কেন অন্য উইঙ্গার ওমর এলহুসেইনিকে তোলা হল না? কেন প্রথম হলুদ কার্ড দেখার পরেও কিংসলেকে সতর্ক করা হয়নি?
ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও উঠল এই প্রশ্নগুলো। মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী যদিও এইসব প্রশ্ন উড়িয়ে দিচ্ছিলেন একের পর এক। সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ উল্টে আরও বললেন, ‘‘উইং ধরে আক্রমণ আরও জোরদার করতেই আজহারউদ্দিনকে তুলে ফৈয়াজকে নামানো হয়েছিল।’’ আর ওমর সম্পর্কে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘লাল কার্ড দেখে কিংসলে বাইরে চলে যাওয়ার পরে আমরা দশ জন হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ওই সময় ওমরকে তুলেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: রক্ষণের ভুল দু’পক্ষেই, তাই দেদার গোল
কিন্তু উইংয়ে যদি ঝাঁঝ বাড়াতে হয়, তা হলে আজহারকে রেখে ফৈয়াজকে নামানোর পরিকল্পনা করলেন না কেন? কারণ, এ দিন আজহারকে গোলের বল বাড়ানো ছাড়া এ দিন ওমর বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ফারাক তৈরি করার মতো এমন কিছু করতে পারেননি। তাঁর জায়গায় কেন পরিবর্তন নয়? যদি ওমরকে রাখতেই হয়, তা হলে মিশরীয় ফুটবলারটিকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে সরিয়েও তো ফৈয়াজকে নামিয়ে উইং ধরে আক্রমণ জোরদার করা যেত! মোহনবাগান কোচের কাছ থেকে যদিও এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। বরং তিনি গলার সুর চড়িয়ে বলে দেন, ‘‘দ্বিতীয়ার্ধে দশজনে কী রকম উজ্জীবিত ফুটবল খেললাম দেখলেন?’’ সিঁথি নিবাসী মোহনবাগানের বঙ্গসন্তান কোচের কাছে প্রশ্ন ছুটে যায়, তা হলে কিংসলে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ৫৮ মিনিট পর্যন্ত মোহনবাগান এ রকম উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে পারল না কেন? শঙ্করলাল বলেন, ‘‘এটাই রণনীতি ছিল, দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝড় তুলতে চেয়েছিলাম। ফুটবলারদের ধন্যবাদ, দশ জন হয়ে যাওয়ার পরেও ওরা সেই রণনীতি অনুযায়ী খেলে গিয়েছে।’’
এ দিনের ডার্বির পরে এ বারের আই লিগে সাতটি ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচ যুবভারতীতেই খেলল মোহনবাগান। এই চারটি ম্যাচে ৯ গোল খেয়েছে শঙ্করলালের দল। কেন ঘরের মাঠে বার বার মুখ থুবড়ে পড়ছে মোহনবাগান? কেন শুরুতে এগিয়ে গিয়েও সেই গোল ধরে রাখা যাচ্ছে না? জানতে চাইলে মোহনবাগান কোচ বলেন, ‘‘কেন এটা হচ্ছে, কারণগুলো খোঁজার চেষ্টা করছি।’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুটে যায়, ‘‘চার ম্যাচ পরেও সমস্যার সমাধান খুঁজছেন?’’ এ বার চুপ করে যান মোহনবাগান কোচ।
মোহনবাগান শিবির যদিও এ দিনের ম্যাচের পরে দুষেছেন রেফারিকেই। সবুজ-মেরুন শিবিরের দাবি, লালডানমাউইয়া রালতে তাঁর প্রথম গোলের সময় অফসাইডে ছিলেন। মোহনবাগান কোচ সাংবাদিক সম্মেলনে রেফারির নাম না করে ঘুরিয়ে বলে গেলেন, ‘‘প্রকাশ্যে রেফারির বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না। তা হলে নির্বাসিত হতে পারি। বাড়ি গিয়ে ম্যাচটা ফের দেখতে হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে আমার তো অফসাইডই মনে হয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘কিংসলেকে প্রথম বার যখন হলুদ কার্ড দেখানো হয়, তখন ব্যাপারটা যুক্তিযুক্ত লাগেনি। কারণ, ইস্টবেঙ্গলের নবাগত স্পেনীয় খেলোয়াড়টি (খাইমে স্যান্টোস কোলাদো) তারও আগে থেকে চোট পাওয়ার ভান করছিল। ওকে সতর্ক করা যেত তারও আগে।’’ বোরখার হাতে বল লাগায় পেনাল্টি না পাওয়া নিয়েও সরব মোহনবাগান শিবির। এই নিয়ে ফেডারেশনকেও চিঠি দিয়েছে তারা।
এ দিনের হারের ফলে সাত ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট দাঁড়াল নয়। এগারো দলের আই লিগে আট নম্বরে। ১৯ নভেম্বর পঞ্জাবে তাদের প্রতিপক্ষ মিনার্ভা এফসি। যে ম্যাচে নেই সনি নর্দে। কার্ড সমস্যায় পাওয়া যাবে না স্টপার কিংসলেকেও। মোহনবাগান কোচ বলছেন, ‘‘পয়েন্টের ফারাক খুব একটা বেশি নয়। এখনও দলগুলো সব গায়ে গায়েই দৌড়াচ্ছে। আমরা জিততে শুরু করলেই সব হিসেব বদলে যাবে। লিগ জয়ের আশা শেষ কি না তা
সময়ই বলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy