Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

চূড়ান্ত সেই যুদ্ধ এখন দাওয়াই খোঁজার ম্যাচ

চোখ দু’টো বন্ধ, মাথা দুলছে অল্প অল্প, ‘দাঁড়ান, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা না হলে জমবে না’ বলে আইফোনে কাঙ্খিত টিউনটা খুঁজে চলেছে ব্যস্ত আঙুল। গলা থেকে এ বার নিঃসৃত হয় অদ্ভুত মিঠে আওয়াজ, ‘আই মিস ইউ বেবি’...। আন্দ্রে রাসেল গান গাইছেন! জামাইকায় তাঁর গানের যে অ্যালবামটা বেরিয়েছে, এটা তার একটা। গাইছেন, টিম হোটেলের লবির ঠিক পাশের বারান্দায় বসে, কাঠফাটা রোদ্দুরকে অগ্রাহ্য করে।

টিমের সঙ্গে পুণেতে আজহার মেহমুদও। ছবি: টুইটার।

টিমের সঙ্গে পুণেতে আজহার মেহমুদও। ছবি: টুইটার।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
পুণে শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

চোখ দু’টো বন্ধ, মাথা দুলছে অল্প অল্প, ‘দাঁড়ান, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা না হলে জমবে না’ বলে আইফোনে কাঙ্খিত টিউনটা খুঁজে চলেছে ব্যস্ত আঙুল। গলা থেকে এ বার নিঃসৃত হয় অদ্ভুত মিঠে আওয়াজ, ‘আই মিস ইউ বেবি’...।

আন্দ্রে রাসেল গান গাইছেন! জামাইকায় তাঁর গানের যে অ্যালবামটা বেরিয়েছে, এটা তার একটা। গাইছেন, টিম হোটেলের লবির ঠিক পাশের বারান্দায় বসে, কাঠফাটা রোদ্দুরকে অগ্রাহ্য করে।

শন মার্শ তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে লাঞ্চ টেবলে বসতে যাবেন, হল না। কোথা থেকে আবির্ভাব আর এক অস্ট্রেলীয়র, মার্শের ঘাড়ে টোকা এবং তার পর টানা দেড় ঘণ্টা আড্ডা।

দ্বিতীয় ভদ্রলোক মোটেও পঞ্জাবের নন। কেকেআরের। উনি ব্র্যাড হগ।

“না, না প্রতিশোধের কোনও প্রশ্নই নেই। সে দিন খারাপ লেগেছিল ঠিকই। ভেবেছিলাম দু’শোর টার্গেট, ফিফটি পার্সেন্ট ম্যাচ পকেটে। কিন্তু কেকেআর খুব ভাল খেলে দিল। তবে শনিবার আমি অন্তত যখন ব্যাট করতে যাব, ও সব বেঙ্গালুরু ফাইনাল-টাইনাল মাথায় থাকবে না।”

বক্তা কে? সহজ তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর বৃহত্তর মঞ্চে প্রভাব ফেলা একমাত্র কীর্তিমান বাঙালি ক্রিকেটার। আইপিএল সেভেন ফাইনালের ঋদ্ধিমান সাহাকে চাইলেও আমৃত্যু ভুলতে পারবে বাঙালি?

বৃহস্পতিবার গোটা দিন ধরে টিম হোটেলের প্রাপ্ত দু’চারটে ফ্রেম। যেখানে দু’টো শিবিরের বাইরের পৃথিবীকে ধরা যায়, আন্দাজ করা যায় তার নির্যাস। যেখানে আইপিএল ফাইনালের ‘প্রতিশোধ’ তত্বকে বিসর্জন দিয়ে অনবরত সম্প্রীতির গোলাপ পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যুযুধান দুই হেভিওয়েটের মুখোমুখির প্রাক্কালের টেনশন নয়, আবহে বন্ধুত্ব মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব এবং কেকেআর-- গত বার আইপিএলের চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ দুই সংসারের অন্দরমহলের ছবিটা দেবে না।

যা ধরতে গেলে যেতে হবে টিম হোটেল থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। টিলায় ঘেরা যে স্টেডিয়ামে চলছে নাইটদের নেট আর সুনীল নারিন নামক এক বিস্ময়-স্পিনারকে অবলীলায় পরের পর গ্যালারিতে ফেলে যাচ্ছেন কোনও এক ইউসুফ পাঠান। সাকিব আল হাসানের অভাবপূরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভেসে আসবে কেকেআর কর্তার বিরক্ত উত্তর, তা হলে রোনাল্ডো খেলতে না পারলে রিয়াল মাদ্রিদও টিম তুলে নিক!

যা ধরতে হলে পৌঁছতে হবে টিম হোটেলের লবিতে। যেখানে চিন্তাক্লিষ্ট মুখে দাঁড়িয়ে কিঙ্গস কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। যিনি বলে চলেছেন, ম্যাড ম্যাক্স নিয়ে এত দ্রুত হতাশ হলে চলবে না। আরও একটু সময় দিতে হবে তাঁকে।

এক দিক থেকে দেখতে গেলে, আশ্চর্য মিলই বটে! দুই টিমের দুই সেরা অস্ত্রদ্বয়। কিন্তু কেউ হয় প্রত্যাশামতো চলছেন না, আর নইলে কেউ আশা-প্রত্যাশার জায়গাতেই আর নেই। পঞ্জাবের ম্যাড ম্যাক্স বা কিলার মিলার পুরনো জৌলুসের ধারেকাছে এখনও নেই। কিন্তু ফিরতে পারে। কেকেআরের সুনীল নারিন উইকেট পাননি এখনও পর্যন্ত। চার ওভারে আঠাশ-তিরিশ দিচ্ছেন। টি টোয়েন্টির মানদণ্ডে খারাপ নয় মোটে, কিন্তু নারিনের দাঁড়িপাল্লায় ভালও নয়। তবে তাঁর পক্ষেও প্রত্যাবর্তন সম্ভব। পরিশোধিত অ্যাকশনেও সম্ভব। কেকেআর কর্তারা বলছেন, ইডেন উইকেট পাটা ছিল। ওভারে আট-নয় রান উঠেছে। সেখানে নারিন দিয়েছেন টেনেটুনে সাত। আর বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে বল করতে হয় পাওয়ারপ্লে নইলে ডেথে। খারাপটা কী হচ্ছে তা হলে? বরং উইকেট একটু স্পিনারের কথা শুনলে পুরনো নারিনকে আবার নাকি দেখা যাবে। ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে পুণে উইকেট এ দিন দেখার অবস্থা ছিল না। প্রায় পুরো সময়টাই কভার-আবৃত ছিল। নারিন পুণেতে কী পাবেন, বুঝতে বুঝতে কাল। কেকেআর অধিনায়ক এ দিন পুণে ঢুকলেন রাতে। তাঁর শরীর এখন অনেক সুস্থ, অনেক ঝরঝরে। তাঁরও উইকেট দেখতে দেখতে কাল। কিন্তু কিন্তু নাইট শিবিরের দ্বিতীয় কাঁটার উত্তর পুণে উইকেট শুক্রবারের উপর নির্ভরশীল নয়। ওটা শুধু খুঁজতে হবে নয়, খুব দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।

সাকিব-আল-হাসানের যোগ্য পরিবর্ত।

কোনও কোনও কেকেআর কর্তার অভিমত হল, উইকেটে টার্ন থাকলে হগ নয়, যাওয়া উচিত জোহান বোথার দিকে। কারণ হগের চেয়ে বোথার ব্যাটিংয়ের হাত বেশি ভাল। বলা হচ্ছে, সাকিব তো শুধু চারটে ওভার করতেন না, মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্য ব্যাটিংটাও দিতেন টিমকে। সেটায় বোথা কাছাকাছি যেতে পারবেন। আর উইকেটে ঘাস থাকলে চোখ বুজে নাকি বিকল্প হওয়া উচিত রায়ান টেন দুশখাতে। বহু দিন ধরে কেকেআরে আছেন। বহু বিপদে টিমকে উতরে দিয়েছেন। এ বারও সুযোগ পেলে নিশ্চিত দেবেন।

দিলে ভাল। কিন্তু কেকেআর বনাম পঞ্জাব যুদ্ধের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগের পরিস্থিতি বিচারে কোথাও যেন ম্যাচটা গত আইপিএল ফাইনালের ‘রিপ্লে’র চেয়েও বেশি করে নিজ-নিজ গরিমা ধরে রাখার লড়াই। নিজেদের সেরা অস্ত্রদের শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা।

যাহা পঞ্জাবে, তাহা কেকেআরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE