Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ফেড এক্সপ্রেসের সাফল্যের নেপথ্যে ষোলো বছরের মিক্সড ডাবলস জুটি

ইতিহাসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে প্রায় ভোর পর্যন্ত নেচেছেন। এত নেচেছেন যে, পায়ের ব্যাথা সারতে সারতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে বলছেন। স্বাভাবিক ভাবেই রজার ফেডেরারের ঘরে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে পারেনি তাঁর চার ছেলেমেয়ে। তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল!

২০০২ হপম্যান কাপে স্বপ্নের জুটি।

২০০২ হপম্যান কাপে স্বপ্নের জুটি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

ইতিহাসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে প্রায় ভোর পর্যন্ত নেচেছেন। এত নেচেছেন যে, পায়ের ব্যাথা সারতে সারতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে বলছেন। স্বাভাবিক ভাবেই রজার ফেডেরারের ঘরে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে পারেনি তাঁর চার ছেলেমেয়ে। তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল!

‘‘ট্রফি নিয়ে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওরা উঠে পড়ল। কী রকম অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু খুব আনন্দও হচ্ছিল, কারণ ঘুম থেকে উঠেও ওরা সব দারুণ মেজাজে ছিল,’’ বলেছেন রজার ফেডেরার। যিনি এ দিন ট্রফি নিয়ে মেলবোর্নে মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়ে আটকে পড়েন সাংবাদিকদের ভিড়ে।

‘ওরা’ মানে তাঁর দু’জোড়া যমজ সন্তান— শার্লিন রিভা, মায়লা রোজ, লিও এবং লেনি। এই চার খুদে এবং ফেডেরারের স্ত্রী মিরকা, সুইস টেনিস কিংবদন্তির বেসরকারি সাপোর্ট স্টাফ।

বিশেষ করে মিরকা।

ফেডেরারের আট বছরের স্ত্রী তাঁর ঐতিহাসিক সাফল্যে রবিবার কতটা আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন, সেই ভিডিও ইন্টারনেট ঘাঁটলেই উঠে আসবে। ট্রফি নিয়ে লকাররুমে ঢুকছেন ফেডেরার আর তাঁকে জড়িয়ে ধরছেন মিরকা। আলিঙ্গন ভেঙে মাঝে মাঝে চুমু খাচ্ছেন তাঁর ঠোঁটে, গালে। কখনও সগর্ব স্নেহে মাথার চুল ঘেঁটে দিচ্ছেন।

দীর্ঘ ষোলো বছরের প্রেম কাহিনি মিরকা-রজারের। প্রথমে একসঙ্গে টেনিস খেলতেন। হপম্যান কাপে দু’জনে একসঙ্গে খেলেছেন। কিন্তু বারবার ফিরে আসা পায়ের চোট মিরকার টেনিস কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হতে দেয়নি। ২০০২-এ অবসর নিয়ে পাকাপাকি ভাবে ফেডেরারের ‘ওয়ান ওম্যান ট্র্যাভেলিং ফ্যান ক্লাব’ হিসেবে আবির্ভাব ঘটান। প্রেমিক এবং তার পর স্বামীর সঙ্গে সার্কিটে নিয়মিত দেখা যায় মিরকাকে— পেশাদার টেনিসে যা বিরল। তার চেয়েও বিরল, ফেডেরারের ম্যানেজারও মিরকাই। স্বামীর স্পনসরশিপ থেকে শুরু করে তাঁর শিডিউল ঠিক করা— সব কিছুই সামলাতেন মিরকা। কিন্তু কখনওই সামনে আসেননি।

রবিবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে ফেডেরার-মিরকা।

এক সাক্ষাৎকারে এক বার ফেডেরার বলেও দিয়েছিলেন যে, তাঁরা দু’জন দু’জনকে ছেড়ে থাকতে চান না। ‘‘মিরকা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে না, আমি মিরকাকে ছেড়ে থাকতে পারি না। এ ভাবে আমরা গোটা বছর একসঙ্গে থাকতে পারি। না হলে সর্বোচ্চ স্তরে লড়াই করাটা কঠিন নয়, অসম্ভব হয়ে যেত,’’ বলেছিলেন ফেডেরার।

টেনিস মহলের অনেকেই মনে করেন, ফেডেরারের এই প্রত্যাবর্তনের পিছনে অবশ্যই মিরকার ভূমিকা রয়েছে। চোট পাওয়ার পর থেকে যেটা আরও বেশি করে ফেডেরারকে সাহায্য করেছে। এবং স্বামী যখন কোর্টে মহাকাব্য সৃষ্টি করেন, গ্যালারিতে স্ত্রীর মুখে ম্যাচের তাৎক্ষণিক প্রতিচ্ছবিগুলো ফুটে ওঠে। ওয়ারিঙ্কার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালে যেমন। তাঁর পাঁচ সেট লড়াই বাকিরা উপভোগ করছেন আর মিরকা দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে। তার পর ফাইনালেও বারবার দু’হাত মুঠো করে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা গিয়েছে আটত্রিশ বছরের মিরকাকে।

অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালে চড়া গোলাপি রঙের যে ডিজাইনার সোয়েটারটা পরেছিলেন মিরকা, সেটা রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছিল। তাঁর ফ্যাশন বোধ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তার চেয়েও নজরকাড়া সোয়েটারে লেখা শব্দগুলো— লাভেউল পার আমো। বাংলা তর্জমা— প্রেমে অন্ধ।

কিংবদন্তি কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ফিটনেস গুরু, এঁরা তো আছেনই। রজার ফেডেরারের রজার ফেডেরার হয়ে ওঠার পিছনে এঁদের অবদান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সহধর্মিনীর অটল সাহচর্য না থাকলে আজ তিনি এই স্বপ্ন বাস্তব করতে পারতেন কি?

বোধহয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Mirka Federer Roger Federar Australian Open
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE