বিরাট ২৩৫
গোলি সে ডর নহি লগতা, কোহালি সে লগতা হ্যায়!
কোহালি ভাল কিছু করলে প্রায়ই এটা কমেন্ট্রি বক্সে বলতে শুনেছি বীরুকে (বীরেন্দ্র সহবাগ)। টুইটারে যে লোকটা মজার মজার কথা বলে হইচই ফেলে দিতে পারে, বুঝে নিন কমেন্ট্রি বক্সে সে থাকলে কী দাঁড়াতে পারে। একটা-দু’টো নয়, বীরুর স্টকে এ রকম প্রচুর আছে। সময় বুঝে ছাড়ে। তবে কোহালি নিয়ে এটা ওর ফেভারিট।
আজও একবার বলতে শুনলাম। কোহালি তখনও ডাবল সেঞ্চুরি করেনি। করব-করব করছে। আমরা, মানে কমেন্টেটররা তখন দাঁড়ানোর তোড়জোড় করছি। কারণ ততক্ষণে ঠিক হয়ে গিয়েছে, কোহালির ডাবল সেঞ্চুরির সময় কমেন্ট্রিটা বসে নয়, হবে দাঁড়িয়ে। ওর অসাধারণ ইনিংসটাকে ঠিকঠাক সম্মান জানানোর জন্য!
এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। ওয়াংখেড়ের কমেন্ট্রি বক্সে যদি আপনারা আজ থাকতেন, দেখতে পেতেন কী ভাবে এক আঠাশ বছরের ছেলে ভারতের বিভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটারকে একযোগে আবেগে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেল। কপিল পাজিকে দেখলাম অসম্ভব আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছেন। আমাদের বলছেন, ইনিংসটা মন দিয়ে দেখো। আমাদের ভাগ্য ভাল যে বিরাট কোহালির খেলা বসে দেখতে পাচ্ছি। ভাবতে পারেন, কপিল পাজি এটা বলছেন!
বীরু আর একজন। এমনিতে অসম্ভব হাসি-ঠাট্টা করে। রবিবারও করছিল। কিন্তু একই সঙ্গে ওকে ইমোশনাল হয়ে পড়তেও দেখছিলাম। কখনও বিরাটের ব্যাটিং নিয়ে নানা আলোচনা জুড়ে দিচ্ছে। কখনও বিরাটকে বাউন্ডারি মারতে দেখে মুগ্ধ ভাবে বলে ফেলছে, কেয়া ব্যাটসম্যান হ্যায়! সব সে অলগ। সবার চেয়ে আলাদা। কখনও আবার ফিরে যাচ্ছে নিজের অতীতে। মিল খুঁজছে বিরাটের সঙ্গে। বীরু বলছিল, কেরিয়ার শুরুর সময় লোকে বলত আমি ইংল্যান্ডে পারব না। সেই টেকনিক নেই। পারলাম। বলত, একে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় হবে না। সেখানেও হল। বলত, এ পার্টটাইম ওপেনার। কেমন ওপেনার, পরে বুঝল লোকে। বীরু বলছিল যে, সমালোচনা ওর ক্রিকেটকে পাল্টে দিয়েছে। যা ও কোহালির জীবনেও দেখতে পায়। লোকে একটা সময় তো বিরাট নিয়েও বলত। বলত যে, ও ভাল কাট মারতে পারে না। সুইপ পারে না। কভার ড্রাইভ ভাল নয়। টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি নেই। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি নেই। আজ কোথায় সে সব?
দেখুন, কোহালি যে ডাবল সেঞ্চুরি করবে, তার আন্দাজ আমাদের গতকাল থেকেই ছিল। গতকাল ১৪৭ নটআউট ছিল যখন, ভিভিএস, আমি বলাবলি করেছি ঠিক দু’শো করে ছাড়বে। রবিবার বরং আমরা আলোচনা করছিলাম, ওর তিনশোর সম্ভাবনা নিয়ে। বলাবলি চলছিল যে, জয়ন্ত থেকে গেলে সম্ভব। ভুবি থাকলেও হবে। ধোনির ডাবল সেঞ্চুরির সময় ভুবিই তো ছিল উল্টো দিকে। সে দিন পারলে আজ পারবে না কেন?
শেষ পর্যন্ত তা হল না। কিন্তু যেটা হল, তা-ও বা ক’জন পারে? ওয়াংখেড়েতে আমি এই প্রথম কমেন্ট্রি করছি না। কিন্তু আজ মনে হচ্ছিল, মাঠে বিরাট নয়, সচিন খেলছে। অবিকল সেই আওয়াজ। সচিন খেললে যা উঠত ওয়াংখেড়েতে। শুধু ‘স্যা-চি-ন, স্যা-চি-ন’-এর বদলে কো-হা-লি, কো-হা-লি।’ হবে না-ই বা কেন? রবিবারের পর সিরিজে ছ’শো রান হয়ে গেল কোহালির। এক মরসুমে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি। কোহালির ইনিংস তো ভারতকে পঞ্চম দিনের ওয়াংখেড়ে পিচে খেলা থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে চলে গেল। কেউ যা ভাবতে পারেনি। বিশ্বাস করতে পারেনি। ইংল্যান্ডের ইনিংস হার বাঁচাতে এখনও ৪৯ দরকার। হাতে চার উইকেট। কোহালির ২৩৫ রানের একটা ইনিংসে ওদের সব দফারফা। সিরিজ জয়টা কাল সময়ের অপেক্ষা।
কপিল পাজি ঠিকই বলছিলেন। আমরা ভাগ্যবান, তাই বিরাট কোহালির খেলা দেখতে পাচ্ছি!
কোহালি কাণ্ড
• এক ক্যালেন্ডার বছরে অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি। মাইকেল ক্লার্ক ও ব্রেন্ডন ম্যাকালামের পরে।
• তিন ফর্ম্যাটেই ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের উপরে একমাত্র ক্রিকেটার। টেস্টে ৫০.৫৩, ওয়ান ডে-তে ৫২.৯৩, টি-টোয়েন্টিতে ৫৭.১৩।
• টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ন্যূনতম ২০০০ রান করা তালিকায় গড় ব্র্যাডম্যানের পরেই। ব্র্যাডম্যান ১০১.৫১, কোহালি ৬৫.৫০।
• ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক সিরিজে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক রান। চলতি টেস্ট সিরিজে ৬৪০।
ছুটির দিনে বিরাট কোহালির এমন মোহময় ব্যাটিং দেখার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? শাহরুখ খান
লাঞ্চের পরে বিরাট কোহালিকে প্যাড পরে ব্যাট করতে নামতে দেখে হতাশই হলাম। বিরাটের উচিত ছিল টুথপিক হাতে নিয়ে নামা। কেভিন পিটারসেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy