এমসিজিতে লিলির সেই মূর্তি। ছবি: গেটি ইমেজেস
মঙ্গলবার বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ না থেকেও এমসিজিতে তাঁর মূর্তির সামনে ইতস্তত জটলা। নিউজিল্যান্ডের এক ক্রিকেটউৎসাহী আর জনৈক কলেজ ছাত্র দাঁড়িয়ে।
অকল্যান্ডবাসী নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটউৎসাহী অনেক বেশি খবর রাখেন দেখা গেল। ডেনিস লিলির বিশাল ব্রোঞ্জ মূর্তির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই একমাত্র বোলার যে সুনীল গাওস্করকেও ধারাবাহিক ভাবে হারিয়েছে।” ক্রিকেটবিশ্বের অন্য সব প্রান্তের মতো অস্ট্রেলিয়া মহাদেশেও গাওস্করের স্বীকৃতি খুব বেশি। কিন্তু কোনও নিউজিল্যান্ডবাসী ক্রিকেটউৎসাহী যে লিলির সিভি-তে গাওস্কর সংহার যোগ করে বসে আছেন সেটা সামনে থেকে না দেখলে জানা হত না।
যেমন জানা হত না ওই মূর্তি থেকে কুড়ি গজের মধ্যে যে ডেনিস লিলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ উল্টো কথা শুনতে হতে পারে। আর সেটা বলছে কারা, না যারা ওখানে মূর্তিটা সসম্মানে বসিয়েছে তারাই খোদ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া! ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সময় মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে যেমন তাঁদের কিছুতেই বনিবনা হচ্ছে না। তেমনই সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না ডেনিস লিলির সঙ্গে সম্পর্কের ট্র্যাফিক জ্যামের।
এ বারের বিশ্বকাপ সম্পর্কিত কোনও অনুষ্ঠানে যেমন মার্টিন ক্রো বা ইমরানকে পাওয়া যাচ্ছে না তেমনই লিলিও অনুপস্থিত থাকছেন। পারথে থাকেন এখন তিনি। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মিডিয়া জগতের এক কেষ্টবিষ্টু বললেন, “ডেনিস এখন স্বআরোপিত নির্বাসনে চলে গিয়েছে। পারতপক্ষে মিডিয়ায় আসে না।” ৭০ টেস্টে ৩৫৫ উইকেট (গড় ২৩.৯২) আর ওয়ান ডে-তে মাত্র ২০ গড় সহ ১০৩ উইকেট নেওয়া লিলি সব সময় মিডিয়ার পছন্দ। আক্রমণাত্মক কথা বলেন। বিশ্লেষণ ক্ষমতা ভাল। পারথের কাগজে নিজের কলামও লিখতেন, যা খুব জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়েছেন। একাধিক ভারতীয় টিভি চ্যানেল বিশ্বকাপের জন্য যোগাযোগ করেছিল। রাজি হননি।
কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাঁকে বিশ্বকাপ প্রচারের জন্য কাজে লাগাতে চেয়েছিল সেটাও পত্রপাঠ না বলেছেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আর এক মুখপাত্র জানালেন, লিলি সরাসরি না বলেননি। কিন্তু মোটা টাকা চেয়েছেন। সেই টাকার অঙ্ক নাকি এতই বেশি যে, তাঁদের মনে হচ্ছে, না বলার জন্য অঙ্কটা এত বাড়িয়ে বলা।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মুখপাত্র বললেন, “আজ গ্রেগ চ্যাপেল ব্রিসবেন থেকে আমাদের জন্য ওঁর অডিও ইন্টারভিউ রেকর্ড করলেন। কত ভদ্র, কোনও সমস্যাই হয়নি। কিন্তু লিলিকে কে বোঝাবে? খুব কঠিন লোক।”
আসলে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচ ছিলেন লিলি। অ্যাসেজ সিরিজের সাফল্যের পর চুক্তি নবীকরণের জন্য বাড়তি টাকা চেয়েছিলেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া রাজি হয়নি। দু’পক্ষে তার পর তীব্র অশান্তি দেখা দেয়। পদ ছেড়ে দেন লিলি। সেই আক্রোশ নাকি তিনি ভোলেননি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা মনে করেন, তাঁরা যে পরিমাণ অঙ্ক বাড়িয়েছিলেন সেটা যথেষ্ট ভাল ছিল। কিন্তু লিলি দাবি তোলেন যেহেতু মিচেল জনসনের বোলিং জীবনের মোড় তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন, আরও বেশি টাকা তাঁর প্রাপ্য। জনসন নিজেও স্বীকার করেছিলেন অ্যাসেজ সিরিজে তাঁর ফর্মে ফেরার জন্য লিলির পরামর্শ অনেকটাই কাজ করেছিল। লিলি এর পর ফিলাডেলফিয়া থেকে বিবৃতিতে বলেন, “ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যে আমাদের চুক্তিটাকে বাজারি করে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে, এটা ভাবাই যায় না। চুক্তি বিতর্কের সমাধান অনেক ভদ্র ভাবে হতে পারত।” এটা গত বছর মে মাসের ঘটনা।
এ বার বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে আবার যোগাযোগ করা হয়। কর্তারা ভেবেছিলেন বিশ্বকাপ যেহেতু একটা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার, লিলি নিশ্চয়ই তাঁদের প্রস্তাব বিবেচনা করবেন। কিন্তু তিনি শুধু না-ই করেননি, আগুনে ফাস্ট বোলারের মতো কথাবার্তা বলেছিলেন। আশ্চর্যের হল এই যে, মিডিয়ার লোভনীয় চুক্তিতেও সাড়া দিচ্ছেন না।
কোনটা তা হলে ঠিক? স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়া? নাকি মোটা টাকা না পেলে কিছুই করব না?
এমসিজিতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি বললেন, “পারথে গিয়ে কেউ যদি ডেনিস লিলির ইন্টারভিউ বিনা টাকায় করতে পারে, তা হলে আমরা তাকে শ্যাম্পেনের বোতল উপহার দিতে রাজি আছি। লিলি লোকটা এতটাই গোলমেলে।”
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মনে করে লিলির ধারণা তাঁর হাতে এখনও নতুন বল। যা দিয়ে তিনি পুরনো দিনের মতো যা খুশি করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy