Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সিংহের গুহায় আজ নাইট-অভ্যর্থনায় পিচ আর মিচ

পুণে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো মানচিত্রগত এবং নৈসর্গিক ব্যপ্তি ধর্মশালা বাদে ভারতবর্ষের ক’টা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আছে, বলা খুব মুশকিল। স্টেডিয়ামে ঢোকার রাস্তাটাকেই ধরা যাক। ধু-ধু হাইওয়ে ধরে যেতে-যেতে আচমকাই পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে শুরু করবেন। বাঁ দিকে যদি চোখ রাখেন, সার-সার টিলা দাঁড়িয়ে। স্টেডিয়ামের সবচেয়ে উপরের গ্যালারিতে উঠলে বিকেল-বিকেল একটা শিরশিরে হাওয়া দেয়, যা বেশ তৃপ্তির। বিশালত্বেও বোধহয় স্টেডিয়ামটা বাকিদের চেয়ে একটু স্বতন্ত্র। এন্ট্রি গেট পেরোলে বিশাল ফাঁকা জায়গা, ছড়ানো-ছেটানো পার্কিং লট। আধুনিক ক্রিকেটের আদর্শ বিচরণভূমি বললে খুব ভুল হবে না।

দই-ভাত আর খিচুড়ি খেয়ে পেটের সমস্যা সারিয়ে ফেলেছেন। শনিবার খেলছেনও গৌতম গম্ভীর। তাঁর টিমের জন্য সবুজ আভা পিচের ব্যবস্থা করেছে কিঙ্গস ইলেভেন। তবু ফুরফুরে গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।

দই-ভাত আর খিচুড়ি খেয়ে পেটের সমস্যা সারিয়ে ফেলেছেন। শনিবার খেলছেনও গৌতম গম্ভীর। তাঁর টিমের জন্য সবুজ আভা পিচের ব্যবস্থা করেছে কিঙ্গস ইলেভেন। তবু ফুরফুরে গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
পুণে শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

পুণে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো মানচিত্রগত এবং নৈসর্গিক ব্যপ্তি ধর্মশালা বাদে ভারতবর্ষের ক’টা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আছে, বলা খুব মুশকিল। স্টেডিয়ামে ঢোকার রাস্তাটাকেই ধরা যাক। ধু-ধু হাইওয়ে ধরে যেতে-যেতে আচমকাই পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে শুরু করবেন। বাঁ দিকে যদি চোখ রাখেন, সার-সার টিলা দাঁড়িয়ে। স্টেডিয়ামের সবচেয়ে উপরের গ্যালারিতে উঠলে বিকেল-বিকেল একটা শিরশিরে হাওয়া দেয়, যা বেশ তৃপ্তির। বিশালত্বেও বোধহয় স্টেডিয়ামটা বাকিদের চেয়ে একটু স্বতন্ত্র। এন্ট্রি গেট পেরোলে বিশাল ফাঁকা জায়গা, ছড়ানো-ছেটানো পার্কিং লট। আধুনিক ক্রিকেটের আদর্শ বিচরণভূমি বললে খুব ভুল হবে না।

এপ্রিল-মে মাসের পুণে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢুকলে আরও একটা জিনিস দেখতে পাবেন। ঝাঁ চকচকে স্টেডিয়ামটার গায়ে গর্জনরত সিংহের অতিকায় মুখ সেঁটে দেওয়া হয়েছে। পোস্টার সব। কোনওটায় কভার ড্রাইভ মারার পোজ দিয়ে ম্যাড ম্যাক্স। কোথাও আবার ‘ইফ ইটস ইন দ্য আর্ক, আউট অফ দ্য পার্ক’ শাসানি সহ ব্যাট হাতে ‘কিলার মিলার’। এক পাশে পরপর কয়েকটা শব্দ লেখা— প্লে, উইন, রোর। আরও একটা চোখে পড়ল। পঞ্জাব টিমের গোটা পাঁচ-ছয় ওখানে দাঁড়িয়ে। উপরে বড়-বড় করে লেখা— ওয়েলকাম টু দ্য ডেন অব লায়ন্স। যার বাংলা তর্জমা মোটেও দুর্বোধ্য নয়।

প্রতিপক্ষ, সিংহের গুহায় তোমাকে স্বাগত!

বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ গৌতম গম্ভীর যখন টিম নিয়ে মাঠে ঢুকলেন, তখন এমন পোস্টারের মাধ্যমে অদৃশ্য শাসানি দেখলেন কি না জানা নেই। কেকেআর ক্যাপ্টেনকে মাঠে ঢুকেই দৌড়তে হল সাংবাদিক সম্মেলনের ঝুটঝামেলা মেটাতে। সেখান থেকে মাঠ। ‘শরীর এখন কেমন’ প্রশ্নে একবার বিরল হাসিটাও বেরোল। কিন্তু সিংহের গুহায় যে বন্দোবস্ত নিঃশব্দে করছে পঞ্জাব-মগজাস্ত্র, তাতে শেষ পর্যন্ত কেকেআর ক্যাপ্টেন হাসতে-হাসতে শনিবার রাতে মাঠ ছেড়ে বেরোতে পারবেন কি না, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

মন্ত্রটা খুব সহজ। কেকেআরের মতো স্পিন-নির্ভর টিমের জন্য সেটা আরও পরিষ্কার।

পিচে সবুজ আভা রাখো, আর লেলিয়ে দাও মিচেল জনসনকে। যত পারো নিষ্ক্রিয় করতে থাকো কেকেআরের স্পিন-ব্রহ্মাস্ত্রদের, যাদের ক্যাপ্টেনের নাম সুনীল নারিন! যতই গম্ভীরের তূণে একটা মর্নি মর্কেল থাক, ‘কেকেআরকে আসলে জেতায় কে’ জাতীয় প্রশ্নে পাঁচ বছরের শিশুও তো এখন হাত তুলবে!

রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ একবার দেখা গেল, পিচের দিকে আপন মনে হাঁটছেন গম্ভীর। নেট সেশন অনেক আগে শেষ। সতীর্থদের কেউ কিট গোছাচ্ছেন। কেউ ততক্ষণে টিম বাসের দিকে। কেকেআর ক্যাপ্টেনের সে সবে ভ্রূক্ষেপও নেই। কিউরেটরের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা বলে গম্ভীরকে দেখা গেল পিচের সামনে গিয়ে শ্যাডো করে চলেছেন। ব্যাট ছাড়া, শুধু হাত দিয়ে। যেন গভীর মনোযোগে ভিস্যুয়ালাইজ করে চলেছেন অদৃশ্য বলকে!

কী করবেন তিনি? মাঠ, মাঠের বাইরের সমস্ত বল তো তাঁকেই এখন খেলতে হচ্ছে। বাইশ গজে টিমের এক নম্বর ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে বারবার আবির্ভূত হচ্ছেন। দুটো ম্যাচের দুটোতেই হাফসেঞ্চুরি। আবার মাঠের বাইরের বিষাক্ত ডেলিভারিগুলোও একান্ত তাঁর জন্য। কলকাতা হোক বা পুণে, এক প্রশ্নের চর্বিতচর্বন। ‘নতুন’ নারিন দিয়ে হবে? সাকিব নেই, কী হবে? সর্বশেষটা হল, সবুজ আভা পিচে পঞ্জাব পেস ব্যাটারির সঙ্গে পারবে আপনার স্পিন-অ্যাটাক?

লোকে ভুলেই যাচ্ছে, জনসনের নেতৃত্বাধীন ওই পেস ব্যাটারিকে গম্ভীররা গত আইপিএল থেকে চূর্ণ করেছেন তিন-তিন বার। লোকে ভুলে যাচ্ছে, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল বা ফাইনালের আগুনে জনসন শনিবার রাতে পঞ্জাব জার্সিতে বোলিং রান আপ থেকে দৌড় শুরু করবেন না। শুরু করবেন যে জনসন, তাঁর সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি রেকর্ড খুব সুখের নয় এবং বর্তমানে তাঁকে বেশ নিষ্প্রভই দেখাচ্ছে। গত পরশুও এই পুণে স্টেডিয়ামেই তাঁকে মেরে পাট-পাট করে দিয়েছেন যুবরাজ আর ময়ঙ্ক অগ্রবাল! এটাও কেউ মনে রাখছে না যে, গম্ভীরের টিমটা আদতে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিম। গত তিন বছরে দু’বার এবং শেষেরটার বয়স এক বছরও পেরোয়নি!

মজার হচ্ছে, গম্ভীর নিজেও ব্যাপারটা জানেন। পাল্টা স্ট্র্যাটেজি করছেন। যেখানে উমেশ যাদবের নাম আবার ঘোরাফেরা করছে আড়াই কোটির বিস্ময় স্পিনার কারিয়াপ্পার জায়গায়। সাকিবের স্লটে নাকি আজহার মেহমুদ বা রায়ান টেন দুশখাতের কেউ। আর কেকেআর ক্যাপ্টেনের কাছে সবুজ আভা পিচ রেখে জনসনকে ছেড়ে দেওয়া আশ্চর্যের নয়। একবার তো তাঁকে বলতেও শোনা গেল যে, মোহালির মতো বাউন্সি উইকেট থাকবে সেটা জানা কথা। কিন্তু বহির্বিশ্ব বুঝছে না। পঞ্জাবও না। তারাও বাউন্সি পিচ এবং জনসন টোটকাতেই কেকেআরকে মারতে চাইছে। শন মার্শ যেমন। একটা ম্যাচও খেলেননি এখনও প্রীতি জিন্টার টিমের হয়ে। তিনিও চিবিয়ে-চিবিয়ে শুনিয়ে গেলেন, “আরে, মিচ যে দিন ওর বোলিংটা করবে, কেউ পারবে না সামলাতে!”

মার্শ আরও একজনের নাম মনে করিয়ে গেলেন। বাস্তববিচারে যাঁর সত্যি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। ম্যাক্সওয়েল-মিলারদের বাজারেও তাঁর দর এতটুকু পড়েনি। ছত্রিশেও পঞ্জাবের ব্যাটিং ঔদ্ধত্যকে টানা টানছেন। একা। আর হ্যাঁ, সকালের চড়া রোদে প্র্যাকটিসে চশমা পরা ভদ্রলোক পাঁচ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে টাওয়েল হাতে ড্রেসিংরুমে যে ঢুকলেন, আর বেরোননি। কী, ব্যাটিং? নাহ্, ও সবের মধ্যে যানইনি। শোনা গেল, চোটও নেই। একদম ঠিক আছেন।

বীরেন্দ্র সহবাগ যাবতীয় ব্যাটিং গোতির জন্য তুলে রাখলেন কি না, কে জানে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE