তারকা-সমাবেশ: হিরো কাপের পঁচিশ বছর উপলক্ষ্যে এক মঞ্চে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রোহিত শর্মা, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ব্রায়ান লারা এবং কার্ল হুপার। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রিয় কলকাতায় এসে নতুন বিতর্কের ঝড়ই তুলে দিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘হট টপিক’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে আনন্দবাজারের সামনে মুখ খুললেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। এবং, বলে দিলেন, সময় হয়েছে ধোনি-বিভ্রাট থেকে বেরিয়ে এসে নবীনে আস্থা দেখানোর।
‘‘ধোনি অনেক বড় ক্রিকেটার। দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। দু’টো বিশ্বকাপ দিয়েছে। কিন্তু কিংবদন্তিকেও কোথাও গিয়ে থামতে হয়। আমার মনে হচ্ছে, ধোনির সেই সময়টা এসে গিয়েছে,’’ দক্ষিণ কলকাতার পাঁচ তারা হোটেলে বৃহস্পতিবার সকালে হেয়ারকাট নিতে নিতে বলছিলেন আজহার। তা হলে তাঁর পরামর্শ? ভারতীয় ক্রিকেটে ফ্লিক সম্রাটের জবাব, ‘‘আমার মনে হয়, আর কোনও ধোঁয়াশা না রেখে বিশ্বকাপে ঋষভ পন্থকে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো উচিত। এখন থেকে ঋষভকে ধরে নিয়ে অঙ্ক করা দরকার।’’
উইকেটর পিছনে ধোনি এখনও দারুণ সপ্রতিভ হলেও উইকেটের সামনে ব্যাট হাতে তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। গত এক বছরে ২৩টি ওয়ান ডে মিলিয়ে ধোনির ব্যাটিং গড় মাত্র ২৬.৬৯। স্ট্রাইক রেটও কমে এসেছে ৭২-এ। এই এক বছরে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। দীর্ঘ সময় ধরে নিশ্চুপ থাকা ব্যাট সামনের বছরে ইংল্যান্ডে গিয়ে রাতারাতি জ্বলে ওঠা কি সম্ভব? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিতে যাচ্ছে বিরাট কোহালিদের সামনে। অধিনায়ক কোহালি যদিও তিরুঅনন্তপুরমে সিরিজ জেতার পরে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ধোনির সঙ্গে কথা বলেই তাঁকে টি-টোয়েন্টি থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়নি ধোনিকে। তিনি নিজেই চেয়েছেন, ঋষভ পন্থের মতো তরুণদের টি-টোয়েন্টিতে বেশি করে খেলিয়ে তৈরি করা হোক।
আরও পড়ুন: শাহরুখকে দেখলে ইডেনে টেস্ট না খেলার দুঃখ হয় লারার
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি ধোনিকে বিশ্বকাপের দলে রেখেই কোহালি-শাস্ত্রীরা নকশা সাজাচ্ছেন। আজহার যেটাকে সমর্থন করছেন না। তাঁর মতে, বিশ্বকাপ জিততে গেলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাতেই হবে। যত দেরি করা হবে তত ধোনির জায়গায় আসা পরিবর্ত থিতু হওয়ার জন্য কম সময় পাবে। ‘‘এত বড় এক জন ক্রিকেটারকে সরিয়ে যদি নতুন মুখ আনা হয় আর তাকে যদি বিশ্বকাপে খেলানো হয়, তা হলে কিছুটা সময়ও তো দিতে হবে, তাই না? আর তো পনেরোটা মতো ওয়ান ডে পড়ে আছে,’’ বলছেন আজহার।
ভারতের হয়ে দু’টি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারের আরও মনে হচ্ছে, ধোনিরই উচিত পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজে থেকে সরে যাওয়া। ‘‘টেস্ট থেকে তো ধোনি নিজেই সরে গিয়েছিল। সে রকমই ওয়ান ডে-তেও আর হচ্ছে না, এটা মেনে নিয়ে নিজে থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। না হলে অত বড় ক্রিকেটারকে বসাতে গেলে সেটা খুবই অপ্রীতিকর একটা পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়াবে,’’ ব্যাখ্যা আজহারের। এখানেই না থেমে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আর যদি বিশ্বকাপে খেলবেই মনে হয়, তা হলে ধোনির উচিত ছিল রঞ্জি ট্রফিতে খেলা। ব্যাটিংয়ে যে ভুলগুলো থেকে যাচ্ছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেমে মেরামত করা যাবে না। তার জন্য রঞ্জিতে খেলে তৈরি হতে হবে।’’ ইডেনে ওয়ান ডে-তে ৯ ম্যাচে আজহারের সংগ্রহ ৩৩২। গড় ৪৭.৪২। সর্বোচ্চ ৯০। টেস্টে ৭ ম্যাচে ৮৬০ রান। গড় ১০৭.৫০। পাঁচটা সেঞ্চুরি। বরাবর এখানে সফল হয়েছেন, তাই তাঁকে ইডেনের বাদশা বলেও ডাকা হয়। হিরো কাপের পঁচিশ বছর উদযাপন উপলক্ষে সিএবি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সকালে বিমানবন্দরে নামার সময়েই বোঝা গিয়েছিল, এখনও তাঁকে ঘিরে এখানকার মানুষের আগ্রহ কমেনি।
ছেলে আসাদউদ্দিনকে নিয়ে এসেছিলেন। হোটেলে তাঁকে পাশে বসিয়েই হিরো কাপের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘‘সেরা অনুভূতি সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ওভারে হারানো। সচিনের সেই দুর্দান্ত ওভার। কেউ ভাবতেই পারেনি আমরা জিতব। ম্যাচটা জেতার পরে গোটা ইডেন মশাল জ্বালিয়ে উৎসব করেছিল।’’ তবে রাতের ইডেনের সেই দৃশ্য মনে থাকলেও হিরো কাপে নিজে যে সব চেয়ে বেশি রান করে সিরিজের সেরা হয়েছিলেন, সেটাই মনে নেই তাঁর। তবে মনে আছে অন্য কথা— ‘‘হিরো কাপ আমাদের দলটার জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এর পর অনেকগুলো ত্রিদেশীয় বা চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্ট জিতি, দেশের মাঠে বড় বড় সিরিজ জিতি। হিরো কাপ জয় আমাদের মধ্যে বিশ্বাস এনে দিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy