তখন তিনি ছিলেন ইস্টবঙ্গলে। ডার্বির ভাগ্য গড়ে দিয়েছিলেন জবি। — ফাইল চিত্র।
গত দু’বার তাঁর নামে জয়ধ্বনি উঠেছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ভক্তদের ভালবাসায় স্টেডিয়াম ছেড়েছিলেন। এ বার জার্সির রং বদলে গিয়েছে জবি জাস্টিনের।
আই লিগ ছেড়ে আইএসএল-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি এটিকে-তে সই করেছেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকা। রবিবারের ধুন্ধুমার ডার্বিতে গ্যালারি থেকে লাল-হলুদ ভক্তরা সুর করে গান ধরবেন না, ‘জ-বি, জ-বি’। তিনি না থেকেও যেন রয়েছেন বাঙালির চির আবেগের ম্যাচে!
শুক্রবার রাতে এটিকে শিবিরে যোগ দিয়েছেন তিনি। রবিবার এসে পড়বেন জবির স্পেনীয় কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। শনিবার সকালে আনন্দবাজারকে জবি বললেন, ‘‘ডার্বি মিস করব। তবে পেশাদার ফুটবলারদের জীবন তো এই রকমই। আজ এক ক্লাব তো কাল অন্য ক্লাব। সুযোগ পেলে কাল ম্যাচটা দেখব টিভিতে।”
আরও পড়ুন: চনমনে রাখতে কোলাদোদের বিশ্রাম কোচের
আরও পড়ুন: দুপুরে ম্যাচ কেন, প্রশ্ন দুই গুরুর
গত মরশুমে আই লিগের জোড়া ডার্বিতেই গোল পেয়েছিলেন জবি। দুটো ডার্বিই জিতে নিয়েছিলেন আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজ। এ বার জিতলে হ্যাটট্রিক করবেন লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ। কে ফেভারিট? সত্যিই কি এই ম্যাচের আগে ফেভারিট বলা যায় কাউকে? গলায় আবেগ জড়িয়ে জবি বলছেন, ‘‘আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন ফেভারিট কে, তা হলে বলব ইস্টবেঙ্গল। কারণ ইস্টবেঙ্গল আমার পুরনো ক্লাব। আমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে এই ক্লাব। রবিবারের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলই ফেভারিট।’’
মাঠে নেমে বলকে কথা বলাতেন জবি। — ফাইল চিত্র।
আই লিগের প্রথম ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল ৩-২ হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। জোড়া গোল করেছিলেন রালতে। অন্য গোলটি করেছিলেন জবি। ফিরতি ডার্বিতে হাইমে স্যান্টোস কোলাডো ও জবির গোলে ম্যাচ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সবুজ-মেরুন জার্সি দেখলেই তেতে উঠতেন কেন? রহস্য ফাঁস করে জবি বলছেন, ‘‘আসলে সিনিয়র ফুটবলাররা আমাকে বলেছিলেন, ডার্বি ম্যাচে গোল করলে ভারতীয় ফুটবলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। আমি সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করতাম। তা ছাড়া গ্যালারির পরিবেশ একজন ফুটবলারের সেরাটা বের করে নেয়। রক্তের গতি বেড়ে যেত সমর্থকদের চিৎকার শুনে।’’
সত্যি সত্যিই ডার্বি প্রতিষ্ঠা দিয়েছে কেরলের এই স্ট্রাইকারকে। ইস্ট-মোহন ম্যাচ তো এরকমই। দুই প্রধানের লড়াই যেমন একজন ফুটবলারকে প্রতিষ্ঠা দেয়, তেমনই ডার্বি বাস্তবের রুক্ষ জমিতে ছুড়ে ফেলে দেয় তারকাকে। বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার ম্যাচে রবিবারই হয়তো জন্ম নেবেন নতুন কোনও জবি জাস্টিন! প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘আমি নেই তো কী হয়েছে। অন্য কেউ গোল করবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের সব চেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল আলেয়ান্দ্রো স্যর রয়েছেন। তিনিই নতুন কাউকে তৈরি করে নেবেন। নতুন কাউকে প্ল্যাটফর্ম দেবেন।’’
সাইকেলে চেপে ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে আসতেন জবি।
স্পেনীয় কোচের হাতে পড়ে পুরোদস্তুর বদলে গিয়েছিলেন জবি। গত বারের আই লিগ দেখেছে তাঁর দৌরাত্ম্য। বিদেশি স্ট্রাইকারদের দাপটের যুগে জবি একাই বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলকে। এনরিকে এসকুয়েদা চোট পেয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার পরে জবি একাই টেনেছেন লাল-হলুদকে। ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে আই লিগে করেন ৯টি গোল। কলকাতা লিগে চার-চারটি গোলের মালিক জবি। সেই জবি বলছেন, ‘‘আলেয়ান্দ্রো খুব ভাল বোঝেন প্লেয়ারদের। কী চাইছেন, তা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতেন আমাদের। মাঠে নেমে নিজেদের প্রয়োগ করতে সমস্যা হত না।’’
জবি শুধু যে নিজে গোল করেছেন, তা নয়, গোলের গন্ধ মাখা পাসও বাড়িয়েছেন বহু। সতীর্থ হাইমে কোলাডোকে দিয়ে গোল করিয়েছেন ডার্বি ম্যাচে। তার পরেই ভাংরা নাচতে দেখা গিয়েছিল কোলাডো ও জবিকে। এ বার মরশুমের শুরু থেকেই দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন কোলাদো। জবি বলছিলেন, ‘‘কোলাডো খুব ভাল খেলছে। ফ্রি কিক থেকে দেখার মতো সব গোল করছে। ওর সঙ্গে আমার জুটিটা খুব জমত। আমরা দু’জনে এক সঙ্গে ঘুরতাম, রুমমেটও ছিলাম। ফলে সব দিক থেকেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মাঠের বাইরে আমাদের বোঝাপড়াটা খুব কাজে লেগেছিল।’’ সেই বোঝাপড়ার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল মাঠে। বড় ম্যাচের আগে পুরনো বন্ধুকে কি কিছু বলতে চান? হেসে ফেলেন ডার্বি জেতানো স্ট্রাইকার। বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে দেখা হলে বলব, বন্ধু ভাল খেলছ। এ ভাবেই খেলে যাও।’’ ক্লাব বদলে ফেললেও কোলাডোর সঙ্গে আগের মতোই বন্ধুত্ব থেকে গিয়েছে জবির।
পুরনো ক্লাব এখনও জবির হৃদয়ে। ডার্বির আবেগ এখনও তাঁর রক্তের গতি বাড়িয়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy