হল না তিন পয়েন্ট। হতাশ সনি মাটিতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মোহনবাগান-০
শিলং লাজং এফসি-০
মাননীয় সঞ্জয় স্যার,
আই লিগে টানা এগারো ম্যাচ অপরাজিত থাকার জন্য শুভেচ্ছা নেবেন। আপনার টিম রোজ স্বপ্ন দেখাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কাঁকসার লক্ষ লক্ষ মোহনবাগান সমর্থককে।
তিন বছর আগে ফাইনাল না খেলে পাওয়া এয়ারলাইন্স কাপ না ধরলে শেষ বার সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ট্রফি ঢুকেছিল ২০১০ সালের মে মাসে। যখন রাজ্যে শাসক দল ছিল অন্য। আর আই লিগ! সেটা যখন শেষ বার ১২৫ বছরের পুরনো ক্লাবে ঢুকেছিল তখন দিল্লির মসনদে অটলবিহারী বাজপেয়ী! ট্রফিটার নামও তখন আই লিগ না হয়ে ছিল জাতীয় লিগ।
করিম, মর্গ্যান, সতৌরিদের মতো বিদেশি কোচদের ভিড়ে ভারতীয় ফুটবল প্রশিক্ষকরাও যে দাপটের সঙ্গে আই লিগে রাজত্ব করতে পারেন তার প্রমাণ এ বার আপনি।
তবে কিছু আশঙ্কাও দেখতে পাচ্ছি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাগান সমর্থকরা চাতকের মতো বসে রয়েছে এই লিগটার জন্য। এ বার আপনি যেমন এগারো ম্যাচে বাগানকে ২৫ পয়েন্ট এনে দিয়ে এখনও লিগ শীর্ষে রেখেছেন তা দেখলেই ২০০৮–০৯ মরসুমের করিম বেঞ্চারিফার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে বারও টানা দশ ম্যাচ জিতে ভারতীয় ফুটবলে হইচই বাধিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু মরসুমের শেষে আই লিগ আসেনি। সে বার সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গল বাগানকে হারানোর পরই করিমের টিম চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায়। তার পর চার্চিল ব্রাদার্স, মহিন্দ্রার কাছে হার আর জেসিটির সঙ্গে ড্র লিগের স্বপ্ন ভেঙে দেয় বাগান সমর্থকদের।
রোজ তাই মনে মনে বাগান সমর্থকরা বলছেন, এ বার যেন তীরে এসে তরি না ডোবে। কিছু মনে করবেন না, বুধবার বারাসতে লাজংয়ের বিরুদ্ধে আপনার টিমকে দেখে আশঙ্কা একটু বেড়েছেই।
এক) এ বারের লিগে অ্যাওয়ে রেকর্ড ভাল রাখা লাজং যে মাঝমাঠে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে ড্রয়ের জন্য নামবে তা কি আপনি জানতেন না?
দুই) উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবেন না বলে কিংশুককে এ দিনও রাইট ব্যাকে খেলালেন। দেশের সেরা রাইট ব্যাক প্রীতম কোটালকে বেঞ্চে রেখে দেওয়াটা কি একটু ঝুঁকি হয়ে যায়নি?
তিন) দুই স্টপারের মধ্যে আনোয়ার আর বেলো প্রায়ই এক সরলরেখায় চলে আসছেন। যার সুযোগ নিয়ে এ দিন আপনার রক্ষণে দাপিয়ে বেড়ালেন গ্লেনরা। অন্য টিম বাকি ন’টা ম্যাচে এই জায়গাটায় কিন্তু নিশানা বানাতেই পারে।
চার) পেন-লেনরা প্রথমাধর্টা ডাবল কভারিং আর প্রেসিং ফুটবল দিয়ে দুই উইংয়ে সনি আর কাতসুমিকে বোতলবন্দি করে রাখল। এই থিওরি অন্য দলগুলো টুকলে কী হবে?
পাঁচ) সনি আউট সাইড ডজ করে উইংয়ের দিকে সরে গিয়ে ক্রস তোলার বদলে কেন বিপক্ষের ফানেলিংয়ে বার বার ঢুকে পড়ছেন?
ছয়) আপনার ফুটবলারদের কি কেউ কড়া ট্যাকল করবে না? আপনি বার বার বলা সত্ত্বেও রোজ কেন কার্ড দেখছে বাগান ফুটবলাররা? এ দিন সনি যেমন পাল্টা-প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখলেন।
সাত) স্কোরিং জোনে গিয়ে সনি-বলবন্ত-কাতসুমিরা পাস না দিয়ে এত স্বার্থপর ফুটবল খেলায় ব্যস্ত কেন?
আট) শেষ কয়েকটা ম্যাচে কিপার দেবজিৎ ম্যাচ সেরা। টিমের রক্ষণের পক্ষে যেটা কিন্তু ভাল বিজ্ঞাপন নয়। লাজংয়ের বিরুদ্ধে দেবজিৎ তিনটে নিশ্চিত গোল না বাঁচালে ম্যাচটার ফল আপনার বিপক্ষে যেতেই পারত।
নয়) একাদশ ম্যাচেও মাঝমাঠে ব্লকিং ঠিকঠাক হচ্ছে না। ফলে পেনদের সব আক্রমণ এ দিন এসে আটকেছে দেবজিতের কাছে। দ্বিতীয়ার্ধে প্রেসিং ফুটবল খেলে যখন সেটা রুখলেন, তা হলে প্রথমার্ধে শেহনাজরা সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন কেন?
সমর্থকরা আশায়, এগুলো সব আপনি শুধরে ফেলবেন। আসলে পাঁচ বছর ট্রফি না পেয়ে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে দু’-এক জন পঁচাত্তরের উমাকান্ত পালোধি না হয়ে বসেন!
আপনার হাতে আই লিগটা উঠছে এটা মনে করে রোজ ঘুমোতে যাচ্ছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। করিম জমানার দুঃস্বপ্ন ফিরে আসুক চাইছেন না যে কেউই।
ইতি
এক ময়দানি কলমচি।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, কিংশুক (প্রীতম), আনোয়ার, বেলো, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, লালকমল (সৌভিক চক্রবর্তী), শেহনাজ, সনি, বোয়া, বলবন্ত (জেজে)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy