ত্রয়ী: ইস্টবেঙ্গলের গোলদাতারা। আমনার দু’পাশে কাশিম ও রালতে (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল ৩ • এরিয়ান ০
শনিবার ছিল তাঁর বান্ধবী জুলির জন্মদিন। খেলা শেষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পাঁচ হাজার টাকার চেক হাতে বলছিলেন, ‘‘আজ আমার বান্ধবীর জন্মদিন। এই পুরস্কারটা জুলির।’’
কিন্তু তার পরেই লালডানমাউইয়া রালতে দেখলেন তাঁর মালয়ালি সতীর্থ জবি জাস্টিন ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থকদের কাছ থেকে কেরলের বন্যাত্রাণে অর্থ সংগ্রহ করছেন। লাল-হলুদ সমর্থকদের সহমর্মিতা দেখে আপ্লুত জবি বলছেন, ‘‘আমাদের পাশের গ্রামটা ভেসে গিয়েছে বন্যায়। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের এই সামাজিক কর্তব্যবোধ মনে রাখব।’’
যা দেখে সাংবাদিক সম্মেলনে মিজোরামের রালতেও বলে দিলেন, ‘‘পুরস্কারের অর্থটা বন্যাত্রাণেই দিয়ে দিচ্ছি।’’ তার পরেই তৃপ্তির হাসি খেলে যায় তাঁর মুখে। বোঝা যায়, চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করে গোলপার্থক্যে মোহনবাগানকে পিছনে ফেলে ফের কলকাতা লিগের শীর্ষে ওঠার দিনে ইস্টবেঙ্গল এখন সুখী পরিবার। ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে মশাল আর লাল-হলুদ রংমশালের স্ফুলিঙ্গ, ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ সে কথাই বলে।
দৃষ্টান্ত: কেরলের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ জবি জাস্টিনের। —নিজস্ব চিত্র।
বন্যাত্রাণ সংগ্রহে একটা বড় ব্যানার নিয়ে এ দিন মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। যেখানে বাংলায় লেখা ছিল, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ কাস্টমস ম্যাচে ড্রয়ের পরে ইস্টবেঙ্গলে যে চিন্তার কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছিল, তা কেটে গিয়ে এখন ‘সূর্য’ উঁকি মারছে ইস্টবেঙ্গলে। সুভাষ ভৌমিকের দলের সেই সূর্য মহম্মদ আল আমনা। সিরিয়ার এই ফুটবলার প্রথম দলে ফিরতেই ফের ঝলমলে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ। আমনা বল ধরে খেলেন। বাড়াতে পারেন ঠিকানা লেখা পাস। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর। একটা চোরা গতি রয়েছে। এগুলোই সামলাতে পারল না এরিয়ান। মাঝমাঠে আমনার নেতৃত্বেই ইস্টবেঙ্গল এ দিন এক সঙ্গে পাঁচ-ছ’টি পাস খেলে বিপক্ষ রক্ষণে ফাঁকফোকর বার করল। দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের ঢেউ আছড়ে ফেলল এরিয়ান রক্ষণে। দুই সাইড ব্যাক সামাদ আলি মল্লিক ও লালরাম চুলোভাও পাল্লা দিয়ে গেলেন ওভারল্যাপে। যার ফল ৩-০।
আমনা দ্বিতীয়ার্ধে বিপক্ষ বক্সে কমলপ্রীত সিংহের বাড়ানো বল ধরে ডান পায়ের দুরন্ত ‘টার্নিং’ নিলেন। তার পরে বাঁ পায়ে দর্শনীয় গোল করলেন। আর করালেন আরও দু’টো গোল। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের সময় কর্নার নিয়েছিলেন তিনি। সেই বলে জবি জাস্টিনের হেড দ্বিতীয় পোস্টে লেগে ফিরলে ফিরতি বলে হেড করে গোলে পাঠান কাশিম আইদারা। রালতের দ্বিতীয় গোলের সময়ও ব্র্যান্ডন সেন্টার তুলেছিলেন, আমনার বাড়ানো বল থেকেই।
এরিয়ান টিডি রাজদীপ নন্দী সিকিমের ছেলে সমীর প্রধানকে দিয়ে আমনাকে নিষ্প্রভ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল রক্ষণে লোক বাড়িয়ে দ্রুত প্রতি-আক্রমণে গোল তুলে নেওয়া। কিন্তু আমনা সেটা বুঝতে পেরে বার বার জায়গা পরিবর্তন করে ঘেঁটে দেন সেই পরিকল্পনা। ম্যাচ শেষে এরিয়ান টিডি বলছিলেন, ‘‘আমনাকে ধরতে পারল না ছেলেরা। আর রক্ষণে বেলো রজ্জাক খেলতেই পারেনি।’’
ফিনিশিংয়ের অভাবে এ দিন গোলসংখ্যা বাড়েনি ইস্টবেঙ্গলের। ইস্টবেঙ্গল কোচ বাস্তব রায় বলছেন, ‘‘আগে বেশি গোল নষ্ট হত। এখন তা কমেছে। আমরা উন্নতি করছি। আমনা ছাড়াও এ রকম খেলতে পারি।’’ যা শুনে হেসে ফেলেন সমর্থকরা।
এ দিনই ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা জানিয়ে দিলেন, নাইজিরিয়ার ফরোয়ার্ড গাম্বো মহম্মদের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি পাকা হওয়ার পথে। এ ছাড়াও আলেজান্দ্রো মেনেনদেস গার্সিয়া নামে রিয়াল মাদ্রিদ যুব দলের প্রাক্তন কোচের সঙ্গেও কথা চলছে তাঁদের। চুক্তি চূড়ান্ত হলে দুই সহযোগী কার্লোস নাদার ও মারিয়ো রিবেরা-কে নিয়ে আসতে পারেন তিনি।
ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগর, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, কিংশুক দেবনাথ, লালরাম চুলোভা, কমলপ্রীত সিংহ গ্রেওয়াল (প্রকাশ সরকার), লালডানমাউইয়া রালতে (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), কাশিম আইদারা, মহম্মদ আল আমনা (বালি গগনদীপ), ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকা, জবি জাস্টিন।
এরিয়ান: সৌভিক সাঁতরা, রাজু কোলে, কোরৌমা সেদৌ মাডি, বেলো রজ্জাক (চিনেডু এমানুয়েল), সুজয় মন্ডল, সমীর প্রধান, শুভঙ্কর সর্দার, কুণাল ঘোষ (ঋষি ছেত্রী), প্রীতম রায়, বিবেক সিংহ (সামশাদ আলি), গাট্চ আর্থার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy