ফর্মে ফিরতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের ভরসা গৌতম গম্ভীরের ‘গুরুমন্ত্র’। —ফাইল চিত্র।
ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার উপর জোর দিচ্ছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। কোচের নির্দেশ মেনে ১২ বছর পর রঞ্জি খেলবেন বলে জানিয়েছেন বিরাট কোহলি। রঞ্জি খেলবেন রোহিত শর্মাও। ভারতের তারকা ক্রিকেটারেরা অনেক দিনই রঞ্জি থেকে দূরে। তাঁদের আবার ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরাতে চাইছেন গম্ভীর। কিন্তু তিনি নিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় ক’টি রঞ্জি খেলেছিলেন?
ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জায়গা করে ফেলার পর আর সে ভাবে রঞ্জি খেলেননি। না খেলার কারণ হিসাবে কখনও উঠে এসেছে চোট পাওয়ার আশঙ্কা, কখনও ক্লান্তি, কখনও একই সময়ে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেট থাকা। কিন্তু গম্ভীর এখন বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার কথা। তিনি নিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মাঝেও রঞ্জি খেলতেন। যে কারণে এখনকার ক্রিকেটারদের তিনি বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার কথা।
রঞ্জিতে গম্ভীর
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গম্ভীরের অভিষেক হয় ২০০৩ সালে। দেশের হয়ে ৫৮টি টেস্ট, ১৪৭টি এক দিনের ক্রিকেট এবং ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। এই ১৩ বছরের মধ্যে রঞ্জিতে ৪৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন গম্ভীর। অর্থাৎ, বছরে গড়ে প্রায় চারটি করে রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। যে সংখ্যক দিন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন, তার ৩৭.১৩ শতাংশ দিন খেলেছিলেন রঞ্জিতে। যা ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না।
রঞ্জিতে গাওস্কর
১৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন সুনীল গাওস্কর। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ৬২টি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে ১২৫টি টেস্ট এবং ১০৮টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন গাওস্কর। তার মাঝেও ৬২টি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। গাওস্করও প্রায় প্রতি বছর ওই সময়ের মধ্যে গড়ে প্রায় চারটি করে রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন। তিনি যত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন, তার ৩৩.৮৩ শতাংশ দিন রঞ্জি খেলেছিলেন।
রঞ্জিতে কপিল
গম্ভীর বা গাওস্করের মতো এত রঞ্জি ম্যাচ খেলতে দেখা যায়নি কপিল দেবকে। তিনি অলরাউন্ডার ছিলেন। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন কপিল। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের মধ্যে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছিলেন ২০টি ম্যাচ। দেশের হয়ে কপিল খেলেছিলেন ১৩১টি টেস্ট এবং ২২৫টি টি-টোয়েন্টি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের মাঝে বছরে গড়ে দু’টিরও কম রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
রঞ্জিতে সচিন
সচিন তেন্ডুলকরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার ২৪ বছরের। ১৯৮৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে ২০০টি টেস্ট, ৪৬৩টি এক দিনের ম্যাচ এবং একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন। ওই ২৪ বছরে সচিন রঞ্জিতে খেলেছিলেন ৩২টি ম্যাচ। যা বছরে গড়ে দু’টিরও কম। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে যত দিন সচিন খেলেছিলেন, তার ৮.৭৪ শতাংশ দিন খেলেছিলেন রঞ্জিতে।
রঞ্জিতে সৌরভ
ভারতীয় দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিষেক হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তার পর আবার সুযোগ পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে। খেলেছিলেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ১৬ বছরের কেরিয়ারে সৌরভ ১১৩টি টেস্ট এবং ৩১১টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে ৩৪টি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। বছরে গড়ে যা দু’টি ম্যাচের সামান্য বেশি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে সৌরভ যত দিন খেলেছিলেন, তার ১৫.৫২ শতাংশ দিন খেলেছিলেন রঞ্জিতে।
রঞ্জিতে দ্রাবিড়
ভারতের প্রাক্তন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের মাঝে ২১টি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। দেশের হয়ে দ্রাবিড় ১৬৪টি টেস্ট, ৩৪৪টি এক দিনের ম্যাচ এবং একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন। ১৬ বছরে গড়ে দু’টির সামান্য বেশি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে যত দিন খেলেছিলেন দ্রাবিড়, তার ৭.২১ শতাংশ দিন খেলেছিলেন রঞ্জি ম্যাচ।
রঞ্জিতে রোহিত
২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন রোহিত শর্মা। ১৮ বছরে তিনি ৬৭টি টেস্ট, ২৬৫টি এক দিনের ম্যাচ এবং ১৫৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এই সময়ের মধ্যে রঞ্জিতে ৩৬টি ম্যাচ খেলেছেন রোহিত। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি বছর দু’টি করে রঞ্জি ম্যাচ খেলেছেন। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যত দিন খেলেছেন, তার ১৮.৯৭ দিন রঞ্জি খেলেছেন।
বৃহস্পতিবার রঞ্জি খেলতে নামবেন রোহিত। কিন্তু কোচ গম্ভীরের নির্দেশে তিনি খুব একটা যা খুশি নন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, “গত ছ’সাত বছরে যদি আমাদের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার দেখেন, তা হলে দেখবেন, এমন কোনও সময় নেই যখন আমরা ৪৫ দিন ঘরে বসে আছি। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুরু হয়, মার্চে শেষ হয়। সেই সময় ভারতও অনেক ক্রিকেট খেলে। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় কোথায়?”
রঞ্জিতে কোহলি
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় বিরাট কোহলির। ১৭ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলছেন। নেতৃত্বও দিয়েছেন। ১২৩টি টেস্ট, ২৯৫টি এক দিনের ম্যাচ এবং ১২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। কিন্তু এই ১৭ বছরে মাত্র ১২টি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বিরাট গড়ে বছরে একটি রঞ্জিও খেলেননি। যত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, তার মধ্যে মাত্র ৪.৬৩ শতাংশ দিন তিন রঞ্জি খেলেছেন।
প্রায় ১৩ বছর পর রঞ্জি ট্রফি খেলতে চলেছেন বিরাট। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে রঞ্জি ট্রফি গ্রুপ পর্বের শেষ খেলা। রেলের বিরুদ্ধে দিল্লির শেষ ম্যাচটি খেলবেন কোহলি। তার জন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
রঞ্জিতে বুমরাহ
৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন জসপ্রীত বুমরাহ। ৪৫টি টেস্ট, ৮৯টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৭০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এই ৯ বছরে মাত্র সাতটি রঞ্জি ম্যাচ খেলেছেন ভারতীয় পেসার। অর্থাৎ, গড়ে বছরে একটি রঞ্জি ম্যাচও খেলেননি বুমরাহ। দেশের হয়ে যত দিন খেলেছেন, তার ৭.২৯ শতাংশ দিন খেলেছেন রঞ্জিতে। চোটের কারণে তিনি এখন ক্রিকেট থেকে বাইরে।
প্রাক্তনেরা কী বলছেন?
গাওস্কর নিজে যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঝে রঞ্জি খেলেছিলেন, তিনি চান রোহিতেরাও তেমনই করুক। তাঁর সেই বক্তব্যের সঙ্গে সায় রয়েছে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “ঘরোয়া ক্রিকেট মাতৃদুগ্ধের মতো। রঞ্জি খেলতেই হবে। না হলে আগামী প্রজন্ম কী করে বুঝতে বিরাটের মতো ব্যাটারকে কী ভাবে আউট করতে হয়, বা তরুণ ব্যাটারেরা কী করে জানবে বুমরাহদের সামলানোর টেকনিক। সিনিয়র ক্রিকেটারদের উচিত রঞ্জি খেলা, তাতে আগামী প্রজন্ম তৈরি হয়। তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের রঞ্জি না খেলতে পারার জন্য কিছুটা দায়ী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড এমন ভাবে সূচি করে, যাতে ক্রিকেটারেরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারে। ভারতের তেমনই করা উচিত। রঞ্জির সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থাকলে রোহিত, বিরাটেরা খেলবে কী করে ঘরোয়া ক্রিকেট?”
ঘরোয়া ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার তিন
ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে আগ্রহ দেখান না। উদাহরণ হিসাবে বার বার তুলে ধরা হয় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কথা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন নিয়মিত খেলা তিন ক্রিকেটারের পরিসংখ্যান তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
শেফিল্ড শিল্ডে স্মিথ
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল স্টিভ স্মিথের। ১৫ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছেন। বিরাটের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাঁর। সেই স্মিথ এই বছরে ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন। যা গড়ে বছরে দু’টি ম্যাচের বেশি। বিরাট, বুমরাহ, রোহিতের থেকেও যা বেশি। ১১৪টি টেস্ট, ১৬৫টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৬৭টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন স্মিথ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যত দিন খেলেছেন, তার মধ্যে ১৬.৯৫ শতাংশ দিন খেলেছেন রঞ্জিতে।
শেফিল্ড শিল্ডে স্টার্ক
স্মিথের মতো ২০১০ সালে অভিষেক হয়েছিল মিচেল স্টার্কেরও। ১৫ বছরে তিনি ৯৪টি টেস্ট, ১২৭টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৬৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এর মাঝেই ৪২টি ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ খেলেছেন স্টার্ক। তিনি বছরে গড়ে প্রায় তিনটি করে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ খেলেছেন। যত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, তার মধ্যে ২৫.৩৭ শতাংশ ম্যাচ খেলেছেন স্টার্ক।
ব্যতিক্রমী কামিন্স
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যদিও বাকি দুই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটে এত ম্যাচ খেলেননি। তিনি ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে মাত্র ১১টি শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ খেলেছেন। গড়ে বছরে একটি ম্যাচও খেলেননি কামিন্স। যত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, তার মধ্যে মাত্র ৯.১২ শতাংশ দিন খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ২০১১ সালে অভিষেক হয় কামিন্সের। ১৪ বছরে দেশের হয়ে ৬৭টি টেস্ট, ৯০টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৫৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ভিন্ন মত
গম্ভীর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার কথা বলার পর, প্রাক্তন উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানি প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরাটদের চোট পাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। প্রাক্তন নির্বাচক তিনি বলেছিলেন, “আমার মনে হয় না নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার দরকার আছে। আমাদের সময় এত বেশি ম্যাচ ছিল না। কিন্তু এখন প্রচুর ম্যাচ খেলতে হয়। সেই সঙ্গে যদি ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলতে হয়, তা হলে ক্রিকেটারদের চোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সেটা ঠিক হবে না।”
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি যদিও মনে করেন, রোহিতদের রঞ্জি খেলা একেবারেই সাময়িক সিদ্ধান্ত। ভারতের হয়ে খেলা মনোজ বললেন, “অস্ট্রেলিয়ায় হেরেছে বলে রঞ্জি খেলছে। যেই জিততে শুরু করবে, তখনই আর খেলবে না। এখন সকলে নেতিবাচক কথা বলছে দল নিয়ে। তাই এত রঞ্জি খেলার ধুম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy