মনদীপ। ১৮ বলে ৪৫।
কেকেআর-কে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই ভাবে! এমন ধন্যবাদ কি আর কখনও পেতে চাইবে কলকাতা নাইট রাইডার্স? বোধহয় না। কিন্তু ধন্যবাদ কেন? এই কেকেআরের হাত ধরেই যে তাঁর আইপিএল গ্রহে পা রাখা। শনিবার সরব চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সেই কেকেআর নিধন হল কি না তাঁর হাতেই! তিনি— মনদীপ সিংহ। তাঁর সঙ্গে কেকেআরের সম্পর্কের কথা হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, ২০১০-এ নাইটদের হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলেছিলেন এই পঞ্জাবী-মুন্ডা। তখন তাঁর বয়স ১৯। সেই তিন ম্যাচে সব মিলিয়ে চার রান করা সেই মনদীপই শনিবার ১৮ বলে ৪৫ তুলে নাইটদের হারের দরজা দেখিয়ে দিলেন। শেষ ওভারে যখন তাঁদের বারো রান দরকার, তখন আন্দ্রে রাসেলকে পরপর দু’বার সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ইটের জবাব কী করে পাথরে দিতে হয়। একটা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট এবং অন্যটা যখন স্কোয়ার লেগের আকাশ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন ২৪ বছরের এই তরুণ, তখন চিন্নাস্বামীর আওয়াজ সারা বেঙ্গালুরুতে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম।
শনিবারের বেঙ্গালুরু আরও একটা কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে গেল। কেকেআর ছেড়ে যারা যায়, তারা নাইটদের বিরুদ্ধেই যেন বেশি ভাল খেলে। উদাহরণ ক্রিস গেইল, উদাহরণ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। উদাহরণ মনদীপ সিংহ। এ ছাড়া সঞ্জু স্যামসনের মতো তরুণ ক্রিকেটাররাও আছেন, যাঁরা নাইটদের ছেড়ে গিয়ে যেন ডানা মেলেছেন।
ম্যাচের পর মনদীপ বলছিলেন, ‘‘মারার বল মারব, ছাড়ার বল ছাড়ব— শেষ ওভারে এই ভেবেই ব্যাট করছিলাম। বাড়তি চাপে নিজেকে পড়তে দিইনি।’’ শেষ ওভারটা গৌতম গম্ভীর তুলে রেখেছিলেন শনিবারের সেরা নাইটের জন্য। আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু সেই রাসেল দু’টো ভুল করে গেলেন দশম ওভারের তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনই। এই ক্রিকেটে আজ যে রাজা কাল সে ফকির প্রবাদবাক্যটা ঠিক নয়। বরং বলা উচিত বিকেলে যে রাজা, সন্ধ্যায় সে ফকির হয়ে যেতে পারে। রাসেলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সে রকমই হল। তুমুল বৃষ্টির পর প্রতি ইনিংস দশ ওভারে নেমে আসার পর এই রাসেলই ১৭ বলে ৪৫ তুলে কেকেআর-কে একশো পার করিয়ে দেন। বল হাতে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে আরসিবি-কে হারের দিকে ঠেলেও দিয়েছিলেন। অথচ সেই রাসেলের শেষ ওভারেই শেষ তাঁর দল কেকেআর। এখানেই শেষ নয়, তার একটু আগে এই মনদীপের ব্যাট থেকে ওঠা কঠিন ক্যাচই ফেলেছেন রাসেল। উথাপ্পা (২৩), গম্ভীর (১২), দুশখাতে (১২), পাঠানরা (১১) মিলে যখন ৫৮-র বেশি তুলতে পারলেন না, তখন রাসেলের ইনিংসই ছিল কেকেআরের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু পরের ইনিংসে সেই ক্যারিবিয়ান তারকার ভুলেই ম্যাচ হাত থেকে ফসকে গেল।
খেলা শেষে রায়ান টেন দুশখাতেকে হারের ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিক বৈঠকে পাঠিয়েছিলেন গম্ভীর। তাঁর মোদ্দা বক্তব্য হল, ‘‘আমরা যথেষ্ট রান করেছিলাম। কিন্তু মনদীপ যদি শেষ দিকে এ রকম খেলে দেয়, তা হলে কিছু করার নেই। তা ছাড়া তুমুল বৃষ্টিতে আমাদের ছন্দ কিছুটা হলেও নষ্ট হয়েছিল। অতক্ষণ ধরে ওয়ার্ম আপ করার পর যদি গোটা দলটা বসে যায়, তা হলে তো তার প্রভাব পড়বেই। যদিও এখন এগুলো অযুহাতের মতো শুনতে লাগছে। তবে কৃতিত্ব ওদের দিতেই হবে।’’
দুই দিল্লিওয়ালা নেতা গম্ভীর ও কোহলি টস করতে যাওয়ার মিনিট দশেক আগেও যে চড়া রোদ মাথায় নিয়ে বেঙ্গালুরুর ব্যস্ততম মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে কাতারে কাতারে ক্রিকেটপ্রেমীদের চিন্নাস্বামীমুখো হতে দেখা গিয়েছিল, টসের ঠিক আগেই সেই রোদ উধাও। তার জায়গায় আকাশ ভরে এল কালো বিদঘুটে মেঘ। তার পরই মিনিট ৪৫-এর ধোঁয়াধার বৃষ্টি। তার পর আরও আধ ঘন্টার ঝিরঝিরে বৃষ্টি। যা ইডেনের আকাশ থেকে নামলে সে দিন কেন, পরের দিনও হয়তো খেলা হত না। কিন্তু চিন্নাস্বামীর ড্রেনেজ সিস্টেম ও কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার মাঠকর্মীদের অসাধারণ ‘ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ কৌশল জিতিয়ে দিল তাদের। আসলে এ দিন দুটো ম্যাচ দেখল চিন্নাস্বামীর গ্যালারি। প্রথমটা এখানকার মাঠকর্মীদের দল ও জমে থাকা থই থই জলের মধ্যে, যেটায় জিতলেন মাঠকর্মীরাই এবং পরেরটা কেকেআর বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
উইকেন্ডের আনন্দকে চেটেপুটে উপভোগ করতে বৃষ্টির মধ্যেও ভিজে লাল-সোনালি পতাকা ও পোশাকে মোড়া গ্যালারি ভরা দর্শকরা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই দর্শকদের এ দিন প্রিয় দলের হার দেখে ফিরতে হলে, তা বোধহয় ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ হত না।
কিন্তু বিরাট কোহলি লং অনে সূর্য কুমার যাদবের হাতে ধরা পড়তেই সেই সরব চিন্নাস্বামীতে প্রায় শ্মশানের স্তব্ধতা ছেয়ে যায়। তখনও জয় থেকে ৩১ রান দূরে তাঁর দল। তার পরই দলের হাল নিজের কাঁধে তুলে নিলেন পঞ্জাবের কৃষক পরিবারের ছেলে মনদীপ। ডেভিড ওয়েস ছিলেন সঙ্গতে।
‘বোম্বে ভেলভেট’ সিনেমার প্রচারে আসা অনুষ্কা শর্মা এবং রণবীর কপূরকে বলা হয়েছিল, আরসিবি-র সেরা ব্যাটসম্যান কে, সেটা আঁকতে।
এর পর দু’জনে যে ছবি আঁকেন, তার সঙ্গে বিরাট কোহলির মিল না থাকলেও জানা যায়, দু’জনেরই পছন্দের ব্যাটসম্যানের নাম কোহলি।
এটা অবশ্য জানা যায়নি, প্রেমিকার আঁকা ছবি দেখে কোহলির কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ছবি টুইটার
অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে গেল খেলা শেষে। ম্যাচের আগে অনেকক্ষণ প্রাকটিস করা সত্ত্বেও কেন মর্নি মর্কেল খেললেন না? দলের পক্ষ থেকে জানানো হল, চোট-আঘাত নয়, কৌশলগত কারণে। বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে আসা দলের সেরা পেসারকে বসিয়ে রাখাটা কী কৌশল হতে পারে? কেনই বা কামিন্সের মতো খরুচে পেসারকে টানা খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে? এমন স্ট্র্যাটেজি ক্রিকেট ব্যাকরণের সঙ্গে যাচ্ছে না বোধহয়। দ্বিতীয় প্রশ্ন এই মুহূর্তে দলের সেরা বোলার ব্র্যাড হগকে কেন শেষ দিকের একটা ওভারের জন্য রেখে দেওয়া হল না?
না, এর উত্তর দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া গেল না কেকেআর শিবিরে।
কিন্তু প্রথম চারে থাকতে গেলে যে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে গম্ভীর ও তাঁর দলকে।
ফের ঝামেলা গম্ভীর-কোহলির
নিজস্ব সংবাদদাতা • বেঙ্গালুরু
ফের গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির মধ্যে কথা কাটাকাটি আর ঝামেলা। এ বারও মাঠের মধ্যেই। শেষ পর্যন্ত দুই ক্যাপ্টেনের সতীর্থরা তাঁদের নিরস্ত করেন। দীনেশ কার্তিক, অশোক দিন্দা ও কয়েকজন নাইট দুই নেতাকে না আটকালে হয়তো আরও বড় চেহারা নিত ঘটনাটা। শনিবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মনদীপ সিংহ জয়সূচক ছয়টা মারার পরই ডাগ আউট ছেড়ে মাঠের মধ্যে দৌড়ে ঢুকে পড়েন আরসিবি-র ক্রিকেটাররা। সেই দলে ছিলেন কোহলিও।
ছবি পিটিআই।
সতীর্থদের সঙ্গে যখন জয় সেলিব্রেট করছেন, তখনই গম্ভীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। মনদীপ রাসেলের বলে পরপর দুটো ছয় মারায় গম্ভীরকে দৃশ্যতই খুব উত্তেজিত লাগছিল। তার পরই ওই ঝামেলা। ঝামেলার পর দুই দলের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলালেও দুই অধিনায়ক কিন্তু নিজেদের মধ্যে হাত মেলাননি। যদিও ম্যাচ শেষে সেলিব্রেট করতে ড্রেসিংরুমে ভাঙড়া নাচেন বেঙ্গালুরু ক্রিকেটাররা। তবে দিল্লির দুই ক্রিকেটারের মধ্যে এমন ঝামেলা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৩-র আইপিএলেও এই চিন্নাস্বামীতেই কোহলি-গম্ভীরের ঝগড়া হয়। সে বারের থেকেও এ দিন তার চেয়েও বেশি উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে এক প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কেকেআর ১১১-৪ (রাসেল ৪৫, স্টার্ক ১-১৫)
বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ১১৫-৩ (মনদীপ ৪৫, পীযূষ ১-২১)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy