এত বড় একটা রেকর্ডের পরেও এতটা নির্লিপ্ত থাকাটা বোধহয় আমাদের চিকুর পক্ষেই সম্ভব।
চিকু, মানে বিরাট কোহালির কথা বলছি। রেকর্ডের পরে যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছে, ওকে দেখে কেউ বলবে যে ছেলেটা এমন একটা নজির গড়ে ফেলল, যেটা ডন ব্র্যাডম্যানেরও নেই?
শুক্রবার সকালে হোটেল ছাড়ার আগে ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ডাবল সেঞ্চুরির পরে আমি এসএমএস করে অভিনন্দন জানাই। তবে আজ যে ভাবে আউট হল সেটা আমার পছন্দ হয়নি। রাতে যখন ওর সঙ্গে ফোনে কথা হল, বললাম তাইজুলের বলটা মিডলে পড়ে লেগের দিকে যাচ্ছিল। বলটা লেট কাট কেন করতে গেলি, ডিফেন্স করলি না কেন? রিভিউ তো নিলি না। চিকু বলল, বলের গতিপথ দেখে ওর মনে হয়েছিল স্টাম্পেই লাগত। আম্পায়ারও যে ভাবে সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে দিল সেটা দেখে আর রিভিউ নেয়নি। তখন ওকে বললাম এ বার শটটা ভুল খেলেছিস, রিভিউ না নিয়েও ভুল করেছিস। এর পর করলে কিন্তু চলবে না। এ বার অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ। চিকু বলল ওদের আগে আসতে দিন।
চিকু আসলে এ রকমই। ওকে চিনি বলেই বলছি, এই ধারাবাহিকতা স্রেফ ওর খিদের ফসল। আরও বড় রান চাই— এই খিদেটা ওর এত সাংঘাতিক যে কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। আমি সব সময় চেষ্টা করি ওর ওই খিদেটাকেই আরও বাড়িয়ে দিতে। তাতে ও মজাও পায়। বিশ্বে যেখানে থাকুক, সুযোগ পেলেই আমায় ফোন করবেই। ওর এই শেখার তাগিদটাও কিন্তু আজ এই জায়গায় উঠে আসার পিছনে বিশাল ভূমিকা নিয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, এই যে ওর মাঠে নামলেই রানের বন্যা, সেটা কিন্তু ক্যাপ্টেন হওয়ার পর আরও জমাট হয়েছে। চিকু ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্যই জন্মেছে। ছোটবেলায় অ্যাকাডেমিতেও ও ক্যাপ্টেন ছিল। তখন থেকেই দেখতাম ওর মধ্যে নেতাসুলভ গুণগুলো একেবারে স্পষ্ট। সেই জন্যই ফুল টাইম টেস্ট ক্যাপ্টেন হওয়ার পরে ওর নেতৃত্ব আর পারফরম্যান্স দুটোই এত উন্নতি করেছে।
আরও একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, বিরাট কিন্তু এই চারটে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসে ওভার বাউন্ডারি মেরেছে মাত্র একটা। ছয় মারব না। উইকেট ছুঁড়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ দেব না। নিজেকে ও এমন সেই মোডে নিয়ে যেতে পেরেছে। আর যার হাতে এত শট আছে, সে কেন ছয় মারার ঝুঁকি নিতে যাবে? ! ওর টার্গেটই হল যত পারো গ্রাউন্ড শটে রান তোলো।
শুধু শট নয়, নিজের মানসিকতার মধ্যেও প্রচুর পরিবর্তন এনেছে। যেটা সহজ কাজ নয়। দেখবেন ছেলেটার মধ্যে এখন কিন্তু কোনও ঔদ্ধত্য নেই। নেই সেই উগ্র স্বভাবটা। চিকু এখন বিরাট পরিণত। নিজের উপর আস্থা, সতীর্থদের উপর বিশ্বাস না থাকলে যে জায়গায় আসা যায় না। সঙ্গে অমানুষিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা। নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকে। আর আসম্ভব বিনয়ী। ‘সব জানি’ এমন ভাব দেখিয়ে কোচকে অমান্য করা তো দূরের কথা, বার বার প্রশ্ন করে চলে এটা ঠিক করলাম তো, না অন্য কিছু করলে ভাল হয়? কেউ কোনও পরামর্শ দিলে সেটা মন দিয়ে শোনে। বাধ্য ছাত্রের মতো। এটা ওর খুব বড় একটা গুণ।
ও কিন্তু আজও ভীষণ আগ্রাসী। তবে ভিতরে ভিতরে। ওর এই মনোভাব আমিও পাল্টাতে চাই না। জানি এটাই ওর শক্তি। ওটা নড়ে গেলে ওর ফোকাসও নড়ে যেতে পারে। তাই এই জিনিসটাকে আমি কখনও ডিসটার্ব করি না।
স্কোর
ভারত
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৫৬-৩ এর পর)
কোহালি এলবিডব্লিউ তাইজুল ২০৪
রাহানে ক মেহেদি হাসান মিরাজ বো তাইজুল ৮২
ঋদ্ধিমান ১০৬ ন.আ
অশ্বিন ক সৌম্য বো মেহেদি হাসান মিরাজ ৩৪
জাডেজা ৬০ ন.আ
অতিরিক্ত ৮
মোট ৬৮৭-৬।
পতন: ৪৫৬, ৪৯৫, ৫৬৯।
বোলিং: তাসকিন ২৫-২-১২৭-১, কামরুল ইসলাম রাব্বি ১৯-১-১০০-০,
সৌম্য ১-০-৪-০, মেহেদি হাসান মিরাজ ৪২-০-১৬৫-২,
সাকিব আল হাসান ২৪-৪-১০৪-০, তাইজুল ইসলাম ৪৭-৬-১৫৬-৩,
সাব্বির রহমান ৩-০-১০-০, মাহমুদুল্লাহ ৫-০-১৬-০।
বাংলাদেশ
প্রথম ইনিংস
তামিম ২৪ ব্যাটিং
সৌম্য সরকার ক ঋদ্ধি বো উমেশ ১৫
মোমিনুল ১ ব্যাটিং
অতিরিক্ত ১
মোট ৪১-১
পতন: ৩৮
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৫-২-৭-০, ইশান্ত ৫-০-৩০-০,
অশ্বিন ২-১-১-০, উমেশ ২-১-২-১।
(সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বপন সরকার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy