Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দীপেন্দুর অদৃশ্য গোলে জিতেও হার বাগানের

হেরেও বিজয়োৎসব! জিতেও হতাশায় ডুব! ম্যাচের সেরা জোড়া গোলদাতার মুখে বিষণ্ণতা! ‘অদৃশ্য গোল’ করে উল্লাস বিপক্ষ দলের ফুটবলারের!

ডুডুর ডিগবাজি উৎসবের। দল কিন্তু দিনের শেষে মুখ থুবড়ে পড়ল নিয়মের জালে জড়িয়ে। (নীচে) টিম লিস্ট নিয়ে দীপেন্দুর সওয়াল রেফারির সঙ্গে। ছবি: উৎপল সরকার।

ডুডুর ডিগবাজি উৎসবের। দল কিন্তু দিনের শেষে মুখ থুবড়ে পড়ল নিয়মের জালে জড়িয়ে। (নীচে) টিম লিস্ট নিয়ে দীপেন্দুর সওয়াল রেফারির সঙ্গে। ছবি: উৎপল সরকার।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

মোহনবাগান-৩ (ডুডু-২, লালকমল)

টালিগঞ্জ অগ্রগামী-১ (আদিলেজা)

হেরেও বিজয়োৎসব!

জিতেও হতাশায় ডুব!

ম্যাচের সেরা জোড়া গোলদাতার মুখে বিষণ্ণতা!

‘অদৃশ্য গোল’ করে উল্লাস বিপক্ষ দলের ফুটবলারের!

ভারতীয় ক্লাব ফুটবল কেন, বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসেও এমন বিরল ম্যাচ খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। শুক্র-বিকেলের বারাসত স্টেডিয়াম যে ঘটনার সাক্ষী থাকল। কলকাতা লিগে জিতেও হারল মোহনবাগান। হেরেও জিতল টালিগঞ্জ অগ্রগামী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচের চেক নিয়ে সটান ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা ডুডুর। বাগানের জোড়া গোলদাতা শুধু বলে গেলেন, ‘‘এই গোলের আর কোনও দাম আছে না কি? গোল দু’টো কি ধুয়ে খাব!’’

পাশেই দাঁড়িয়ে টালিগঞ্জ অগ্রগামীর সেই ‘অদৃশ্য গোলদাতা’! দীপেন্দু বিশ্বাস। একবারের জন্যও বল পায়ে না ঠেকালেও (নব্বই মিনিট বেঞ্চে ছিলেন) মাঠের বাইরে থেকেই বাজিমাত ময়দানের শেষ বাঙালি তারকা স্ট্রাইকারের। দীপেন্দুই তো এ দিন প্রথম কাগজপত্র দেখিয়ে ঘোষণা করেন, ‘‘আইন ভেঙেছে মোহনবাগান। হারলেও আমরাই তিন পয়েন্ট পাব।’’

না, চমকানোর কিছু নেই। মোহনবাগানের মূখার্মিতেই এই উলটপুরাণ! কলকাতা লিগের আইন অনুযায়ী নব্বই মিনিটই অন্তত একজন অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার প্রত্যেক দলকে খেলাতে হবে। কিন্তু এ দিন ম্যাচের ৮৫ মিনিট থেকে বাগানের কোনও অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার মাঠের ভেতর ছিলেন না। এবং সেখান থেকেই যত বিতর্কের সূত্রপাত।

রেফারি, টালিগঞ্জের পোড়খাওয়া কোচ সুভাষ ভৌমিক, এমনকী এ দিনের ম্যাচ কমিশনারের তীক্ষ্ণ নজর এড়িয়ে আজহারউদ্দিন মল্লিকের (অনূর্ধ্ব-২৩) পরিবর্তে রাম মালিক নামলেও, দীপেন্দুর চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। ম্যাচে সেই সময় বাগানের কোনও অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার নেই দেখে চতুর্থ রেফারির উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় হইচই-গোলমাল। প্রথমে রেফারিরা বিষয়টাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছিলেন না। কিন্তু টালিগঞ্জের অনড় প্রতিবাদে যখন কেঁপে ওঠে বারাসত স্টেডিয়াম, টনক নড়ে সবার। ম্যাচ কমিশনার সুব্রত দাস স্বীকার করেন, ‘‘শেষ পাঁচ মিনিট মোহনবাগানের কোনও অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার মাঠে ছিল না। আমরা রিপোর্ট দিচ্ছি আইএফএ-কে। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কী শাস্তি হবে।’’

আইএফএ সূত্রের যা খবর, তাতে বাগানের তিন পয়েন্ট কাটা যাওয়ার দিকেই বেশি পাল্লা ভারী। আর সেটা হলে, পরের সপ্তাহে আর ডার্বির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কার্যত এ দিনই যে ইস্টবেঙ্গলের হাতে কলকাতা লিগ তুলে দিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান! সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘আমাদের ভুল হয়েছে। তবে আশা ছাড়ছি না।’’

অলীক আশাবাদী হওয়া ছাড়া কী-ই বা করার আছে বাগান কোচের? সুভাষের বিরুদ্ধে মর্যাদার লড়াই জিতেও ‘ট্রফি’ হারালেন। ম্যাচ শুরুর আট মিনিটের মধ্যেই দু’গোল খেয়ে যিনি বেঞ্চে গুম মেরে গিয়েছিলেন, সেই সুভাষকে দেখা গেল ম্যাচের নাটকীয় যবনিকা পতনের পরে নতুন উদ্যমে এ দিক-ও দিক ছুটছেন! ম্যাচের শেষ কুড়ি মিনিট যেমন ছুটল তাঁর দল। তখন বাগান মাঝমাঠের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। ডিফেন্সে খেই নেই। সঞ্জয় স্বীকারও করলেন, ‘‘সেকেন্ড হাফে মোহনবাগান যে খেলছে একবারের জন্যই মনে হয়নি। এটা আমার কোচিং জীবনের বড় লজ্জা।’’

কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় লজ্জা বাগান কোচ আর তাঁর ম্যানেজমেন্টের। যে ক্লাবে ফুটবল সচিব থেকে শুরু করে ম্যানেজার, সাপোর্ট টিম, টেকনিক্যাল কমিটিতে প্রাক্তন ফুটবলারদের ভিড়। সেখানেই অনূর্ধ্ব ২৩-এর নিয়ম না জানায় ভুগতে হচ্ছে । ১২৫ বছরের ক্লাবে যা একেবারেই বেমানান। লজ্জারও।

মোহনবাগান: শিল্টন, সঞ্জয়, সুমন (সুখেন), প্রসেনজিৎ, সফর, লালকমল, আসিফ, কাটসুমি, কেন (পঙ্কজ), আজহারউদ্দিন (রাম), ডুডু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE